মাটির তলা দিয়ে পরস্পরের সঙ্গে যোগাযোগ করে গাছেরা
অতীতে গাছের জীবন আছে, এমন তথ্যই অনেকে বিশ্বাস করতেন না। এখন জানা গেল, গাছের শুধু জীবনই আছে তা নয়, এরা নিজেদের মাঝে যোগাযোগও করে। সাম্প্রতিক এক গবেষণায় বিষয়টি প্রমাণিত হয়েছে।
সুইডেনের ইউনিভার্সিটি অব এগ্রিকালচারাল সায়েন্স-এর গবেষকরা বলছেন মাটির তল দিয়ে শেকড়বাকড়ের মাধ্যমে পরস্পরের সঙ্গে রাসায়নিক উপায়ে যোগাযোগ করে গাছেরা। গবেষকরা এজন্য গাছেদের পরস্পর যোগাযোগের রাসায়নিক বিশ্লেষণও করেছেন।
গাছেদের এ যোগাযোগের গতি বেশ ধীর বলেও জানিয়েছেন গবেষকরা। এছাড়া তাদের নার্ভাস সিস্টেমেরও সন্ধান পাওয়া যায়নি।
নানা বিপদ-আপদ সম্পর্কে তথ্য পরস্পরের মাঝে বিনিময় করে গাছেরা। এজন্য শেকড়ের মাধ্যমে পরস্পরের সংযোগ ব্যবহৃত হয়। গাছেরা নিজেদের খাবার সম্পর্কে তথ্য, সতর্কতা এবং এমনকি রাসায়নিক সম্পর্কে বিপদও পরস্পরকে জানায়।
গবেষকরা বলেন, একটি গাছ যদি রাসায়নিক দিয়ে ক্ষতিগ্রস্ত হয় তাহলে তা আশপাশের গাছকে জানিয়ে দেয় এবং তারা এ ক্ষতি সম্পর্কে আগেই সতর্ক হয়ে যায়। পোকা-মাকড়ের ক্ষেত্রেও একই বিষয় প্রযোজ্য।
একটি বনে বেশ কিছু শুয়োপোকা বিস্তার লাভ করেছিল এবং বনের প্রায় সব গাছকেই ক্ষতিগ্রস্ত করেছিল। প্রায় দুই বছর পর একই গাছগুলোর পাতা শুঁয়োপোকাদের খাওয়ানোর পর দেখা যায় শুয়োপোকার শারীরিক বৃদ্ধির হার খুব কম। অথচ একই গাছের পাতা ২ বছর আগে খেয়ে তারা তুমুল গতিতে বেড়েছিল, বংশবৃদ্ধি করেছিল, অন্য গাছ আক্রমণ করেছিল।
বিষয়টি অনুসন্ধান করে গবেষকরা বলেন, প্রথমবার ক্ষতিগ্রস্ত হওয়ার পর এবার পাতায় এমন কিছু যোগ হয়েছে যা পোকাগুলোকে অসুস্থ বানিয়ে ফেলছে। এমনকি সেই বন থেকে এক মাইল দূরের সুস্থ সিটকা উইলো গাছ, যেগুলো কখনোই আক্রান্ত হয়নি তাদের পাতাও দেখা গেলো শুঁয়োপোকাদের জন্য বিষাক্ত হয়ে গেছে। সেই পাতা খেয়ে পোকাগুলো এতটাই নিস্তেজ আর নাজুক হয়ে গেল যে দুই বছর আগেকার তাদের ধ্বংসাত্নক রূপ কল্পনাও করা যাচ্ছিল না।
এর সবকিছুই গাছেদের পারস্পরিক যোগাযোগের মাধ্যমে সতর্ক হয়ে যাওয়ার কারণে হয়েছে বলে মনে করছেন গবেষকরা।