November 22, 2024     Select Language
৭কাহন Editor Choice Bengali KT Popular

৭২ বছর পর স্ত্রীর সঙ্গে দেখা!

[kodex_post_like_buttons]

কলকাতা টাইমস :

তারাপদ রায়ের একটা কবিতা আছে। কবিতাটা এরকম, ‘অনেকদিন দেখা হবে না। তারপর একদিন দেখা হবে। দুজনেই দুজনকে বলবো অনেকদিন দেখা হয়নি। এইভাবে যাবে দিনের পর দিন, বৎসরের পর বৎসর। তারপর একদিন হয়তো জানা যাবে, হয়তো জানা যাবে না যে, তোমার সঙ্গে আমার অথবা আমার সঙ্গে তোমার আর দেখা হবে না।’

সংবাদ দেখে সবার আগে এই কবিতাটার কথাই মনে পড়ল। সময় নাকি মানুষকে দূরে ঠেলে দেয়। সময়ের ফেরে কে কীভাবে যেন চোখের সামনে থেকে হারিয়ে যায় বলা মুশকিল। কাছের মানুষের এমন দূরে হারিয়ে যাওয়া নিয়ে কবি তারাপদ রায়ের কবিতাটা খুব যথার্থ। কবিতার মতোই একটা ঘটনা ঘটেছে ভারতের এক বৃদ্ধ দম্পতির। বিবাহ বিচ্ছেদের প্রায় ৭২ বছর পর যে দেখা হয়েছে দু’জনের। আর দেখা হবে কি-না তা তারা নিজেরাও জানেন না।

১৯৪৬ সালের কথা। তখনো দেশভাগ হয়নি। ভারতের কেরালার কাভুম্বায়ি গ্রামে উত্তাল কৃষক আন্দোলনের আগুনে ছারখার হয়ে গিয়েছিল নারায়ণন-সারদা দম্পতির সংসার জীবন। এত বছর পর প্রথম স্ত্রী সারদার সঙ্গে দেখা হলো ৯৩ বছর বয়সী নারায়ণনের। অভিমানে বাকরুদ্ধ হয়ে থাকলেন ৮৯ তে পা দেয়া সারদা। দুজনেই বললেন, কারও ওপরেই কোনো রাগ নেই তাদের।

সেই সময় পুলিশ এসে ভেঙে দিয়েছিল তাদের দু’জনের দাম্পত্য জীবন, তাদের সংসার। আন্দোলনে নেতৃত্ব দেয়ার অপরাধে নারায়ণন আর তার বাবা থালিয়ান রমন নাম্বিয়ারকে ধরে নিয়ে গিয়েছিল পুলিশ। গ্রেফতারের পর দু’জনকেই কারাগারে পাঠায় তারা। তার ঠিক এক বছর আগে ১৩ বছরের সারদার সঙ্গে বিয়ে হয়েছিল সতেরো বছর বয়সী নারায়ণনের।

ভারতের গণমাধ্যমগুলোর প্রতিবেদন অনুযায়ী, নারায়ণন আর সারদার এই প্রেমগাথা গল্প হলেও সত্যি। দুজনেরই যৌবন ফুরিয়েছে। দুজনের মাথার চুল পাকা, চামড়ায় ভাঁজ, মুখে বৃদ্ধ বটবৃক্ষের ঝুরি মূলের মতো অজস্র রেখা। দৃষ্টিশক্তিও বিশেষ নেই। তবুও যখন প্রেয়সীর সঙ্গে দেখা হলো, নারায়ণন নামবিয়ার একপলকেই চিনতে পারলেন সারদা দেবীকে। দু’জনের কথাও হল। যাওয়ার আগে সারদাকে নারায়ণন বলে এলেন, ‘আজ আমি চলি।’ প্রত্যুত্তরে নিস্পৃহ সারদা স্রেফ তাকিয়ে রইলেন মেঝের দিকে। এখানেই গল্পটা শেষ!

আর এর অতীতটা দেখতে হলে ফিরে যেতে হবে প্রাক স্বাধীনতা পর্বে। ব্রিটিশ শাসনাধীন ভারতে নারায়ণন ছিলেন একজন বিপ্লবী। কেরলের কাভুম্বাইয়ে কৃষক আন্দোলনের অন্যতম সেনানি ছিলেন তিনি। সেই সময় তাদের যুদ্ধ ছিল মূলত সামন্তবাদীদের বিরুদ্ধে। সেসময়ের অর্থনৈতিক, রাজনৈতিক পরিকাঠামো-তে দাঁড়িয়ে যে ধরনের প্রতিবাদ আন্দোলনের প্রয়োজন ছিল, সেই তাগিদেই বিপ্লবী হয়ে ওঠেন নারায়ণন।

ভূমিদস্যুদের অকথ্য অত্যাচার ও পুলিশি বর্বরতার বিরুদ্ধে সংগঠিত করেন লড়াই আন্দোলন। সেই সময়ই মালাবার স্পেশাল পুলিশের হাতে গ্রেফতার হন তিনি। এরপর দীর্ঘ ৮ বছর কন্নুরের কেন্দ্রীয় সংশোধনাগারেই বন্দী ছিলেন তিনি। মুক্তি পান ১৯৫৪ সালে। কারাগার থেকে বেরিয়ে এসে দেখেন তার স্ত্রীর অন্যত্র বিয়ে হয়ে গেছে। পরে তিনিও দ্বিতীয় বিয়ে করেন। সেই পক্ষের ৭ সন্তানও রয়েছে তার।

নারায়ণন ও সারদার দ্বিতীয় পক্ষের সন্তানরাই মূলত নিজেদের মধ্যে আলোচনা করে দু’জনের সাক্ষাতের বন্দোবস্ত করেন। এই ডিসেম্বরেই কন্নুর জেলার ভার্গাবন শহরে সারদার বাড়িতে এসে তার সঙ্গে সাক্ষাৎ করেন নারায়ণন। এই গোটা গল্পই চিত্রনাট্য করে তুলে ধরেছেন নারায়ণনের ভাইঝি সান্তা। কাকার জীবনের ওপর একটি উপন্যাসও লিখেছেন তিনি। তাদের চোখে এই দুইয়ের ‘মিলন’ সুখস্মৃতি হয়ে থাকবে আজীবন।

Related Posts

Leave a Reply