বিশ্বাস করবেন যে পুরুষাঙ্গ নাকি সংকুচিত বা গায়েব হতে পারে !
কলকাতা টাইমস :
১৯৬৭ সালের শরতে এক ঘটনা ঘটল সিঙ্গাপুরে। শত শত কিশোর-তরুণ ছুটলেন হাসপাতালের জরুরি বিভাগে। হন্তদন্ত হয়ে তারা যৌনাঙ্গ বাঁচাতে ছুটছেন হাসপাতালে। ওটা নাকি কুঁকড়ে যাচ্ছে। অনেকের কাছে মনে হচ্ছে, তা ভেতরের দিকে ঢুকে যাচ্ছে। অনেকের আবার অদ্ভুতভাবে সংকুচিত হচ্ছে। আর এমনটা হলে তারা নির্ঘাত মারা পড়বেন। আসলে কি ঘটেছিল?
এমন ঘটনা নতুন নয়। ২০০০ সালের প্রথম দিকে নাইজেরিয়া এবং বেনিনে কয়েকজন মানুষ প্রাণ হারান। তারা নাকি প্রতিশোধ নিতে জাদু-টোনার মাধ্যমে শত্রুদের যৌনাঙ্গ গায়েব করে দিয়েছিলেন! দক্ষিণ-পূর্ব এশিয়ায় এই রহস্যময় বিষয়টি ‘কোরো’ নামে পরিচিত।
‘দ্য জিওগ্রাফি অব ম্যাডনেস’-এ সাংবাদিক ফ্রাঙ্ক বুরেস তুলে ধরেছেন এ ধরনের ‘কালচারাল সিনড্রোমের’ কথা। এসব ঘটনা সংস্কৃতি ও বিশ্বাসের চূড়ান্ত নমুনা। এ ক্ষেত্রে বেনিনিজ বা বলিভিয়ান বা ব্রিটিশ, আপনি যাই হোন না কেন বিশ্বাস আপনার ওপর ভর করবেই।
মনের দৃঢ় বিশ্বাস সহজেই দেহের ওপর ছড়িয়ে পড়ে। উদাহরণ হিসাবে বলা যায় এক গবেষণার কথা। তাতে বলা হয়, যে নারীরা বিশ্বাস করেন যে তারা হৃদরোগের ঝুঁকিতে রয়েছে, তাদের হার্ট অ্যাটাকে মৃত্যুর ঝুঁকি ৩.৬ শতাংশ বেড়ে যায়। ১৯৯২ সালে ফ্রামিংহাম হার্ট স্টাডি দীর্ঘকাল গবেষণা করে এ তথ্য প্রদান করে। মস্তিষ্কের মতো জটিল অংশ নানা অদ্ভুত ঘটনা ঘটিয়ে দেয়। যৌনাঙ্গ সংকুচিত বা হারিয়ে যাচ্ছে- এ ধরনের ভয় সৃষ্টি করে ‘বায়ো-অ্যাটেনশনাল লুপিং’। আপনি কিছু নিয়ে ভয় করছেন তো সংশ্লিষ্ট লক্ষণ খুঁজতে শুরু করেছেন দেহে। আর স্বাভাবিক বিষয়কেও তখন লক্ষণ বলে মনে হবে। এতে ভয় আরো বেড়ে যায়। ‘কোরো’ বিষয়ক প্রতিটা ঘটনায় দেখা গেছে, ভুক্তভোগী আগে থেকেই জানতেন। এটা নতুন কিছু নয়। আসলে তার মনে আগে থেকেই এ ভয় লুকিয়ে ছিল। লিঙ্গ ক্রমেই কুঞ্চিত হচ্ছে বা হারিয়ে যাচ্ছে, এমনটা মাথায় রেখে লক্ষণ খুঁজতে থাকলে মনে হবে আসলেই তা ঘটছে। একই ঘটনা নারীদের স্তনের ক্ষেত্রেও ঘটে।
এ ধরনের পরিস্থিতিতে জ্ঞানী মানুষের পক্ষেও বিশ্বাস করা কঠিন যে, ঘটনাটি আসলে মিথ্যা। কারণ বিশ্বাস আগেই মনে গেঁথে গেছে। ‘কোরো’র ক্ষেত্রে কোনো পুরুষই তার লিঙ্গ হারাননি। কিন্তু বিশ্বাস করছিলেন যে এটা হারিয়ে যাবে। তাই সংকোচনের একটা অনুভূতি তাদের মনে ছড়িয়ে যায়।
মানুষের দেহ ছেয়ে থাকে বিশ্বাসের এক পাতলা আবরণে। বিষয়টা দৃশ্যমান নয়। তাই যেকোনো বিষয়ে বিশ্বাস স্থাপন করামাত্রই তা ক্রমেই শক্তিশালী হয়ে উঠতে থাকে। তখন আপনি তা সন্দেহাতীতভাবে বিশ্বাস করতে বাধ্য।