এনার গানের পাখি শতাব্দী পরেও আকাশে ওড়ে
কিশোরের গান সবাই মুখে মুখে তুলে নিতে পারে৷ তার শিক্ষার গুণই ওরকম। সংগীতকে তিনি আত্মস্থ করে সবার সামনে এসেছিলেন। তাই সেগুলো এমন প্রাণ পেয়েছে। মা গৌরীদেবীর হাত ধরেই হারমোনিয়াম রিডে আঙুল চালনা শেখা। বাবার ছিলো গ্রামফোন আর অসংখ্য রেকর্ড। উচ্চাঙ্গসংগীত থেকে পাশ্চাত্য সংগীত, ভক্তিগীতি, রবীন্দ্রসংগীত- সবকিছুর নিবিষ্ট শ্রোতা ছিলেন কিশোর। খান্ডোয়ার বাড়ির এই সাংগীতিক পরিবেশই ছিলো তার সংগীতের গুরু।
কিশোর এমন এক গায়নরীতির জন্ম দিতে পেরেছিলেন, যা পরিচালক ও নায়ক থেকে শুরু করে সংগীতপ্রেমীদেরও আশ্রয় হয়ে ওঠে। একই সঙ্গে বেদনা ও প্রেমের কোলাজ তার মতো করে আর কেউই আঁকতে পারেননি। সন্ন্যাসীর উদাসীনতা ও জীবনরসিকের প্রাণোচ্ছ্বাসকে একই কণ্ঠের মোড়কে শ্রোতাদের সামনে তুলে ধরা তিনি ছাড়া আর কারও পক্ষেই সম্ভব ছিলো না। এখানেই তিনি স্বতন্ত্র। তাই আজও তিনি এক ও অনন্য।
গান গাওয়া ছাড়াও সুর করতেন। লিখতেন। পাশাপাশি চলচ্চিত্রে অভিনয়ও ছিলো মনকাড়া। সত্যিকারের অলরাউন্ডার যাকে বলে! অবশ্য অভিনয় করলেও সংগীতকেই নিজের আত্মা করে নিয়েছিলেন কিশোর। গানকেই প্রাধান্য দিতেন। তিনি মনে করতেন- অভিনয় দর্শকরা হয়তো বিশ্বাস করে, কিন্তু গানই শ্রোতাদের হৃদয় ছুঁয়ে যেতে পারে।
কিশোরের ব্যক্তিগত ও বৈবাহিক জীবন কেটেছে নানা টালমাটালে। কোটি কোটি মানুষের হৃদয় ছুঁতে পারলেও কাছের মানুষদের মন ছুঁতে তিনি ছিলেন ব্যর্থ। একদিন পাখি যে আকাশে উড়ে যাবে কিশোর জানতেন। তাই বোধহয় এতো যত্ন করে তৈরি করেছিলেন তার গানের পাখিকে। যার উড়ান আজও শেষ হয়নি। যার ডানা মেলে রাখা আগামীর বাতাসে। কেননা চোখের জলের কোনো রঙ হয় না, তবু নয়ন সরসি জলে ভরে উঠলে সেখানে কাজলে কাজলে কী যে লেখা থাকে তা জানেন এবং জানাতে পারেন একমাত্র কিশোর কুমারই।