খালি পেটেই গেল ২৯,০০০ টাকা!
কলকাতা টাইমস :
অ্যাপেনডিক্স বাদ দেওয়ার ‘প্যাকেজ’ আড়াই লক্ষ টাকা শুনে তড়িঘড়ি হাসপাতাল ছেড়েছিলেন ভারতের দেশপ্রিয় পার্কের বাসিন্দা শ্রমণা দত্ত। এখন তাঁর পরিবারেরই মাথায় হাত! কারণ, ইএম বাইপাসের ধারে আনন্দপুরের যে বেসরকারি হাসপাতালের বিল মিটিয়ে শ্রমণারা ‘ধনেপ্রাণে’ বেঁচেছিলেন, তার মধ্যেই ছিল সিটি স্ক্যানের ওই বিশাল ফি! এখন বিল খতিয়ে দেখে তাঁদের চক্ষু চড়কগাছ!
শুধুমাত্র ‘হোল অ্যাবডোমেন’ সিটি স্ক্যানের খরচ ২৯ হাজার টাকা হতে পারে কি না, তার ব্যাখ্যা আপাতদৃষ্টিতে খুঁজে পাচ্ছেন না শহরের বিশিষ্ট চিকিৎসক এবং একাধিক বেসরকারি হাসপাতালের কর্তারা।
যদিও সংশ্লিষ্ট হাসপাতালের তরফে দাবি করা হয়েছে, ‘এগজিকিউটিভ’ পরিষেবা নিলে খরচ এমনই হবে। প্রসঙ্গত, আপেন্ডিক্সের ব্যথা নিয়ে ওই হাসপাতালে ভর্তি হয়েছিলেন শ্রমণা। অস্ত্রোপচারের ‘প্যাকেজে’র বহর শুনে পরদিনই তাঁকে বাড়ি নিয়ে যায় পরিবার।
কিন্তু ওই হাসপাতাল কর্তৃপক্ষের যুক্তির সঙ্গে একমত নন মুকুন্দপুরের এক নামী বেসরকারি হাসপাতালের হৃদরোগ বিশেষজ্ঞ। তিনি বলেন, ‘‘এগজিকিউটিভ হোক আর সেভেন স্টার ফেসিলিটি হোক, এ ধরনের বিল বাড়াবাড়ি এবং বেআইনি। ব্যাপারটা খুবই আশ্চর্যের!’’
আর একটি বেসরকারি হাসপাতালের এক কর্তার কথায়, ‘‘হোল অ্যাবডোমেন সিটি স্ক্যানের বিল প্রায় ৩০ হাজার টাকা! এটাও সম্ভব? কীভাবে? জানতে খুব ইচ্ছে করছে। রোগীর পরিবার আইনি ব্যবস্থা নিক।’’ অ্যাসোসিয়েশন অফ হসপিটালস’এর (ইস্টার্ন ইন্ডিয়া) সচিব রূপক বরুয়ার মন্তব্য, ‘‘বিলটি যুক্তিগ্রাহ্য নয়। তবে সবিস্তার বিল না দেখে কিছু বলা যাবে না।’’
আনন্দপুরের ওই হাসপাতালের অ্যাসোসিয়েট জেনারেল ম্যানেজার আশিস মুখোপাধ্যায়ের অবশ্য যুক্তি, ‘‘ওই রোগী স্যুইটে ছিলেন। সে কারণেই তাঁর ক্ষেত্রে এগজিকিউটিভ পরিষেবার খরচ নেওয়া হয়েছে। তিনি সাধারণ বেডে থাকলে ওই খরচ কম হতো।’’
কিন্তু গড়পড়তা যে খরচ ৬ থেকে ৮ হাজার টাকা হওয়ার কথা, তা কীভাবে ২৯ হাজার ২৬০ টাকা হয়? আশিস বলেন, ‘‘এগজিকিউটিভ রুমে থাকলে রোগীর ইনভেস্টিগেশন খরচ বেশি নেওয়া হয়। আমাদের ট্যারিফ তেমনই। এ ক্ষেত্রে কোনও লুকোছাপা নেই। সংশ্লিষ্ট রোগী স্যুইটে ছিলেন। তাই খরচ বেশি পড়েছে।’’ ওই সুবিধা নিলে চিকিৎসকের ভিজিট-ফি, ওষুধের দাম এবং অন্য খরচও কি একলাফে বেড়ে যায়? আশিসের জবাব, ‘‘শুধুমাত্র ইনভেস্টিগেশনের খরচ বেশি নেওয়া হয়। বাকি সব খরচই সাধারণ বেডের মতো।’’
শহরের একাধিক বেসরকারি হাসপাতালের কর্তা অবশ্য এই বক্তব্যের সঙ্গে একমত নন। প্রায় সকলেরই দাবি, সিটি স্ক্যানের এই খরচের পরিমাণ ‘অস্বাভাবিক! ‘এগজিকিউটিভ’ সুবিধা দেওয়া হলেও ওই ধরনের সিটি স্ক্যানের খরচ ১০-১৫ হাজার টাকার বেশি হওয়ার কথা নয়।
অতএব? শ্রমণার কথায়, ‘‘অপারেশন হবে বলে কিছু তো খেতে দেয়নি। গলা দিয়ে কিছুই নামেনি। তবু ওই হাসপাতাল খাবারের বিল ৩৩০ টাকা নিয়েছে। আর কী? খালি পেটে গচ্চা দিয়েছি। আইনের সাহায্য নেব।’’