ট্রেনে হঠাৎ দেখা ‘প্রেম’ খুঁজতে পোস্টারে পোস্টারে ছয়লাপ!
কলকাতা টাইমসঃ
কোন্নগর থেকে বালি, সবমিলিয়ে মোট চারটি স্টেশন। হাওড়া শাখার ওই স্টেশনগুলোতে নামলেই চোখে পড়বে একটি পোস্টার; তাতে লেখা ‘কোন্নগরের কনে’। আসলে সেটা স্বল্প দৈর্ঘ্যের একটি চলচ্চিত্রের বিজ্ঞাপন। কিন্তু, সেই শর্ট ফিল্ম এবং তার পোস্টারের আড়ালেই লুকিয়ে আছে এক অজানা কাহিনি। যা কল্পনা নয়, বরং ঘোরতর বাস্তব।
কী সেই কাহিনি? কাহিনির ‘নায়ক’ বিশ্বজিৎ পোদ্দার জানান, গত জুলাইয়ের ২৩ তারিখ। দিনটা এখনো স্পষ্ট মনে আছে। তারাপীঠ থেকে ফিরছিলেন তিনি। বর্ধমান লোকালে উঠেছিলেন। ট্রেন ছাড়ার ঠিক আগের মূহুর্তে বিশ্বজিতের উল্টো দিকের আসনে এসে বসে এক পরিবার। বাবা-মা, সঙ্গে তরুণী এক মেয়ে। হঠাৎ করেই মেয়েটির সঙ্গে চোখাচোখি হয়ে যায় বিশ্বজিতের। তার পর থেকেই আর চোখ ফেরাতে পারেননি তিনি। বিশ্বজিৎ বলেন, মেয়েটি যে অসাধারণ সুন্দরী, তা নয়। অথচ নিজের অজান্তেই বার বার চোখ চলে যাচ্ছিল তার দিকে। তারাপীঠ থেকে বর্ধমান যাত্রাপথ এভাবেই চলছিল।
বিশ্বজিতের একবার মনে হয়, মেয়েটি হয়তো অস্বস্তি বোধ করছে। সে কারণে জোর করেই চোখ ঘুরিয়ে নেন। ট্রেন বর্ধমান পৌঁছায়। জোকার বাসিন্দা বিশ্বজিৎ ওই ট্রেন পাল্টে হাওড়াগামী ট্রেনে ওঠেন। এখানেই শেষ হতে পারত গোটা গল্পটা। কিন্তু, হলো না। কারণ, ফের সেই ট্রেনেই একই কামরায় আবার উল্টো দিকের আসনে এসে বসেন ওই একই পরিবার। আর সেটাই বাঁক বদলে দেয় গল্পের। বিশ্বজিৎ বলেন, এবার অনেক সপ্রতিভ লাগছিল মেয়েটিকে। মুখে হালকা হাসিও ছিল।
মনে একটু জোর পেয়ে বিশ্বজিৎ এবার আলাপ জমানোর চেষ্টা করেন। ফোন নম্বরও চেয়েছিলেন তিনি। কোন্নগরে নামবার সময় বাবা-মায়ের নজর এড়িয়ে অস্ফুটে নম্বরটাও বলেছিলেন ওই তরুণী। কিন্তু সেটা শুনতে পাননি বিশ্বজিৎ। তার পর থেকেই সেই তরুণীকে ভুলতে পারছেন না ২৯ বছর বয়সী বিশ্বজিৎ। রাত-দিন সব সময়েই সেই নাম না-জানা তরুণীই তার ‘ধ্যান-জ্ঞান’ হয়ে ওঠে। তার পরেই সেই ‘কন্যা’কে খোঁজার শুরু। বিশ্বজিৎ বলেন, সেদিন ট্রেনে আসতে আসতে কথা শুনে মনে হলো ওদের বাড়ি কোন্নগরে। কয়েক বার বালির কথাও শুনেছি।
সেই সূত্র ধরেই কোন্নগর থেকে বালি, সেই কন্যার খোঁজ চালাচ্ছেন তিনি। তার পর হঠাৎই মাথায় একটা বুদ্ধি খেলে যায় তার। সে দিন যে পোশাক পরে ওই তরুণীকে দেখেছিলেন তিনি, সেই একই লাল-কালো-সবুজ ডোরা কাটা টি-শার্ট আর সঙ্গে থাকা কালো পিঠ ব্যাগ কাঁধে ঝুলিয়ে ছবি তোলেন।বন্ধুরা বিশ্বজিতের পরিকল্পনা আরো এক ধাপ এগিয়ে নিয়ে যায়। বিশ্বজিৎ বলেন, আমি নিজেও শখে ছোটখাটো ছবি বানাই। বন্ধুরা আমাকে গোটা গল্পটা নিয়ে একটা ছবি বানানোর পরামর্শ দেয়। আমি বন্ধুদের সাহায্যে সেই গল্প ধরে একটা ছবি বানিয়ে ১৪ অাগস্ট ইউটিউবে আপলোডও করি।
তার পর, সেই ছবির পোস্টার ছাপিয়ে কোন্নগর থেকে বালি ‘কোন্নগরের কনে’ সমস্ত স্টেশনে লাগানো হয়। উদ্দেশ্য একটাই। যদি কোনোভাবে ওই তরুণী সেই পোস্টার দেখে বিশ্বজিৎকে চিনতে পেরে যোগাযোগ করেন। পোস্টারের নিচের দিকে বিশ্বজিৎ নিজের ফোন নম্বরও দিয়ে রেখেছেন। দু’সপ্তাহের বেশি সময় কেটে গেছে। এখনো বিশ্বজিতের ফোনে সেই তরুণীর ফোন আসেনি। কিন্তু হাল ছাড়তে রাজি নন তিনি। কারণ এখনো তার চোখের সামনে ভাসে সেই কালো টপ আর ঘিয়ে রঙের জিন্সের প্যান্ট পরা তরুণীর মুখ। বিশ্বজিতের পোস্টারের একটা লাইন লেখা আছে, ‘চিনতে পেরেছো তো, সেদিন দেখা হয়েছিল ট্রেনে, আই উইল বি ওয়েটিং ফর ইউ …’।
কয়েক দিন আগে মুম্বাইতে প্রেমিকার ‘মান’ ভাঙাতে এক যুবক ছোট ছোট হোর্ডিং ভরিয়ে দিয়েছিলেন শহর। সেখানে লেখা ছিল, ‘শিবদে আই অ্যাম সরি’। সঙ্গে ‘লাভ’ চিহ্ন। পরে ওই যুবককে জরিমানা করে পুলিশ। কারণ, বেআইনিভাবে ওই হোর্ডিং লাগানো হয়েছিল। তবে, জানা যায়নি আদৌ ওই হোর্ডিং দেখে ‘শিবদে’র মান ভেঙেছিল কি না! ঠিক তেমনি ভাবেই জানা যায়নি, কোন্নগরের কনে আদৌ দেখেছেন কি না এই পোস্টার? যদি দেখে থাকেন, তবে কি চিনতে পারলেন বিশ্বজিৎকে? যদি চিনতেও পারেন, যোগাযোগ করবেন তো? বিশ্বজিতের মতো এ প্রশ্ন এখন অনেকেরই।