May 2, 2024     Select Language
Editor Choice Bengali KT Popular শিল্প ও সাহিত্য

৭৯. ঝারখন্ড আন্দোলন (পর্ব ৩)

[kodex_post_like_buttons]

এ এক উত্তাল সময়। ৩২ বছর পার হয়ে গেছে দেশ স্বাধীন হয়েছে। সেই স্বাধীন দেশের বঞ্চিত, অবহেলিত এক শ্রেণীর আদিবাসী মানুষ গোপনে তাঁদের অস্ত্রে শান দিতে শুরু করলো। রাষ্ট্রের কাছ থেকে কড়ায় গন্ডায় বুঝে নিতে চাইলো তাদের হিসেবে নিকেশ। শুরু হলো ‘ঝাড়খন্ড মুভমেন্ট’। গোপনে সেই আন্দোলনকে সমর্থন জানালো শহুরে শিক্ষিত কিছু মানুষ। বাদ গেলো না কলকাতাও। সেই আন্দোলনের একটা অংশ খুব কাছ থেকে দেখে ফেলে তখনকার ‘অ-সাংবাদিক’ সৌগত রায়বর্মন। শুরু হল নতুন সিরিজ আই উইটনেস 

তারপর সাইকেল সাইকেল করে ছুট আর ছুট। জঙ্গল, টিলা, ছোট নদী, নুড়ি আর পাথর ডিঙিয়ে কখনো শিলদা, কখনো লালজল, কখনো বেলপাহাড়ি, অবশেযে নেতাই, বিনপুর তারপর লালগড়। এ কদিনেই পুড়ে লাল হয়ে গেছি। দিনে প্রবল তাপ, সূর্য ডুবলেই এক ঝলক ঠান্ডা হাওয়া কোথা থেকে এসে যেন পোড়া ক্ষতে বার্নল লাগিয়ে দিত। পাতকুয়োর শীতল জলে স্নান করে, তেলেভাজা মুড়ির সঙ্গে চলত আমাদের সান্ধ্য আড্ডা। মাঝে মাঝে ক্লান্তিনাশক টাটকা মহুয়া। একেবারে আগমার্কা শুড়িবাড়ির স্পেশাল ব্রান্ড।
আজ থেকে ৪০ বছর আগে লালগড় ছিল জঙ্গল ঘেরা একটা মিস্টি গ্রাম। ওখানে একটি পরিত্যক্ত বাড়িতে রাত কাটিয়ে ভোর রাতে রওনা হলাম জঙ্গলের দিকে।ভোরের আলো সদ্য ফুটেছে। শাল, মহুয়ার ফাঁক-ফোকর দিয়ে সোনা রঙ আলো চোখে বিধছে।
যামিনীর পিছু পিছু একটা ফাঁকা জায়গায় এসে দাঁড়ালাম। যামিনী আমার দিকে তাকিয়ে জিজ্ঞেশ করল, তুমি মিছিল চাইছিলে না! জঙ্গলের প্রকৃত ভূমিপূত্ররা জঙ্গলেরই মিছিল করুক। তুমি যত ইচ্ছে ছবি তোলো। তবে পুলিশ ঘিরে নিতে পারে, ভয় পেও না।
আমার গা শিউরে উঠল উত্তেজনায়। স্বপ্নের মিছিল কি সত্যিই দেখা যাবে? পোড়া সবুজের মাঝখানে সড়কির শানিত ফলা আর কালো কালো শরীরের না খেতে পাওয়া পেশী শক্তির বিকাশ কি সত্যিই সফল হবে? ছবি হয়েই থাকবে না তো?
ধীরে ধিরে সময় নির্দিষ্ট গতিতেই এগিয়ে চলল।
মানুয আসছে আর আসছে। মাথায় সবুজ ফেট্টি। প্রতি দলে শ’খানেক মানুয। সঙ্গে জয়ঢাক, শিংগা, ধামসা, মাদল। সূর্য মধ্য গগনে। সমস্ত জঙ্গল যেন ক্রোধে ফেটে পড়তে চাইছে। ক্যামেরার চারটে ফ্রেমের মধ্যে এতবড় শক্তিকে কি বাধা যায়? যায় না। ক্যামেরার স্পেস বড্ড কম। জীবন অনেক বড়। ছবি বড্ড ছোট।
এই কভারেজ ছবি সহ ছাপা হয়েছিল ততকালীন “পরিবর্তন” পত্রিকায়। কলকাতার কাগজে প্রথম ঝাড়খন্ড আন্দোলন নিয়ে বৃস্তিত প্রতিবেদন। সোমনাথ মূল প্রতিবেদক, আমার অভিজ্ঞতা ও ছবি।
ফিরে আসার সময় যামিনী আমার হাতে প্রস্তাবিত ঝাড়খন্ড রাজ্যের মানচিত্রের কপি তুলে দিয়েছিল। আজ সেই মানচিত্র দেখলে বোঝা যাবে কিষানজীদের “রেড করিডোর” এর মূল কোথায় নিহীত রয়েছে। ঝাড়খন্ড আন্দোলনের লং মার্চ যে পথে হওয়ার কথা ছিল সেটাই আজকের “মাওবাদী পথ”।
বামফ্রন্টের দীর্ঘ শাসন এই সত্যটাই বুঝতে পারল না। দরকার ছিল জঙ্গলমহলের ব্যাপক উন্নয়ন। কিষানজীরা বুঝেছিলেন। আজ অনেক রক্ত বইবার পর, যার জন্য মূলত দায়ি বাম সরকারের উদাসীনতা। ক্ষমতায় আসার পর মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়ও এই সহজ সত্যটা বুঝেছিলেন। তাই এত উন্নয়ণ। তবে যে উন্নয়ণ নিয়ে এত গর্ব তার কিছুটা ভাগ অবশ্যই দেওয়া উচিত ঝাড়খন্ডিদের এবং মাওবাদীদের।
ঝাড়খন্ড নামের একট রাজ্য হয়েছে বটে, কিন্তু তাতে কি স্বপ্ন পূরণ হয়েছে? আদিবাসীদের হাতে কি তাদের জন্মগত অধীকার ফিরে এসেছে? হয়নি। অনেক কিছুই তো হয়নি, যেমন ফ্রেঞ্চ রেভোলিউশন, প্যারি কমিউন, রুশ বিপ্লব, চিনের সাংস্কৃতিক বিপ্লব, ভারতে কৃযি বিপ্লব। হয়নি। হয়তো হবেও না। কিন্তু শত ফুল বিকসিত হোক। বন্ধ হোক পঁচা রাজনীতির পাঁকে ভরা প্যাচ-পয়জার।নীতি বেচা কেনা।

আসছে চম্বল দর্শন 

Related Posts

Leave a Reply