November 25, 2024     Select Language
KT Popular সফর

ওমকার ভ্রমণ 1

[kodex_post_like_buttons]

ওমকার- মান্ধাতা – বিপ্লব মজুমদার
জুন মাসের তীব্র দাবদাহ চলছে l ইচ্ছা ছিলো কেদারধামে যাবো l সেই মতো ছুটি নিই l কিন্তু বাবার ইচ্ছা অন্যরকম ! ছুটি বাড়িয়ে বিশেষ কারণে যেতে হলো অম্বিকাপুর -ছত্তিশগড় এর এক ছোট্ট সুন্দর শহরে এর পাশে এক কোলিয়ারী মহল্লায় l ওখানকার কাজ দুদিনে মিটে গেলো l মহল্লার পাশে এক শিব মন্দিরে বসে ভাবছি এখন তো কেদারধামে যাওয়া সম্ভব নয় l হাতে ছুটি ও আছে l ভাবছি অমরকণ্টক যাই আবার ভাবছি কাশীতে জমিয়ে তিনচারদিন থাকি l মনে এটাও এলো ওমকারেশ্বর যাই কিন্তু এতে দ্বিধা ছিলো l কারণ রজত স্যার এর সাথে দুবছর আগে ওখানে যাবার কথা ছিলো l পুরো প্ল্যান করেও যাওয়া হয় নি আমার কারণে l তাই ওনাকে সাথে না নিয়ে যাই কি করে?
এমন সময় ওনার ফোন ! প্রাথমিক কথাবার্তার পর উনি বললেন ওমকার- মহাকাল দর্শন করে আয় l কি আশ্চর্য ! ওনার জন্য ওখানে যাওয়া নিয়ে দ্বিধা আর উনি ই বলছেন যেতে l মন্দির থেকে বাসায় ফেরার পথে ভাবছি আমার উপলব্ধিতে কি সংশয় রয়েছে? প্রকৃতি মা র উপর ছেড়ে দিয়ে ভেসে বেড়ালেই যে মা সময়মতো সব জুটিয়ে দেন এবং করিয়েও নেন l বসে বসে ছক করলেই রাজ্যের অশান্তি এসে জোটে l মনের দ্বিধা কাটিয়ে খুব ভোরে উঠে বেরিয়ে পড়লাম ঝোলা কাঁধে l সকাল 5টা র অম্বিকাপুর – জব্বলপুর ইন্টারসিটি ধরলাম l তীব্র গরম থাকলেও ভোরের পরিবেশ বেশ মনোরম l স্টেশন পশে সুউচ্চ পাহাড় আর তার নীচে নিবীড় বনানী l সবে আলো উঠেছে l মোরগের ডাক শোনা যাচ্ছে l স্টেশন ফাঁকাই l সব মিলে এক সুন্দর স্নিগ্ধ পরিবেশ l মন ফাঁকা করে উঠে পড়লাম ট্রেনে l এখন মনে শুধুই ওমকারেশ্বর l সেই কবে তপোভূমি নর্মদা পড়ে ওমকার যাবার বাসনা হয়েছিল তা এবার মিটতে চলেছে l সংকল্প বাসনা যদি তীব্র ,সৎ এবং প্রকৃতির নিয়মানুগ হয় তবে সেই সংকল্প তাৎক্ষণিক ভাবে ফলপ্রসূ না হলেও তার থেকে উদ্ভূত তরঙ্গ থেকেই যাবে এবং প্রকৃতি মা তাঁর সময় অনুযায়ী তা করিয়ে নেবেন l এ বিশ্বাস ক্রমশই দৃঢ় হচ্ছে l গতবছর কেদারধাম থেকে ফেরার পথে দেবপ্রয়াগের ঘাটে বসে মনে এক সংকল্প এসেছিলো দ্বাদশ জ্যোতির্লিঙ্গ দর্শন করবো l রজত স্যার এর হাত ধরে আমার প্রথম জ্যোতির্লিঙ্গ দর্শন বাবা বৈদ্যনাথ l তাঁর সাথেই বাবা বিশ্বনাথ দর্শন l তাঁর পরামর্শেই বাবা কেদারনাথ দর্শন l এবারেও তাঁরই কথাতেই চলেছি বাবা ওমকারেশ্বর ও বাবা মহাকাল দর্শনে l
এইসব ভাবতে ভাবতে দেখি ট্রেন প্রায় ঘন্টাখানেক চলে এসেছে l এই মালভূমি অঞ্চলের প্রকৃতি র রূপ ভাষায় প্রকাশ করার শক্তি আমার নেই l গরমের দাপটে চারিদিক রুখা শুখা l সকাল আটটাতেই সূর্যদেব আগুনের লাভা গলগল করে ঢালতে শুরু করে দিয়েছেন l গরম যতই হোক মালভূমি অঞ্চলে এলেই আমার শরীর মন আত্মা এখানকার আবহাওয়ার সাথে এক হয়ে যায় l আমি খুব ভালো থাকি l যদিও আমি সমতলের মানুষ l হিমালয় ভালো লাগলেও ঠিক এই অঞ্চলের মতো ভালো লাগে না l যাইহোক ট্রেনে প্রায় লোক নেই l বেলা যত বাড়ছে গরম হওয়ার দাপট ততো বাড়ছে l বাইরে তাকানোই দায় l গামছা দিয়ে মাথা মুখ ঢেকে কোনোরকমে শুধু চোখ দুটো বের করে প্রকৃতির এই রুদ্র রূপ দেখছি l একে একে অচানকমার, বান্ধবগড় জাতীয় পার করে বেলা তিনটার সময় জব্বলপুর পৌছালাম l স্টেশন এনকোয়ারি থেকে জানতে পারলাম বিকাল ছ ‘টাতে সমস্তিপুর -নাগপুর ট্রেন খান্ডোয়া রোড পৌঁছাবে রাত 12টা l যাই হোক হাতে একটু সময় আছে l লাঞ্চ করে জব্বলপুর শহর ঘুরতে বেড়িয়ে পড়লাম l

Related Posts

Leave a Reply