এরাই হলেন আধুনিক ইচ্ছাধারী নাগিনী, জানবেন কাহিনি!
কলকাতা টাইমস :
একসময় ভারত ও বাংলাদেশে সাপ’এর গল্প নিয়ে অসংখ্য ছবি হয়েছে। এ নিয়ে গল্প-নাটকও আছে অনেক। যেখানে দেখা যেত ইচ্ছেধারী নাগিনী। যে কিনা নিজের ইচ্ছে থেকে নাগিনী থেকে মানুষ, আবার মানুষ থেকে নাগিনী হতে পারত। খুব রোমাঞ্চকর হত গল্পগুলো।
তবে এখন আর সে রকম ছবির দেখা মিলে না। কালের বিবর্তনে এসব গল্প এখন আর মানুষের মনে তেমন একটা দাগ কাটতে পারে না। তাই এ নিয়ে চলচ্চিত্র নির্মাণ হচ্ছে না। সামনে কখনো হবে বলেও মনে হচ্ছে না।
সিনেমাতে আমরা ইচ্ছেধারী নাগিনী সম্পর্কে যা জেনেছি, তা হল, ইচ্ছেধারী নাগিনী হল বিশেষ ক্ষমতাসম্পন্ন এমন একটি মেয়ে যে কারো উপর ক্ষুব্ধ হলে, বা তাদের আপনজনেরা কোনও কারণে আক্রান্ত হলেই বিষময়ী নাগিনীর রূপ ধারণ করে।
সিনেমায় এসব কাণ্ডকারখানা দেখে আপনি নিশ্চয়ই ভেবেছেন, সবটাই গাঁজাখুরি গল্প মাত্র। কিন্তু জানেন কি, বর্তমান যুগেও রয়েছেন ইচ্ছেধারী নাগিনীরা, যারা ক্ষুব্ধ হলে সাপের মতোই বিষময়ী হয়ে ওঠেন।
এখনও এমন কিছু মহিলা রয়েছেন যারা অশুভ শক্তিকে দূরে রাখতে বিষধর সাপের বিষকে ব্যবহার করেন। সাঁওতাল মেয়েদের মধ্যে নিজের সঙ্গে সাপের বিষ বয়ে বেড়ানোর রীতি প্রচলিত রয়েছে। আক্ষরিক অর্থেই সাপের বিষ সঙ্গে নিয়ে তারা ঘোরেন।
আসলে পাতা বা ডালপালা কুড়নোর প্রয়োজনেই ঘন জঙ্গলে তাদের সারাদিন ঘোরাঘুরি করতে হয়। নানা ভয়ঙ্কর জন্তু-জানোয়ারের যেমন উপদ্রব রয়েছে সেখানে, তেমনই রয়েছে উটকো লোকেদের হাতে আক্রান্ত হওয়ার ভয়ও।
সেই কারণেই তারা সঙ্গে রাখেন একটি তীক্ষ্ণমুখ শলাকা, যার মুখে লাগানো থাকে বিষাক্ত সাপের বিষ। কোনও বিপদের মুহূর্তে আক্রমণকারীর দেহে তারা বিঁধিয়ে দেন সেই বিষাক্ত শলাকা। আক্রমণকারীর পরিণাম? তীব্র জ্বালা, পঙ্গুত্ব, এমনকী মৃত্যুও।
সাঁওতাল মহিলারা এই বিশেষ প্রয়োজনের কথা ভেবেই নিজেদের সংগ্রহে রাখেন বিষধর সাপ। সেগুলির বিষ নিষ্কাষণ করে রাখা হয়। তারপর সাঁওতাল ওঝারা নিপুণ হাতে তৈরি করে নেন একটি তীক্ষ্ণমুখ শলাকা। সেগুলির ধারালো মুখটিকে চুবিয়ে নেওয়া হয় সংগৃহীত বিষের ভাণ্ডে। এমন কায়দায় তৈরি করা হয় শলাকাগুলি যাতে সেগুলি তাদের মুখে ধারণ করে রাখতে পারে এই বিষ। তারপর কোমরবন্ধ বা বালা করে তারা নিজেদের শরীরে পরে নেন এই শলাকাগুলি। বিপদে পড়লেই ব্যবহার করেন।
ইচ্ছেধারী নাগিনী বলে সত্যিই কিছু হয় কি না, সেই প্রশ্নের উত্তরে বৈজ্ঞানিকরা অবশ্যই ‘না’-ই বলবেন। কিন্তু এই সাঁওতাল মহিলারা যেন আধুনিক যুগের নাগিনীকন্যা, যারা সাপের বিষকেই ব্যবহার করেন আত্মরক্ষার কাজে।