ক্যান্সারের নামে নিজের পরিবারকেই ঠকিয়ে আড়াই কোটি হাতালেন মহিলা
কলকাতা টাইমস :
দুই বছর ধরে ক্রমাগত মিথ্যে কথা বলে টাকা আদায় করে যাচ্ছিলেন। তাও নিজের পরিবার থেকেই। কখনও প্রাক্তন স্বামী বা শাশুড়ি-ননদ, আবার কখনও বা নিজের বয়ফ্রেন্ডের কাছ থেকে। সকলেরই কাছেই ব্রেন ক্যান্সারে আক্রান্ত হওয়ার গল্প ফেঁদেছিলেন। সেই চিকিৎসার খরচের নাম করেই দু’বছরে লক্ষ লক্ষ টাকা হাতিয়ে নিয়েছেন তিনি।
জানা গেছে, সেই টাকার বেশির ভাগ টাকাই খরচ করেছেন রকমারি ব্যাগ কিনে। অবশেষে ধরা পড়ে গেলেন তিনি। ভারতীয় বংশোদ্ভূত ইংল্যান্ডের ওই মহিলাকে প্রতারণার দায়ে চার বছরের জেলে পাঠিয়েছে আদালত।
পুলিশ জানিয়েছে, ছত্রিশ বছরের জসমিন মিস্ত্রি আসলে স্বভাবগত ভাবেই মিথ্যে কথা বলেন। ২০১৩ সালে প্রথমবার প্রাক্তন স্বামী বিজয় কাটেচিয়ার কাছে জানান, তিনি মারণ রোগ ব্রেন ক্যান্সারে আক্রান্ত। তার সমর্থনে বিজয়ের হোয়াটসঅ্যাপে চিকিৎসকের বেশ কয়েকটি মেসেজও পাঠিয়ে দেন।
এর এক বছর পর জসমিন বিজয়কে জানান, ব্রেন ক্যান্সারের শেষ স্টেজে রয়েছেন তিনি। আর মাত্র ছ’মাস বাঁচার আশা রয়েছে তার এবং আমেরিকায় গিয়ে চিকিৎসা করাতে হবে। তবে তার জন্য পাঁচ লক্ষ পাউন্ডের প্রয়োজন। টাকার হিসাবে যা প্রায় সাড়ে চার কোটির টাকারও বেশি।
জসমিনের আকুতি শুনে মন গলে গিয়েছিল বিজয়ের। প্রাক্তন স্ত্রীর চিকি়ৎসার খরচ জোগাতেও রাজি হয়ে যান তিনি। এ ভাবেই মাসের পর মাস জসমিনকে টাকা দিয়ে যেতে থাকেন। বিজয়ের মা, বোনের কাছ থেকেও নিয়মিত টাকা আদায় করতে থাকেন জসমিন। তবে শুধু নিজের প্রাক্তন স্বামী বা তার পরিবারই নয়, ডেটিং অ্যাপের মাধ্যমে আলাপ হওয়া এক ব্যক্তির কাছ থেকে সাড়ে সাত হাজার পাউন্ড ( প্রায় সাত লক্ষ টাকা) আদায় করেছিলেন তিনি।
পুলিশের দাবি, ইংল্যান্ডের মিডল্যান্ডস অঞ্চলের বাসিন্দা পেশায় মেডিক্যাল সেক্রেটারি জসমিন গত ২০১৫-১৭ সালের মধ্যে এক এক করে অন্তত ২৮ জনের কাছ থেকে মোট ২,৫৩,১২২ পাউন্ড আত্মসাত করেছেন। যা প্রায় ২ কোটি সাড়ে ২৬ লক্ষ টাকার কাছাকাছি।
এ ভাবেই চলছিল জসমিনের প্রতারণা। তবে হুট করেই সব ফাঁস হয়ে গেল। বিজয়ের এক বন্ধু তাকে জানান, চিকিৎসকের থেকে পাওয়া ব্রেন স্ক্যানের কয়েকটি ইমেজ দেখে তার সন্দেহ লাগছে। এরপর তিনি খতিয়ে দেখেন, তা আসলে গুগল থেকে ডাউনলোড করা ইমেজ। এরপর ওই ইমেজগুলো একজন চিকিৎসক বন্ধুকে দেখাতেই জসমিনের পর্দা ফাঁস হয়ে যায়।
পুলিশি তদন্তে জানা যায়, অন্য একটি সিম কার্ড থেকে ওই মেসেজ এবং ইমেজগুলো বিজয়কে পাঠিয়েছিলেন জসমিন। এমনকি অনলাইনে ভুয়া অ্যাকাউন্ট খুলে সেখান থেকে ভুয়া চিকিৎসকদের নামে বিজয়কে মেসেজ করতেন তিনি।
এরপর জসমিনকে গ্রেফতার করে পুলিশ। অবশেষে দীর্ঘ শুনানির পর নিজের দোষ স্বীকার করেন তিনি। তার কাণ্ডকারখানা দেখে বিচারক জুডিথ হিউজের মন্তব্য, “ক্যানসারের নাম করে সকলের কাছ থেকে টাকা আদায় করা… এটা তো ভয়ঙ্কর একটা অপরাধ!”