ইঁদুর মারতে ‘গণযুদ্ধ’ নিউজিল্যান্ডে !
আগামী ৩৫ বছরের মধ্যে বাইরে থেকে আসা শিকারি প্রাণীমুক্ত দেশে পরিণত করার একটি সাহসী পরিকল্পনার অংশ এ গণযুদ্ধ।
দুই হাজারের বেশি প্রজাতির প্রাণী তাদের (বাইরে থেকে আসা শিকারি প্রাণী) শিকারের ঝুঁকিতে থাকায় ওই ক্ষুদে প্রাণীকে অবাঞ্ছিত অপরাধী হিসেবে শনাক্ত করা হয়েছে। এর আগে ফেরেটস, ওয়েসল্স, অন্য প্রজাতির ইঁদুর এবং হেডগেহগস্ নামক বাইরে থেকে আসা শিকারি প্রাণীগুলোকে নিয়ন্ত্রণে আনতে পেরেছিল দেশটির সরকার।
‘আমরা শিকারিমুক্ত নিউজিল্যান্ড-২০৫০’ লক্ষ্যমাত্রা ঘোষণা করেছি। কারণ, আমাদের কোনো উপায় নেই’- বলেন নিউজিল্যান্ডের সংরক্ষণমন্ত্রী ম্যাগি ব্যারি।
‘আমরা যদি দেরি করি, সমস্যার আরও অবনতি হবে’।
‘ইঁদুর জাতীয় প্রাণী পোসাম বিশেষভাবে এ গুরুতর অবস্থার সৃষ্টি করছে। তারা গবাদিপশু এবং হরিণের মধ্যে যক্ষ্মা ছড়িয়ে দেয়’।
ঝগড়াটে ও আক্রমণাত্মক প্রাণী বেজি তার সুইয়ের মতো ধারালো দাঁত দিয়ে অন্য প্রাণীদের নির্বিচারে হত্যা করে।
ড. ইলেইন মারফি ও তার দল এ ধরনের কীট ধরা ও ধ্বংস করতে যথাসম্ভব মানবিক নতুন কৌশল নিয়ে কাজ করছেন। গবেষণার জন্য লিঙ্কন বিশ্ববিদ্যালয়ে পাঁচ একর জমিতে শিকারি প্রাণীগুলোর জন্য সুরক্ষিত কারাগার স্থাপন করা হয়েছে। এ গবেষণাগারে তাদের ছেড়ে দিয়ে আচরণ বিশ্লেষণ ও উপযোগী বিষটোপ তৈরির চেষ্টা চলছে।ড. মারফি প্রমাণ করেছেন, কিভাবে ইঁদুর ও বেজিকে টানেলের মতো বাক্সে একটি ওজন-ট্রিগার স্প্রে’র দিকে আকৃষ্ট করে আটকে ফেলা সম্ভব। সেটি দিয়ে তাদের পেটের মধ্যে বিষ ঢুকিয়ে নির্মূল করা সম্ভব।
আরো প্রত্যন্ত অঞ্চলে আকাশ থেকে এ ধরনের বিষ স্প্রে করা এসব প্রাণী উচ্ছেদ প্রক্রিয়ায় ভূমিকা পালন করবে। কিন্তু গবেষকরা বলছেন, অন্যান্য বৈজ্ঞানিক সমাধানেরও প্রয়োজন হবে।
নিউজিল্যান্ড এক দশক ধরে আক্রমণকারী লোমযুক্ত বাইরের প্রাণীদের মোকাবেলা করছে। এখন সময় হয়েছে অদেখা লাখ লাখ ক্ষতিকর কীটের বিরুদ্ধে যুদ্ধের।
ওয়েলিংটন সরকার একটি নতুন কোম্পানিকে শিকারিমুক্ত উচ্চাভিলাষ দেখভাল করতে আর্থিক সহায়তা করছে। এ কমিউনিটি গ্রুপের কাজ দেশব্যাপী নির্মূল অভিযানে অপরিহার্য হবে।
দ্বীপ শহর দক্ষিণ নেলসনের ঘেরটি নিউজিল্যান্ডের সবচেয়ে বড় শিকারিমুক্ত করার গবেষণাগারগুলোর অন্যতম। সাড়ে ১৪ কিলোমিটার বেড়ায় আবদ্ধ জঙ্গলঘেরা পাহাড়ি এলাকার মধ্যে ৭শ’ হেক্টর জমিতে সেখানে পরীক্ষা-নিরীক্ষা চলছে। পরবর্তী শীতকালে এ দুর্গের ভেতরে আকাশ থেকে ব্রডিফাকউম বিষ ঝরিয়ে কীটের বিরুদ্ধে সর্বাত্মক আক্রমণ শুরু হবে।
ওয়াইমারামা নদীর অভয়ারণ্যের প্রধান ড. ডেভিড বাটলার বলেন, ‘কেয়া, কাকাপো ও কিউইয়ের মতো কিংবদন্তির বিভিন্ন প্রজাতির পাখি এখানে উড়তো। শিকারি কীটগুলো তাদের প্রায় ধ্বংস করে ফেলেছে। আমরা সেগুলোকে নির্মূল ও পাখিদের ফিরিয়ে আনবো’।
সংরক্ষণবাদীরা নিউজিল্যান্ডের শিকারি প্রাণীমুক্ত করার এ পরিকল্পনা দুঃসাহসী বলে মনে করছেন। ওয়াইমারামা’র জিএম হাডসন ডড একে প্রায় অর্ধ শতাব্দী আগের অ্যাপোলো ১১ অভিযানের সঙ্গে তুলনা করেন।
নিউজিল্যান্ড যুক্তরাজ্যের অনুরূপ ২ লাখ ৬৮ হাজার বর্গকিলোমিটার আয়তনের দেশ। এ পর্যন্ত দেশটির ১৫০টি অদূরবর্তী দ্বীপ বিজ্ঞানী ও স্বেচ্ছাসেবকদের নিয়ে বিনামূল্যে শিকারি প্রাণী নির্মূল কর্মসূচিতে যোগ দিয়েছে।