November 22, 2024     Select Language
৭কাহন Editor Choice Bengali KT Popular

খুকুর পুতুলের ভোজ 

[kodex_post_like_buttons]

কলকাতা টাইমস :

পুতুলের মা খুকি আজ ভয়ানক ব্যস্ত। আজ কিনা ছোট্ট পুতুলের জন্মদিন, তাই খুব খাওয়ার ধুম লেগেছে। ছোট্ট টেবিলের ওপর ছোট্ট ছোট্ট থালা-বাটি সাজিয়ে, তার মধ্যে কি চমৎকার করে খাবার তৈরি করে রাখা হয়েছে। আর চারিদিকে সত্যিকারের ছোট্ট ছোট্ট চেয়ার সাজানো রয়েছে, পুতুলেরা বসে খাবে বলে।খুকির যে ছোট দাদা, তার কিনা সাড়ে চার বছর বয়স, তাই সে বলে, ‘পুতুলরা খেতেই পারে না, তাদের আবার জন্মদিন কি?’ কিন্তু খুকি সে কথা মানবে কেন? সে বলে, ‘পুতুলরা সব পারে। কে বলল পারে না? কে বলল যে কক্ষনো কোনোদিন তারা কথা বলে না, কক্ষনো কোনোদিন খায় না?’
খোকাপুতুলের যখন অসুখ করেছিল তখন সে কি ‘মা, মা’ বলে কাঁদত না? নিশ্চয়ই কাঁদত। তা না হলে খুকি জানল কী করে যে তার অসুখ করেছে? খুকির দাদা এ সবের জবাব দিতে পারে না, তাই সে, ‘বোকা মেয়ে, হাঁদা মেয়ে’ বলে মুখ ভেংচিয়ে চলে যায়।খুকি গেল তার মায়ের কাছে নালিশ করতে। মা সব শুনেটুনে বললেন, ‘সব সময় সবার কাছে কি পুতুলরা জ্যান্ত হয়? যেদিন দেখবি পুতুল সত্যি করে খাবার খাচ্ছে, সেদিন ছোড়দাকে ডেকে দেখাস।’ খুকি বলল, ‘আজকে যদি ওরা জেগে উঠে খাবার খেতে থাকে, তখন কী মজাই হবে! আমার বোধ হয় রাত্তিরে যখন আমরা ঘুমিয়ে থাকি, তখন তাদের দিন হয়! তা না হলে আমরা তো দেখতে পেতাম? সেই যে একদিন টিনের তৈরি দুষ্টু পুতুলটা খাট থেকে পড়ে গিয়েছিল।
নিশ্চয় ওরা রাত্রে উঠে মারামারি করেছিল! তা না হলে খাট থেকে পড়ল কেন? আজ থেকে আমি ঘুমানোর সময় খুব ভালো করে কান পেতে থাকব।’পুতুলের জন্মদিনে কি চমৎকার খাবার! ময়দার মিঠাই, ময়দার পিঠা, ছোট্ট ছোট্ট নারকেলের মোয়া, আর ছোট্ট ছোট্ট গুড়ের টিকলি,   এমনি সব আশ্চর্য আশ্চর্য জিনিস। রাতে শোবার আগে খুকি তার পুতুলদের ঝেড়ে-মুছে নাইয়ে-খাইয়ে ঘুম পাড়াল আর বলে দিল, ‘এই দেখ, খাবারটাবার রইল, রাত্রে উঠে খাস।’ কোথায় কে বসবে, কোনটার পর কোনটা খাবে, ঝগড়া করলে কে কী শাস্তি পাবে সব বলে, তারপর দুষ্টু পুতুলটাকে খুব বকে, ধমকে আর ছোট্ট পুতুলকে জন্মদিনের জন্য খুব খানিকটা আদরটাদর করে, তারপর খুকি গেল বিছানায় শুতে। যেমনি শোয়া অমনি ঘুম।
খুকিও ঘুমিয়েছে, আর অমনি ঘরের মধ্যে কাদের টিপটিপ পায়ের শব্দ শোনা যাচ্ছে। তাদের একজন খুকুমণির জুতোর কাছে, ঘরের কোণে ছবির বইগুলোর কাছে, পুতুলদের চাদর-ঢাকা খাটের কাছে ঘুরে বেড়াচ্ছে; এটা ওটা শুঁকছে, আর কুটুর-কুটুর করে এতে ওতে কামড়িয়ে দেখছে! খানিকটা বর্ণ-পরিচয়ের পাতা খেয়ে দেখল, ভালো লাগে না; জুতোর ফিতেটা চিবিয়ে দেখল, তার মধ্যে কিচ্ছু রস নেই; টিনের পুতুলটাকে কামড়িয়ে দেখল, ওরে বাবা, কী শক্ত! এমন সময় হঠাৎ অন্ধকারে তার চোখ পড়ল টেবিলে সাজানো ওসব কী রে! দৌড়ে চেয়ার-টেয়ার উল্টিয়ে এক লাফে টেবিলের ওপর চড়ে সে একটুখানি শুঁকেই ব্যস্ত হয়ে বলল, ‘কিঁচ কিঁচ কিঁ-চ!’ তার মানে, ‘ওগো শিগগির এসো, দেখে যাও!’ অমনি টিপ টিপ টুপ টুপ ট্যাপ ট্যাপ থপ করে সেইরকম আর একটা এসে হাজির। ঠিক সেইরকম লোমে ঢাকা ছেয়ে রঙ, সেইরকম সরু লম্বা লেজ, সেইরকম চোখা চোখা নাক আর মিটমিটে কালো কালো চোখ। দুজনের উৎসাহ আর ধরে না! এটা কী সুন্দর! ওটা কেমন চমৎকার!’ এমনি করে, দেখতে দেখতে, যত খাবার সব চেটেপুটে শেষ!
সকালবেলায় খুকি উঠে দেখল ওমা! কি আশ্চর্য! সব খাবার শেষ হয়ে গেছে! কখন যে পুতুলগুলো জেগে উঠল, কখন যে খেল, আর কখন যে আবার ঘুমোল, কিছুই সে টের পায়নি। ‘খেয়েছে! খেয়েছে! সব খাবার খেয়েছে’ বলে সে এমন চেঁচিয়ে উঠল যে মা-বাবা, ছোড়দা-বড়দা সবাই ছুটে এসে হাজির।ব্যাপার দেখে আর খুকির কথা শুনে সবাই বলল, ‘তাই তো! কি আশ্চর্য!’ খালি ছোড়দা বলল, ‘তা বই কি! ও নিজে খেয়ে এখন বলছে, পুতুলে খেয়েছে।’ দেখো তো কি অন্যায়!আসলে ব্যাপারটা যে কী, তা কেবল মা জানেন আর বাবা জানেন, কারণ তারা ঘরের কোণে ইঁদুরের ছোট্ট ছোট্ট পায়ের দাগ দেখেছিলেন। কিন্তু সে কথা খুকিকে যদি বলো, সে কক্ষনো তোমার কথা বিশ্বাস করবে না

Related Posts

Leave a Reply