কি করে গরু ক্যান্সার থেকে বাচাল
কলকাতা টাইমস :
চার বছর আগে অমিত বৈদকে জীবনের সময় বেঁধে দিয়েছিলেন চিকিৎসক। টার্মিনাল স্টমাক ক্যান্সারে আক্রান্ত আর মাত্র ৬ মাস বাঁচবেন বলে জানান চিকিৎসকরা। লস অ্যাঞ্জেলসে বিনোদন ইন্ডাস্ট্রির উচ্চপদে কাজ করেন। আর মাত্র কয়েকদিন বেঁচে থাকার সময় হাতে নিয়ে ভারতে ফিরে এলেন। আর এসেই আবিষ্কার করলেন কাউ থেরাপি। গরুর মূত্র আর কাঁচা দুধ পান শুরু করলেন। এমনি টাটকা গোবরে স্নানও করতে থাকলেন। এ কাজগুলো করে সত্যি সত্যি ক্যান্সার থেকে মুক্ত হলেন অমিত। ক্যান্সার মুক্তির এই অদ্ভুত কাহিনী তুলে এনেছেন তার নতুন অটোবায়োগ্রাফি ‘গলি ক্যান্সার, হাউ এ কাউ সেভড মাই লাইফ’-এ। তার সম্পর্কে লিখেছেন ছোটবেলার বন্ধু পিয়া খান্না।
অমিত লস অ্যাঞ্জেলসে বিনোদন জগতে বেশ এগিয়েছেন ক্যারিয়ার। ইকোনমিক্সে পিএইচডি’ও করেছেন। কিন্তু ক্রমেই খবর খারাপ হতে শুরু করলো। তার বাবা মারা গেলেন বাইপাস সার্জারির সময়। মাকে নিয়ে নিউ ইয়র্ক চলে এলেন। সেখান তার ধরা পড়লো পাকস্থলীর ক্যান্সার। থমকে গেলেন অমিত। তার যত্ন নিতে থাকলেন মা। এর পর পরই ধারা পড়লো, মায়ের হয়েছে ব্রেইন টিউমার। মায়ের জন্য নিজেকে বাঁচিয়ে রাখার চেষ্টা করলেন অমিত। এক বছর পর মাও মারা গেলেন। পরীক্ষায় খবর এলো, তার পাকস্থলী ক্যান্সার ছড়িয়ে পড়েছে ফুসফুস, লিভার ও মেরুদণ্ডে। ছয় মাসের সময় বেঁধে দেওয়া হলো তাকে।
ভারতে ফিরে আসার পরিকল্পনা করলেন তিনি। তবে কেবল আত্মীয়-স্বজনদের সঙ্গে দেখা করতে নয়, বেশ কিছু দিন থাকবেন ঠিক করলেন। ভারতে অমিতের সঙ্গে দেখা হলো পিয়ার। এদিকে চলে যাবেন পিয়া। কাজেই বন্ধুর কাছ থেকে শেষ বিদায় নিলেন। কিন্তু ছয় বছর বাদে আবারো দুজনের দেখা হলো। চা খেতে খেতে অসম্ভবের গল্প শোনালেন অমিত।
সুস্থ হওয়ার যাত্রা শুরু করলেন গুজরাটের একটি গরুর হাসপাতাল থেকে। ওই হাসপাতালের দাবি তারা ক্যান্সার ভালো করতে সক্ষম। ছোট একটি গ্রামে থাকা শুরু করলেন। বিস্তর খালি মাঠ আর আনারের গাছে পরিপূর্ণ গ্রাম। অনেক ভয় আর অনিশ্চয়তা নিয়ে চিকিৎসা শুরু হলো অমিতের।
নাটকীয়ভাবে শুরু হলো তার চিকিৎসা। ওই হাসপাতালে দুই মাস থাকলেন তিনি। শুরু হলো গরুর থেরাপি। দেশি গরুর ব্যবহারে ক্যান্সারের চিকিৎসা শুরু হলো। পান করতে শুরু করলেন ‘পঞ্চগাভি (দেশি গরুর দুধ ও দুধ থেকে তৈরি ঘি, দই, মূত্র এবং গোবরের মিশ্রণ)’। গোবরে স্নান করতেন ঘণ্টা ধরে। নিউ ইয়র্কের বিলাসী পেন্টহাউজ ছেড়ে ভারতের গ্রামে এসব করতে থাকলেন অমিত।
প্রতিদিন ভোর সাড়ে ৪টায় তার দৈনন্দিন কাজ শুরু হলো। এক ঘণ্টা মেডিটেশন, ৪৫ মিনিটের ইয়োগা আর ২০ কিলোমিটার হাঁটা ছিল তার প্রতিদিনের কাজ। এসব করে জীবনটা হয়ে উঠলো গোছালো। মূলত এই গাঁয়ের মাটি আর গরুর সঙ্গেই জুড়ে গেলেন তিনি।
হাসপাতালের বেঁধে দেওয়া এসব নিয়ম দিন দিন কঠিন ও দ্রুততর হতে থাকলো। সব খাবার খেতে থাকলেন পথ্য হিসাবে। হার্বাল গাছের পাতা ও অন্যান্য উদাপান কাঁচা চিবিয়ে খেতেন। তুলসি, হলুদ বা আদা সবাই কাঁচা খেতেন।
অতীতের জাঁকজমকপূর্ণ জীবন থেকে হঠাৎ করেই যেন আদিম হয়ে গেলেন তিনি। চিকিৎসা চলাকালে দিন গড়াতে থাকলো। প্রতিবার ক্যান্সার দেখতে স্ক্যান করা হলে অবস্থা উন্নতির দিকে যাচ্ছে দেখা গেলো। এক সময় তার হাঁটা দৌড়ে পরিণত হলো। পথের প্রতিটি বাধা টপকে যেতে থাকলেন। ওই হাসপাতাল ও গ্রামের জীবন তাকে যাবতীয় প্রাচুর্য প্রদান করলো।
সুস্থ হওয়ার এই অসম্ভব কাহিনী নিয়ে বই লিখলেন তিনি। বইটি সেখানেই শেষ হয়েছে যেখান থেকে শুরু হয়েছিল। এক বছর পর আবারো দেখা হলো অমিত আর পিয়ার। ক্যান্সার থেকে ফিরে আসা বন্ধুকে পিয়া প্রশ্ন করলেন, এবার কি হবে? অমিতের জবাব অতি সাধারণ। বললেন, আমি বেঁচে গিয়েছি অপরিচিত কিছু মানুষের দয়াশীলতার কারণে। যারা আমাকে বিনা শর্তে সব দিয়েছেন। তারা ভাবেননি বিনিময়ে কি পেতে পারেন। এটা আমার দ্বিতীয় জীবন। এই জীবনে কেবল থাকবে সেবা প্রদান। এবার আমার দেওয়ার পালা।