জাপানে সর্দি-নাক বন্ধের ‘ইয়াবা’ ই এখন গোটা দুনিয়ার মারণাস্ত্র
কলকাতা টাইমস :
আপনি কি জানেন যে ‘ইয়াবা’ নামক দুই দুইটি স্থান আছে পৃথিবীর বুকে? একটা লাগোসে, আরেকটা বুরকিনা ফাসোতে ।তবে আমরা যে ইয়াবা নিয়ে কথা বলতে চাইছি, যাচ্ছি, সেটা একটা ড্রাগ, যা কিনা বিপুল ভাবে ব্যবহৃত হচ্ছে নেশা করার কাজে। আর ঘাতক ব্যধির মতন ছড়িয়ে পড়েছে আমাদের সমাজে। এবং জায়গা দুটির সাথে ইয়াবার আসলে কোনও সম্পর্কও নেই।
ইয়াবা একটি থাই শব্দ, যার ক্রেজি মেডিসিন বা পাগলা ওষুধ। এ ড্রাগের ব্যবহার ও উৎপাদন বেশি বলেই এই নাম। ১৯৭০ সালেই এই ওষুধের মূল উপাদান থাইল্যান্ড সহ সারা বিশ্বে নিষিদ্ধ করা হলেও থাইল্যান্ডের ট্রাকচালকদের মাঝে এর বহুল ব্যবহার ছিল । একসময় থাইল্যান্ডে এ ড্রাগ পেট্রলপাম্পে বিক্রি হতো ড্রাইভারদের সুবিধার্থে। কেননা ইয়াবা খেলে ঘুম আসে না, ক্লান্তি ভর করে না, রাতভর ট্রাক চালানো যায় বিশ্রাম না নিয়ে। কিন্তু কিছু ভয়াবহ দুর্ঘটনার পরই টের পাওয়া পেল যে রাতভর ট্রাক চলে ঠিকই, তবে তা পথে নয়। চলে খানাখন্দ আর ব্রিজ ভেঙে নদীতে।
আরও পড়ুন : এই রাজার মেনুতে ছিল রোজ একটু বিষ আর সঙ্গে ৩৫ কেজি খাবার
ইয়াবার মূল উপাদান মেটামফিটামিন। সঙ্গে থাকে উত্তেজক পদার্থ ক্যাফিনও। ২৫ থেকে ৩৫ মিলিগ্রাম মেটামফিটামিনের সঙ্গে ৪৫ থেকে ৬৫ মিলিগ্রাম ক্যাফিন মিশিয়ে তৈরি এ ট্যাবলেটের রং সাধারণত সবুজ বা লালচে কমলা হয়ে থাকে| এর নানা রকম ফ্লেভার আছে। আঙ্গুর, কমলা বা ভ্যানিলার স্বাদে একে অনেকে ক্যান্ডি বলে ভুল করবে। লজেন্স ভেবে অনেকে এটাকে সহজেই খেয়ে নেয়। এবার জানা যাক মেটামফিটামিনের ইতিহাস।
১৯১৯ সালে জাপানে সর্দি আর নাক বন্ধের ওষুধ হিসেবে এটি ব্যবহার করা হতো। একসময় মেদভুঁড়ি কমানোর জন্যও এ জিনিস ব্যবহার করা হয়েছে। দ্বিতীয় বিশ্বযুদ্ধের সময় জাপান, ব্রিটেন, জার্মানি ও আমেরিকায় সেনাবাহিনীর সদস্যরা জেগে থাকতে এবং ক্লান্তি দূর করতে এটা খেত। যুদ্ধের পর এ ওষুধের বিশাল মিলিটারি স্টক ছড়িয়ে পড়ে সাধারণ মানুষের হাতে| ১৯৫০ সাল পর্যন্ত আমেরিকায় এ ড্রাগটা আইনসংগতভাবে তৈরি হতো। পরে ছাত্রছাত্রী, ট্রাকচালক ও অ্যাথলেটরা এর যথেচ্ছ ব্যবহার করতে থাকলে কুফল সম্পর্কে জানা যায়। এবং ১৯৭০ সালে বিশ্বব্যাপী এটা নিষিদ্ধ করা হয়।
আরও পড়ুন : ওজন কমাতে এই ডায়েট না মৃত্যুর হাতছানি!
এখন ইয়াবার সবচেয়ে বেশি উৎপাদন হয় মিয়ানমারে এবং এর বিরাট বাজার হলো থাইল্যান্ড ও বাংলাদেশ। আমেরিকাসহ পৃথিবীর উন্নত দেশগুলোও এর ছোবলের বাইরে নেই। ইয়াবা খেলে সাময়িক আনন্দ ও উত্তেজনা, অনিদ্রা, খিটখিটে ভাব ও আগ্রাসী প্রবণতা বা মারামারি করার ইচ্ছা, ক্ষুধা কমে যাওয়া ও বমি ভাব, ঘাম, কান-মুখ লাল হয়ে যাওয়া এবং শারীরিক চাহিদা বেড়ে যায়। তবে এ সবই অল্প কয়েক দিনের জনও। বাড়ে হূৎস্পন্দনের গতি, রক্তচাপ, শ্বাস-প্রশ্বাস এবং শরীরের তাপমাত্রা। মস্তিষ্কের সূক্ষ্ম রক্তনালিগুলোর ক্ষতি হতে থাকে এবং কারও কারও এগুলো ছিঁড়ে রক্তক্ষরণ শুরু হয়ে যায়। কিছুদিন পর থেকেই ইয়াবাসেবীর হাত-পা কাঁপতে শুরু করে, হেলুসিনেশন হয়, পাগলামি ভাব দেখা দেয়, প্যারানয়া হয়।
খিটখিটে ভাব, অহেতুক রাগারাগি, ভাঙচুর, নার্ভাসনেসে ভুগতে থাকে ইয়াবা আসক্ত ব্যক্তিরা। স্ম্বরনশক্তি কমে যায়, সিদ্ধান্তহীনতা শুরু হয় এবং কারও কারও সিজোফ্রেনিয়ার লক্ষণ দেখা দেয়। অনেকে পাগল হয়ে যায়। লেখাপড়ায় খারাপ হয়ে একসময় ডিপ্রেশন বা হতাশাজনিত নানা রকম অপরাধ প্রবণতা, এমনকি আত্মহত্যাও করে থাকে। হার্টের ভেতরে ইনফেকশন হয়ে বা মস্তিষ্কের রক্তনালি ছিঁড়ে অনেকে মারা যায়।