রহস্যময় মোজাইকে ‘আলেক্সান্ডার !
টানা কয়েক বছর ধরে খননকার্য চলেছে। গবেষণা চলেছে বিস্তর। অবশেষে পুরাতত্ত্ববিদরা এক অসাধারণ ও হেঁয়ালিপূর্ণ মোজাইক আবিষ্কার করেছেন। ইসরায়েলের গুকোক অঞ্চলে খুঁজ পাওয়া গেছে রোমান আমলের এই নিদর্শন।
খ্রিষ্টপূর্ব পঞ্চম অব্দের ওই মোজাইকে একটি সভার চিত্র ফুটিয়ে তোলা হয়েছে। যে পুরুষদের ছবি আঁকা হয়েছে তারা সবাই উচ্চ পর্যায়ের মানুষ বলেই স্পষ্ট বোঝা যায়। একজন জেনারেল তার সেনাদের নির্দেশ দিচ্ছেন- এমন চিত্রই ফুটে উঠেছে সেখানে।
ওয়েস্টার্ন ক্যালিফোর্নিয়া ইউনিভার্সিটির শিল্পকলা বিষয়ক ইতিহাসবিদ কারেন ব্রিট বলেন, বাইজানটাইন শিল্পকলার প্রথম দিকে মোজাইক বা অন্যান্য উপকরণে এমন শিল্পকর্মের চর্চা চলতো। তবে এসব চিত্রকর্ম আধুনিক শিল্পীদের মাঝে বেশ বিভ্রান্তি সৃষ্টি করে।
মোজাইকের ছবিতে দেখা যাচ্ছে সেনাদের পাশাপাশি হাতিকেও অন্তর্ভুক্ত করা হয়েছে যুদ্ধে। এ ছবিতে খ্রিষ্টপূর্ব দ্বিতীয় অব্দে মাঝামাঝি জুডিয়ান লিডার ম্যাকাবিস এবং সেলুসিড সাম্রাজ্যের যুদ্ধের গল্প ফুটে উঠেছে। সেলুসিডরা আলেক্সান্ডার দ্য গ্রেটের পূর্বপুরুষ ছিলো।
খননকার্যের পরিচালক ইউনিভার্সিটি অব ক্যারোলিনার জোডি ম্যাগনেসের বিশ্বাস মোজাইকে অঙ্কিত সেনাবাহিনীর ওই জেনারেল আলেক্সন্ডার দ্য গ্রেট নিজেই। জেরুজালেমের উচ্চ পর্যায়ের ধর্মযাজকদের সঙ্গে তার আলোচনা কখনোই হয়নি। খ্রিষ্টপূর্ব ৩২৩ অব্দে আলেক্সন্ডারের মৃত্যুর পর তার খ্যাতি চারদিকে ছড়িয়ে পড়ে। তার গুরুত্ব বেড়ে যায়। কারণ পূর্বের চেহারা তিনি যেভাবে বদলে দিয়েছিলেন তার কথা চিন্তাই করা যায়া না। মানুষ তাকে চিরস্মরণীয় করে রাখতে চান। আর তখন থেকেই এসব চিত্রকর্ম ও অন্যান্য উপায়ে আলেক্সান্ডারকে তুলে ধরা হয়।
ম্যাগনেস জানান, মোজাইকটি নিচের দিক থেকে বুঝতে হবে। মাঝের অংশে দেখা যায়, একজন বয়স্ক ধর্মযাজক মাঝামাঝি অবস্থান করছেন। তার দুই পাশে অন্যান্য ধর্মযাজকরা অবস্থান করছনে। তাদের পোশাক উচ্চ পর্যায়ের মানুষের অবস্থান প্রকাশ করছে।
ওপরের ছবিতে দেখে গবেষকরা জানান, সর্বোচ্চ পর্যায়ের ধর্মযাজক দেখা করেছেন আলেক্সন্ডারের সঙ্গে। গ্রিক রাজা এবং মিলিটারি কমান্ডারের সব বৈশিষ্ট্য ফুটে রয়েছে তার মাঝে। বেগুনি রংয়ের আলখেল্লা এবং মাথার ফিতা। একে বলা হতো ডায়াডেম। এই পোশাক আলেক্সান্ডার পরতেন এবং পরে তার অনুসারীরা ব্যবহার করেন।
কোনো যুদ্ধ শুরুর আগের প্রস্তুতি দেখা যাচ্ছে এখানে। ম্যাগনেসের মতে, এই মোজাইকের চিত্র কোনো বিষয়ের সম্মতি প্রকাশ করছে। আলেক্সান্ডার তখন গ্রেট হলেও এই মোজাইক তার মহত্ব আরো বেশি তুলে ধরার চেষ্টা করছে। ইসরায়েলের ধর্মযাজকদের মাধ্যমে ঈশ্বরের মতত্বও প্রকাশ করা হচ্ছে।
ইতিহাসবিদ ব্রিট একমত পোষন করেছেন ম্যাগনেসের সঙ্গে। মোবাইকটি প্রাচীন সময়ের ইহুদিদের ইতিহাস প্রকাশ করছে।
ব্রিট এবং আরেক বিশেষজ্ঞ রানানা বোস্টান এই খননকার্য দলের সদস্য। বিগত দুই বছর ধরে প্রাচীন সাহিত্য নিয়ে কাজ করছেন। এ ধরনের চিত্রের অর্থ উদ্ধারে তারা এর আগেও কাজ করেছেন। এই মোজাইকটি রাজা অ্যান্টিয়োসাস সপ্তমের নেতৃত্বে সেলুসিডদের জেরুজালেম আক্রমণের চিত্র।
তারা দুজনই মোজাইকটি নিচের দিক থেকে পর্যবেক্ষণ করেছেন। নিচের চিত্রে সেলুসিড, ষাঁড় এবং একটি হাতির মৃত্যু দেখানো হয়েছে বর্শার আঘাতে। মাঝের অংশে দেখানো হচ্ছে যুদ্ধ চলাকালে শহরের ভেতরে কি ঘটছে। আর ওপরের ছবিতে দুই নেতাকে দেখা যাচ্ছে। বামে আছেন জন হাইরকানুস প্রথম এবং ডানে অ্যান্টিয়োসাস সপ্তম।
মোজাইকে যিনি অঙ্কন করেছেন, তিনি সম্ভবত উভয়ের পোশাক সম্পর্কে সচেতন ছিলেন। ব্রিট জুডিয়ান নেতার বিশেষ বৈশিষ্ট্য দেখিয়েছেন। তিনি একটি আঙুল ওপরের দিকে তাক করেছেন। সেখানে ঈশ্বের অনুমোদনের কথাই হয়তো বলছেন। মোজাইকের এই তিনটি অংশেই ফুটে উঠেছে এক বিশাল ইতিহাস। তবে এ নিয়ে সবে তর্ক-বিতর্কে শুরু।