টাকা রোজগার বা খরচ কোনোটাই করতে হয় না এই যুবককে, ১০ বছর ধরে দিব্যি চলছে জীবন!
কলকাতা টাইমসঃ
সকাল থেকে উঠে দৌড়। উদ্দেশ্য স্কুল, কলেজ, চাকরি কিংবা ব্যবসা। দিনের শেষে সবটাই টাকার জন্য। কিন্তু এই টাকা ছাড়া জীবন কেমন হবে ভেবে দেখেছেন? কীভাবে বাঁচবেন? বেঁচে থাকা আদৌ সম্ভব হবে কি?
উত্তর হবে ‘না’৷ কিন্তু এই অলৌকিক ভাবনাটাই সত্যি করে ফেলেছেন আইরিশ যুবক মার্ক বয়েল। বছরের পর বছর কেটে গেছে, তিনি কোন টাকা উপার্জন করেননি৷ খরচও করেননি৷ নেই কোনও জমানো টাকাও। দিব্যি বেঁচে আছেন তিনি। গল্প নয়, ঘটনাটা একদমই সত্যি।কয়েক বছর আগে এমনটা নিজেও ভাবতে পারতেন না মার্ক বয়েল। বিজনেস-ইকনমিক্সের ডিগ্রি পকেটে নিয়ে তখন টাকা আয়ের চিন্তা করতেন তিনি৷ আর পাঁচটা সাধারণ মানুষের মত তিনিও ভেবেছিলেন কীভাবে টাকা আয় করে ভালভাবে বাঁচতে পারবেন৷ সমাজকে দেখাতে পারবেন যে, তিনি সফল। উপায়ও হয়েছিল। এক বড় মাপের ফুড কোম্পানিতে ম্যানেজারের চাকরি নিয়ে আরামের জীবন কাটাচ্ছিলেন তিনি। বাঁধ সাধল একটি বিশেষ ভিডিও ফুটেজ।
সেই ভিডিও ফুটেজ দেখে পরের দিন আচমকাই মার্কের মাথায় আসে যে যাবতীয় সমস্যার মূলেই আসলে টাকা। এই সমস্যাটাকে সমূলে নিধন করাই একমাত্র উপায়। তিনি ভেবে দেখেন, পৃথিবী জুড়ে মানুষে মানুষে বৈষম্যের কারণ সেই টাকা। টাকা ছাড়াই কীভাবে সুখে থাকা সম্ভব, সে ব্যাপারে মার্কের উদাহরণ, যদি আমাদের নিজেদের খাবার নিজেদেরই বানাতে হয়, তাহলে আমরা সেটা নষ্ট করার আগে দু’বার ভাবব। নিজেদের চেয়ার-টেবিল যদি নিজেরাই বানাই, তাহলে চট করে সেগুলি ফেলে দিয়ে নতুন আনার কথা ভাবব না। ভাবনাতেই থেমে থাকেননি৷ কাজেও করে দেখালেন মার্ক বয়েল। ২০০৮ থেকে শুরু করেন অভিনব এক জীবনযাপণ।
প্রথম দিনই প্রাকৃতিক ফলমূল আর নষ্ট হয়ে যাওয়া খাবার থেকে তিন রকমের খাবার বানিয়ে ফেলেন তিনি। রকেট স্টোভে স্বল্প জ্বালানিতে খাবার তৈরি করে বেশ খুশি তিনি। পড়ে থাকা সাইকেল দিয়ে নিজের থাকার মত ক্যারাভ্যান বানিয়েছেন মার্ক৷ যা রাখা থাকে একটি বাড়ির পাশে। ল্যাম্পপোস্টের আলোতেই কাজ চলে যায় তার। যাতায়াতের সময় মার্ক ব্যবহার করেন বাড়তি মোম দিয়ে তৈরি মোমবাতি। পুরানো বোতলে একগুচ্ছ কাঠ জ্বালিয়ে নিজের থাকার জায়গাটা গরম করে নেন অনায়াসেই। গোসল করেন নদীতে। ব্রাশের বদলে দাঁত পরিষ্কার করতে ব্যবহার করেন কাটলফিশের হাড় ও মৌরি।
এছাড়া নিজে পরিষ্কার থাকার জন্য খবরের কাগজওয়ালাদের কাছ থেকে নিয়ে নেন বাড়তি হওয়া কাগজ। এমনই রয়েছে আরও অনেক আজব কারবার। প্রথম প্রথম মানিয়ে নিতে অসুবিধা হলেও, বেশ কয়েক বছর কাটিয়ে ফেলেছেন তিনি। এখন তিনি অভ্যস্ত। বিদেশে বিভিন্ন পত্র পত্রিকায় লেখালেখিও করেন নিয়মিত। মানুষকে শেখান, কীভাবে টাকা ছাড়া বাঁচা যায়। নিজেকে অ্যান্টি-ক্যাপিটালিস্ট হিসেবে পরিচয় দিতে প্রবল আপত্তি তার। টাকার বিপক্ষে নন মার্ক। বরং নিজেকে প্রকৃতির পক্ষে কিংবা সুখী পৃথিবীর পক্ষে দেখতেই বেশি পছন্দ করছেন তিনি। মার্ক চাইছেন আরও বেশি মানুষ এই পথে আসুক।