April 25, 2024     Select Language
Editor Choice Bengali KT Popular শিল্প ও সাহিত্য

শব্দ বাজি

[kodex_post_like_buttons]

অমৃতাভ বন্দোপাধ্যায়

রাশর বাবু বিছানায়  শুয়ে খাবি খাচ্ছিলেন।দায় দায়িত্ব পালন শেষে নব্বই বছরে যতটা রোগভোগ আদর অনাদর নিয়ে একজন বুড়ো মানুষ লাট খায় উনিও তাই খাচ্ছিলেন। মেয়ের ঘরের একমাত্র নাতি প্রীতম খবর দিল, আজ দেওয়ালী। এর অর্থ-‘ টাকা ছাড়ো,বাজি ফাটাবো’। ছেলের ঘরের নাতনি প্রিয়ার আবদার,’ টাকা লাগবে, বাজি বাজার যাব!’

পাঁচবছর আগে হলে পরাশর নিজেই সোরা গন্ধক কাঠকয়লা নিয়ে বসতেন তার দুই নাতি নাতনির সাথে বসনতুবড়ি বানাতে। নিজের হাতে তুবড়ি বানাতে বড় ভালবাসতেন। আর  বানাতে বানাতে নিজের মনে বকবক করতেন “বুঝলি, সোরা গন্ধক গানপাউডার দিয়ে ভারতে প্রথম বোমা বানিয়ে ছিল বাঙালিই,হেম কানুনগোর নাম শুনেছিস? তা শুনবে কেন? তোমরা বিল গেটস, লাদেন নিয়ে লাফাবে। ছোটবেলায় আমরাও জানিসতো  বো–”

কথা শেষ করার আগেই  নাতনি প্রিয়া প্যাক মারতো- “সেইই তুমি, এখন তুবড়ি বানাচ্ছো! ছিঃ! একটা দুটো দোদমা বানালে তবু নয় কথা হত।আমরা একটু ঘ্যাম নিতে পারতাম”।
নাতি প্রীতম আরো বিচ্ছু ,বোনের দিকে কানকি মেরে দাদুর পিঠে ঝুলে হাসতো –“দাদা তুমি জিলোটিন স্টিক জান? কার বোম?”
পরাশর বাবু কাগজ, টিভির কল্যাণে আরো ভয়ংকর ভয়ংকর সব শব্দ, ঘটনার কথাও জানতেন। সত্যি সত্যি পৃথিবীটা, এ মুহূর্তে গোটা পথিবীটা বসে আছ বোমা বারুদের ওপর। বোম ফাটলো বলে। 
ফাটলে সেটাই হবে পৃথিবীর শেষ দীপাবলী!
আবদাররত দুই নাতি নাতনিকে দুদিকে রেখে, ওদের একটু সবল হয়েওঠা হাত দুটো ধরে শয্যাশায়ী অসহায় পরাশর শুনতে পেলেন গুদামযাত না-ফাটা সেই শব্দ বাজির ভয়ংকর বিস্ফোরণ! শুধু  কান নয় গোটা শরীর সংসার ছিন্নভিন্নকারী সেই আওয়াজে পরাশর কেঁপে উঠে স্থির হয়ে গেলেন। চোখ বিস্ফারিত। চোখের পাতায় আতঙ্কের অক্ষরে লেখা একটিই প্রশ্ন- “এই শব্দ বাজি কোন সুপ্রীম কোর্ট নিষিদ্ধ করবে, তোরা জানিস”?
প্রিয়া,প্রীতম দাদুর শুকনো রোগজীর্ণ শিথিল হাতদুটো জড়িয়ে ধরে আর্তচিত্কার করেউঠেছিল-‘দা-দু’।

Related Posts

Leave a Reply