চোখে চোখ রেখে বেশি সময় সম্ভব নয়!
কলকাতা টাইমস :
কথা না বলে দুইজন মানুষ পরস্পরের চোখে চোখ রেখে অনেকক্ষণই থাকতে পারেন। কিন্তু কথা বলতে গেলেই তা অসম্ভব হয়ে দাঁড়ায়।
চোখে চোখ রেখে কথা বলা- এই বাক্যবন্ধটা ঔদ্ধত্যের প্রসঙ্গে ব্যবহৃত হলেও একথা আমরা অনেকেই জানি, কারোর চোখে চোখ রেখে বেশিক্ষণ কথা বলা কিছুতেই সম্ভব নয়। কিছুক্ষণ পরে উভয়পক্ষকেই চোখ সরিয়ে নিতে হয়।
ঠিক কেন ঘটে এমনটা, সন্ধান করছিলেন জাপানের একদল স্নায়ুবিজ্ঞানী। তাদের নিরলস গবেষণাতেই উঠে আসে রহস্যের সমাধান। স্নায়ুবিজ্ঞানী কাজিমুরা ও নোমুরার নেতৃত্বে ওই গবেষকদল ২৬ জন মানুষকে কম্পিউটার-প্রসূত এক মুখের সামনে বসিয়ে একটি গেম খেলতে বলেন। গেমটির চরিত্র অনেকটা শব্দের অন্তাক্ষরীর মতো। দেখা যায়, কম্পিউটার স্ক্রিনে ফুটে ওঠা মুখটির চোখের সঙ্গে ওই ২৬ জনের চোখের সংযোগ তখনই ভেঙে যাচ্ছে, যখন তারা মনের মধ্যে শব্দ সন্ধান করছিলেন।
নিরীক্ষা থেকে বিজ্ঞানীরা সিদ্ধান্তে পৌঁছান যে, কথা না বলে দুইজন মানুষ পরস্পরের চোখে চোখ রেখে অনেকক্ষণই থাকতে পারেন। কিন্তু কথা বলতে গেলেই তা অসম্ভব হয়ে দাঁড়ায়। আসলে কথোপকথনের সময়ে আমরা প্রয়োজনীয় শব্দকে খুঁজি। এই খোঁজটা চলে মনের ভিতরে। আর একসঙ্গে এই শব্দ খোঁজা ও চোখে চোখ রাখা চালিয়ে যাওয়া সম্ভব নয়। সে কারণে ক্ষণিকের জন্য হলেও চোখের মণি সরে যায়। আই কন্ট্যাক্ট নষ্ট হয়।
বিজ্ঞানীরা আরো জানিয়েছেন, ক্রিয়াপদ খোঁজার সময়েই এই সংযোগ বেশি নষ্ট হয়। চেতনতত্ত্ব অনুসারে, বিশেষ্য বা বিশেষণ খোঁজার চাইতে ক্রিয়াপদ খুঁজতে আমরা অপেক্ষাকৃত বেশি সময় নেই।
‘কগনিশন’ নামক গবেষণামূলক জার্নালে কাজিমুরা ও নোমুরার নিবন্ধ প্রকাশিত হয়েছে। তারা এই নিবন্ধে দেখিয়েছেন, কোনো নির্দিষ্ট বিষয়ে কথোপকথনে মগ্ন দুই ব্যক্তি আসলে একই শব্দভাণ্ডারকে ব্যবহার করেন। ফলে শব্দচয়নে সমস্যা দেখা দেয়। একটি মার্কিন বিজ্ঞান পত্রিকা জানাচ্ছে, যে সব সংস্কৃতিতে চোখে চোখ রাখার ব্যাপরটা তেমন নেই, সেখানে কোনও নির্দিষ্ট বিষয়ের উপরে কথোপকথন অনেক গভীরে প্রবেশ করতে পারে।