কৃষ্ণ – অর্জুন কথা ১
।। রজত পাল ।।
কুরুক্ষেত্রে স্বজন পরিবৃত অর্জুন বললেন,
” এতান্ন হন্তুমিচ্ছামি …কিং নু মহীকৃতে । 1/34
– যদি এরা আমায় মেরেও ফেলে তবুও স্বর্গ রাজ্য পেলেও এদের হত্যা করতে চাই না ।
এসব বলে তিনি ধনুর্বাণ ত্যাগ করে বিষন্ন মনে রথের উপর বসে পড়লেন (1/46) ।
এরপর কৃষ্ণ সাংখ্য দর্শন থেকে শুরু করে 17 অধ্যায় ধরে নানান উপদেশ দিয়ে শেষ করলেন এই বলে যে,
“যদহঙ্কারমাশ্রিত্য…..প্রকৃতিস্ত্বাং নিযোক্ষ্যতি । 18/59
– তুমি অহঙ্কার কে আশ্রয় করে ‘যুদ্ধ করব না’ মনে করছ, এ ভাবনা মিথ্যা। তোমার প্রকৃতিই তোমাকে যুদ্ধে নিযুক্ত করবে । এবং
“স্বভাবজেন কৌন্তেয় …করিষ্যবশোপি তৎ । 18/60
– মোহবশত যা করতে চাইছ না, তোমার স্বভাবজাত কর্ম প্রবৃত্তি দ্বারা সেটাই তুমি করবে ।
এটাই যুদ্ধের আগে কৃষ্ণের শেষ কথা । কারণ এর পরে আর কথা কিছু নেই । কৃষ্ণ বলছেন, সব ছেড়ে তাকে শরণ নিতে । অর্থাৎ তিনি যা বলছেন তা-ই শুনতে । তিনি রক্ষা করবেন । ঈশ্বর জ্ঞান না করে সাধারনভাবে দেখলেও আমরা বুঝতে পারব শক্তিশালী মানুষের কাছে সাধারন মানুষ ভীড় করে এই আশ্বাস পায় বলেই।
যদি প্রবৃত্তি দ্বারা আমরা পরিচালিত হই তাহলে 18 অধ্যায়ের ধরে এতো তত্ত্ব কথা বলার কি প্রয়োজন ছিল । অর্থাৎ বোঝা গেল হাজার উপদেশেও কিছু হয় না । যে যা করার তাই করে । সকলে চায় support, protection. যে পরামর্শ আমার পছন্দ, অর্থাৎ আমার প্রকৃতির সাথে মানানসই আমি শুধু সেটাই গ্রহণ করব । এরপর যে আমার সারথি হবে, আমাকে রক্ষা করবে সে-ই হল আমার সখা, আমার সাথী।
আজীবন যাদবদের অস্তিত্ব রক্ষার যে লড়াই কৃষ্ণ লড়ে গেলেন কই পান্ডবরা তো কখনই গেলেন না কৃষ্ণের সহায়তা করতে ।( কেবল কৃষ্ণের দেহত্যাগের পরে বৃদ্ধ অর্জুন গেছিলেন) ।
কৃষ্ণ কখনই সহায়তা চাননি । তাই তার পাশে কখনই নেই পান্ডবরা। নাকি self-established হলে বা সক্ষম মানুষের প্রয়োজনের কথা কারোই মনে পরে না ।
মহাভারতের অন্তিম পর্বে বৃদ্ধ কৃষ্ণ তাই নারদ-কে দুঃখ করে বলছেন, সকলের জন্য এতো করেও তিনি স্বজনের ভালোবাসা পাননি ।
তাকে আমরা ভগবান বানিয়েছি । তার মনকে কখনই বোঝার চেষ্টা করিনি । সেই অভিমানেই (এবং জ্ঞাতি বিরোধ এড়াতে ) কৃষ্ণ কুরুক্ষেত্রে যুদ্ধে সরাসরি অংশ নিলেন না ?
ক্রমশঃ