ফটো (গল্প)
[kodex_post_like_buttons]
অমৃতাভ বন্দ্যোপাধ্যায়
অনেকদিন আগে আমি যে ঘরে ভাড়া থাকতাম,সে ঘরের নোংরা দেয়ালে আমার একটা দামী ফ্রেমে বাঁধাই করা ফটো ছিল।
ফটোটাতে আমার বয়স ছিল বছর কুড়ি। গাল ভর্তি দাড়ি গোঁফ। চুল বেশ বড় বড়।
সম্ভবত শান্তিনিকেতনে
তোলা। পার্ট ওয়ান পরীক্ষা দিয়ে দু দিনের জন্য দল বেধে বেড়াতে যেয়ে,কেকাই ফটোটা তুলেছিলো ওর ক্লিক্ থ্রি তে। ফিরে এসে দিন দশেকের মধ্যে কেকা ফটোটা বাঁধিয়ে উপহারের কাগজে মুড়ে এনেছিলো হাওড়া স্টেশনে। তারপর ও সাউথ ইস্টার্নের ট্রেন ধরে কোলাঘাট,আর আমি মেইন লাইনের ট্রেনে চন্দননগর।
বেড়াতে যেয়ে আমি কেকাকে একটা শান্তিনিকেতনী চামড়ার ব্যগ কিনে দিয়েছিলাম বলে, ফটোটা কেকার রিটার্ন গিফট্ই ছিল বোধহয়!
তা ফটো দেবার দিন কেকা কে হাওড়া স্টশনে আমিই চা প্যটিস খাইয়েছিলাম. মনে আছে।
ওর খুব খিদেও পেয়েছিলো। এগরোল না যেন চাউ ,কি একটা খাওয়াতে বলেছিল। আমার পয়সা ছিল না, না সময় ছিল না আজ আর মনে নেই,তাই প্যাটিস দিয়েই সেরে ছিলাম পাট।
এ নিয়ে দুজনের একটু কথা কাটাকাটিও হয়ে ছিল।
আর সে দিন থেকেই কেকা আমার সাথে আর যোগাযোগ করে নি।আমিও না।
অথচ ওর দেওয়া ফটোটা রয়ে গেল আমার কাছে!
বাঁধানো ফটোর পিছনের ম্যাসোনাইট বোর্ডে কেকার নাম লেখা ছিল,তারিখ সহ। ঝামেলা কমাতে ওই নামের ওপর কালি বুলিয়ে লেপ্টে ছিলাম আমিই। আমার বিয়ের ঠিক আগে আগে। অত দামী ফ্রেম, অত যত্ন যে কেকা ফটোটার পেছনে কেন করেছিল কে জানে?
হয়তো ভেবেছিল ওই ফ্রেমেই ও আমার পাশটিতে ঢুকে পড়বে!
তা সে ফটোই তো আর নেই।
বার বার বাসা বদলের ছুতোয় সে ফটোটা কোথায় যে গেছে –অনেক হারানো জিনিসের মত তা আমার মনেও নেই,
খুঁজিও নি ।
বরং মালতীর দাবী মত আমিই খরচা করে বিয়ের পরে পরে দ্বিরাগমনে যেয়ে আমার মালতীর যে ফটোটা তুলিয়ে ছিলাম। সেটাই ফ্রেম বাঁধাই করা হয়েছে।
ও ফটোতে আমার গালে দাড়ি নেই।ক্লিন শেভড্ ! চুল কমে কপালে চওড়া টাক।
গায়ে টাই কোট।
মালতীর মাথায় টিকলি, ঘোমটা।
ফটোটা সাদা কালো বলে কেমন যেন রঙ চটা।
বহুদিনের সংসারী দেয়ালের মতই বিবর্ণ।
ওই ফটোটার দিকে চাইলেই আমার কেকার দেওয়া হারিয়ে যাওয়া ফটোটার কথাই মনে পড়ে।
মালতী জানে না।
টেরও পায় না।
আমিও তো টের পাই না মালতীও কি আমার মতই কোনো হারিয়ে যাওয়া ফটো খোঁজে দেয়ালে?