তখনও এপার-ওপর, এখনও
কলকাতা টাইমস :
গোলগাল কারলি চুলের মেঘলার সাথে আমার আদৌ ঠিক মতন বনিবনা হয় না। এমনকি ঈশ্বর চিন্তিত থাকেন আমাদের শান্ত থাকার মুর্হূতগুলোতে, ভাবেন সামনে বোধহয় রক্তক্ষয়ী সংঘর্ষের আশংকা অনিবার্য। আমাদের নিরবতায় আশেপাশের বন্ধুবান্ধব, আত্মীয়স্বজন সবসময় বিচলিত থাকে। যখন আমরা তুমুল ঝগড়া জুড়ে দেই, আশপাশ যেন স্বস্থির নিঃশ্বাস ফেলে। স্বয়ং ঈশ্বর তখন নিশ্চিন্ত মনে অন্য কাজে মনোনিবেশ করেন। আমাদের জন্মটা দ্বন্দের মাধ্যমে, পৃথিবীতে পা রেখে আমরা দু’জনে তটস্থ রেখেছি আমাদের জন্মদাতা-দাত্রীদের। আমাদের বন্ধুত্ব, ভালোবাসা আর বিয়ে সবকিছু একেকটা হাঙ্গামার অংশ। যার শিকার হচ্ছে আমাদের আশেপাশের মানুষগুলো। আমরা আজও তুই তোকারীতে রয়ে গেছি। ‘তুমি’ বলে সম্বোধন করতে অভ্যস্ত নই। বরং হাসি চলে আসে মুখে। আমি মেঘলাক ছেমড়ী ডাকি, ও আমাকে ডাকে ছেমড়া। খেলার মাঠে দু’দলের সর্মথন নিয়ে, রাজনীতি নিয়ে দু’পক্ষের আধিপত্য দেখাতে, নিজেদের পছন্দকে জোরদার করতে আমাদের ঝগড়া বাঁধে। আমার ভালো লাগে সীমাহীন সাগর আর মেঘলার ভালো লাগে সবুজ পাহাড়।
মেঘলা আকাশ ছুঁতে চায় আর আমি পাতাল। কোথাও বেড়াতে যাওয়ার প্ল্যান বানচাল করি নিজেরাই। মন খারাপ করে দু’জনে পূর্ণিমা দেখি নিজেদের ছাদে বসে। আমার প্রিয় রং গাঢ় নীল, মেঘলার প্রিয় জলপাই সবুজ। শুনেছি কান্নার রং নীল। সবুজও চির সজীবতার রং। আমাদের অনাগত প্রথম শিশু সন্তানটি কন্যা হোক এই আমার প্রার্থনা। মেঘলার পুত্র কামনা। এই নিয়ে আমরা তুমুল হৈচৈ করি। মেঘলার বাবা মা আমাকে বোঝায়, আমার বাবা-মা ওকে। আমাদের অনাগত শিশু জন্ম নিয়ে আমাদের সামলানোর দায়িত্ব নিয়ে গালে হাত রেখে চিন্তিত মনে খুজঁবে সমাধান। হাসতে হাসতে গড়িয়ে পড়বে আমাদের ছেলেমানুষীতে। আমাদের সারাবেলা কাটে কারণহীন ঝগড়ায়, রাত এলে ক্লান্ত আমরা ভালোবাসা নিয়ে ঘুমুতে যাই। মেঘলা প্রায়শ রাগ করে বাবার কাছে চলে যায়। আমি বিষন্নতায় ঘর একাই সামাল দেই। একদিন বাদেই মেঘলা ঘরে ফিরে। এসেই আমাকে শোনায়, “তোকে ছাড়া আমার একদম ভালো লাগে না। আমি বুঝি না, তোর মতন একটা বাদরকে কেন এত বেশী ভালোবাসি?” । বাদঁর কথাটা নিয়ে আমাদের আবার ঝগড়া বাঁধে।