বাস্তবে এরা তারকাদের সৎমা, কিন্তু…
কলকাতা টাইমস :
বলিউডের ছবিতে সৎ মায়েরা স্বামীর আগের ঘরের সন্তানদের সবকিছুতে নাক গলান, বেশিরভাগ সময় দুর্ব্যবহার করেন। এটাই চেনা ছক। কিন্তু বাস্তব চিত্রটা উৎসাহব্যঞ্জক। পর্দায় সৎ মায়েরা যতোটা মন্দ, বাস্তব জীবনে তারা তার চেয়েও বেশি ভালো। তাদের অনেকেই সৎ ছেলেমেয়েকে নিজের সন্তান হিসেবে দেখেন।
জাভেদ আখতারের সঙ্গে মিলে সেলিম খানের লেখা ‘দিওয়ার’ ছবিতে অমিতাভ বচ্চনের বলা ‘তুমহারে পাস কেয়া হ্যায়?’ সংলাপের উত্তরে শশী কাপুর বলেন, ‘মেরে পাস মা হ্যায়’। এখন সেটা লেখা হলে উত্তরটা হতো ‘মেরে পাস সৎ মা হ্যায়’! বলিউডের প্রথম সারির কয়েকজন অভিনেতার সঙ্গে তাদের সৎ মায়ের সুসম্পর্ক বজায় রয়েছে। আবার অনেকের সঙ্গে তা নেই। এমন কয়েকজনকে নিয়ে এ রচনা।
শহিদ কাপুর ও সুপ্রিয়া পাঠক
বিয়ের আগে বলিউড অভিনেতা শহিদ কাপুর থাকতেন রাজ ক্ল্যাসিক অ্যাপার্টমেন্টে। দিল্লির মেয়ে মিরা রাজপুতকে বিয়ে করে তিনি উঠেছেন জুহুতে সাগর-অভিমুখী অ্যাপার্টমেন্টে। নতুন ঘরে সৎ মা বলিউড অভিনেত্রী সুপ্রিয়া পাঠককে ভীষণ মিস করেন ৩৪ বছর বয়সী এই তারকা। একথা তার আত্মীয়স্বজন ও ঘনিষ্ঠ বন্ধুরা সবাই জানেন।
বাবা অভিনেতা পঙ্কজ কাপুরের কোনো ভুলভ্রান্তি দেখলে সৎ মায়ের সঙ্গে ভাগাভাগি করতে ভোলেন না এজন্য শহিদ। সুপ্রিয়ার বর্ণনা দিতে গিয়ে তাকে ভালো মানুষ হিসেবে উল্লেখ করেছেন তিনি। তার পাশে সবসময় দায়িত্বশীল অভিভাবকের মতো থেকেছেন সুপ্রিয়া, একথাও জানান শহিদ।
একইভাবে শহিদের প্রশংসায় পঞ্চমুখ সুপ্রিয়া জানান, পঙ্কজের সঙ্গে তার বিয়ের বন্ধনকে মজবুত করতে বলিউডের এই অভিনেতার ভূমিকা কম নয়। তাছাড়া পরিবারের সব বিষয়ে শহিদের ওপর ভরসা রাখতে পারেন তিনি। তার পরিবারের পাঁচজন সদস্যের মধ্যে শহিদ একাই মাতিয়ে রাখেন। ‘গোলিও কা রাসলীলা রাম-লীলা’ ছবির জন্য সুপ্রিয়া ফিল্মফেয়ার অ্যাওয়ার্ডসে সেরা পার্শ্ব-অভিনেত্রীর পুরস্কার গ্রহণের সময় সবার চেয়ে জোরে হাততালি দিয়েছিলেন শহিদ। সুপ্রিয়ার সব কথাই শহিদের কাছে আলাদা গুরুত্ব পায়।
সালমান খান ও হেলেন
বলিউডের হেভিওয়েট তারকা সালমান খানের সৎ মা হেলেন একসময় বলিউডে আইটেম গানের রানী ছিলেন। তারা দু’জনই একে অন্যের সম্পর্কে খুব একটা কথা বলেননি প্রকাশ্যে। তবে তাদের মধ্যে যে বৈরিতা নেই তা কমবেশি সবারই জানা। ৫০ বছর বয়সী সালমানের বিইং হিউম্যান চ্যারিটি অনুষ্ঠানে নিয়মিত অংশ নিয়েছেন হেলেন। সৎ মাকে খুব শ্রদ্ধা করেন সল্লু। তার মা সালমার সঙ্গে হেলেন সম্পর্কটা এখন আপন বোনের মতো। সেলিম খানের দ্বিতীয় স্ত্রী হেলেন মনে করেন সালমান তার নিজের পুত্রসন্তান। পুরো খান পরিবারের বন্ধন খুব নিবিড়।
ফারহান আখতার ও শাবানা আজমি
গীতিকার জাভেদ আখতারের আগের ঘরের দুই সন্তান ফারহান আখতার ও জোয়া আখতারের সঙ্গে বলিউড অভিনেত্রী শাবানা আজমির নিবিড় বন্ধন রয়েছে। একসঙ্গে খাওয়া-দাওয়া, অনুষ্ঠানে অংশ নেওয়া- সবকিছুতেই দেখা যায় এ চিত্র। শাবানার আদর-যত্ন ও দিকনির্দেশনা পাওয়ার বিষয়টি নিয়ে প্রায়ই কথা বলেন ফারহান ও জোয়া। শাবানাও সৎ ছেলেমেয়ের প্রশংসা করতে ভোলেন না। যদিও প্রথম স্ত্রী হানি ইরানিকে ছেড়ে চলে যাওয়ায় ফারহানের চক্ষুশূল ছিলেন জাভেদ। করণ জোহরের টিভি অনুষ্ঠান ‘কফি উইথ করণ’-এ তা অকপটে জানিয়েছেন তিনি। কিন্তু ফারহানকে তার প্রয়োজনীয় সব ব্যাপারে স্বাধীনতা ও সুযোগ দেওয়ায় সম্পর্কটা ধীরে ধীরে সুদৃঢ় হয়েছে। শাবানার প্রতি শ্রদ্ধাও জন্মেছে ৪২ বছর বয়সী এই অভিনেতার মধ্যে। ফারহানের সব আনন্দের মুহূর্তে পাশেই থাকেন ৬৫ বছর বয়সী শাবানা আজমি।
অর্জুন কাপুর ও শ্রীদেবী
সৎ মা বলিউড অভিনেত্রী শ্রীদেবীকে নিয়ে সবসময় মুখে কুলুপ এঁটে রাখতেন বলিউড অভিনেতা অর্জুন কাপুর। তবে ‘কফি উইথ করণ’-এ প্রথমবার সৎ মাকে নিয়ে কথা বলেন তিনি। তার বাবা বলিউড প্রযোজক বনি কাপুরের স্ত্রীর চেয়ে শ্রীদেবীকে বেশিকিছু মনে করেন না অর্জুন। এ কারণে তাদের সম্পর্ক মা-ছেলের মতো স্বাভাবিক হবে না।
অর্জুন আরও জানান, তার মা মোনা কাপুর কাউকে অসম্মান করতে শেখাননি। তাই শ্রীদেবীকে কখনও অসম্মান করবেন না তিনি। তবে সুখী পরিবারের মতো এক ছাদের নিচে থাকা তার পক্ষে সম্ভব নয় বলে সাফ জানিয়ে দেন ৩০ বছর বয়সী এই তারকা। অবশ্য এ নিয়ে অসন্তুষ্ট নন তিনি। সৎ ছেলেকে নিয়ে শ্রীদেবী প্রকাশ্যে কখনও কিছু বলেননি। এমনকি তাদেরকে কোথাও একসঙ্গে দেখা যায়নি।
সানি দেওল-ববি দেওল ও হেমা মালিনী
বলিউড অভিনেত্রী হেমা মালিনীর সঙ্গে দুই অভিনেতা সানি দেওল ও ববি দেওলের সম্পর্ক মোটেই সুখকর নয়। সৎ মায়ের সঙ্গে কখনও ছবি তোলেননি তারা। কেউই হেমাকে নিয়ে টুঁ শব্দটিও বলেননি। বলিউড অভিনেতা ধর্মেন্দ্র ও হেমার কন্যা অহনার বিয়েতে যাননি দুই ভাই। যদিও হেমা বলেছিলেন তারা আসবেন। ধর্মেন্দ্র-হেমার আরেক কন্যা বলিউড অভিনেত্রী এশা দেওলের বিয়েতেও থাকেননি সানি-ববি।
প্রতীক বব্বর ও নাদিরা বব্বর
সানি ও ববি দেওল এবং অর্জুন কাপুরের মতো বলিউড অভিনেতা প্রতীক বব্বরেরও সৎ মায়ের সঙ্গে সম্পর্কটা খুব একটা ভালো নয়। ব্বর পরিবারের কর্ত্রী নাদিরা সৎ ছেলের মন জয় করতে পারেননি। পুরো পরিবারই কম চেষ্টা করেনি, কিন্তু তাতে কোনো ফল হয়নি।
কারিনা কাপুর খান-সারা
বলিউডের সাম্প্রতিক সময়ের অভিনেত্রীদেরও অনেকে সৎ মা হিসেবে সুনাম কুড়িয়েছেন। এ তালিকায় শুরুতেই বলা যায় কারিনা কাপুর খানের নাম। বলিউড অভিনেতা সাইফ আলি খানের আগের সংসারের ছেলেমেয়েদের সঙ্গে বেবোর (কারিনার ডাকনাম) সম্পর্কটা মায়ের চেয়েও বেশি বন্ধুর। ২০১২ সালে সাইফ বিয়ে করেন কারিনা।
‘কফি উইথ করণ’ অনুষ্ঠানে সাইফ-পুত্র ইব্রাহিম ও কন্যা সারার সঙ্গে নিজের সম্পর্কের ব্যাপারে কারিনা বলেন, ‘আমাদের সম্পর্কটা অসাধারণ। ওরা খুব নিয়ম-শৃঙ্খলার মধ্যে বেড়ে উঠেছে। সারা সবসময়ই মুরব্বি দেখলে দাঁড়িয়ে যায়। ইব্রাহিমও তার মতোই। আমি ওদের কাছে বন্ধুর মতো। একবার তো সারা আর আমি শ্যাম্পেন খেতে খেতে গল্প করলাম।’ তবে কারিনার আগে সাইফ বিয়ে করেছিলেন অমৃতা সিং। তিনিই সারা ও ইব্রাহিমের মা।
কিরণ রাও
আমির খানের জীবনেও দু’জন নারীর আগমন ঘটেছে। একজন তার প্রাক্তন স্ত্রী রীনা দত্ত, অন্যজন বর্তমান স্ত্রী কিরণ রাও। রীনার সঙ্গে আমিরের সংসার আলো করেছে পুত্র জুনায়েদ ও কন্যা ইরা। কিরণ তাদের ভালো বন্ধু। পিয়ানো ও খেলাধুলার প্রতি জুনায়েদ-ইরার ভালোলাগাকে ভাগাভাগি করে নেন কিরণ। সৎ সন্তানদের কখনও আলাদা করে দেখেননি আমিরপত্নী। আমির-কিরণে আরেক সন্তান আজাদকে খুব স্নেহ করে জুনায়েদ ও ইরা।