শেষে সাত বছরের ‘ খুদে গোয়েন্দা’র কাছেই মাত !
কলকাতা টাইমস :
সবে দ্বিতীয় শ্রেণিতে পড়ে সে। বয়স সাত বছর। আর তার জন্যই রাত ভোর হওয়ার আগেই ধরা পড়েছে দাগী চোর।
ঘটনার রাত ৯টার দিকে ভারতের কামডহরি পূর্বপাড়ার বাসিন্দা নিয়াজ হোসেন হাজির হন বাঁশদ্রোণী থানাতে। রাজারহাটের একটি বেসরকারি ইঞ্জিনিয়ারিং সংস্থার প্রোজেক্ট ম্যানেজার নিয়াজ সপরিবারে গত ২১ মে বীরভূমের সিউড়িতে গ্রামের বাড়িতে গিয়েছিলেন।
ফিরে এসে দেখেন তিন তলায় তার ফ্ল্যাটের কোলাপসিবল গেটের তালা ভাঙা। ঘরের ভিতর ঢুকে দেখেন গোটা ঘরের জিনিসপত্র তছনছ হয়ে আছে। আলমারির তালাও ভাঙা। লকার থেকে উধাও প্রায় তিন লাখ টাকার গহনা।
নিয়াজের অভিযোগ পেয়ে ঘটনাস্থলে পৌঁছায় বাঁশদ্রোণী থানার পুলিশ। কিন্তু, ঘটনাস্থলে তদন্ত করেও খুব কার্যকরী সূত্র পেতে ব্যর্থ হন তদন্তকারীরা।
পুলিশ যখন নিয়াজের বাড়ি থেকে থানায় ফেরার তোড়জোড় করছে, ঠিক সেই সময় উল্টো দিকের বাড়ি থেকে উঁকি মারছিল ছোট এক মুখ। এক তদন্তকারী বলেন, ওর মুখ দেখেই মনে হচ্ছিল কিছু বলতে চায় সে।
তার পর সেই সাত বছরের বালকের অভিভাবকের অনুমতি নিয়ে তদন্তকারীরা আলাদা করে কথা বলেন। আর সেখান থেকেই জানা যায়, যে দিন নিয়াজ সিউড়ি গিয়েছিলেন, সেই দিনই বিকেলে খেলার শেষে মাঠ থেকে ফেরার সময় একজনকে নিয়াজের বাড়ির পাঁচিল টপকে ভিতরে ঢুকতে দেখেছে সে।
আর তখনই তার সন্দেহ হয়েছিল। পাশের বাড়িতে চুরির খবর জানার পর থেকেই পুলিশ কাকুদের সে যা দেখেছে তা বলার ইচ্ছে ছিল। তাই পুলিশ দেখেই উৎসুক মুখে উঁকিঝুকি।
এরই মধ্যে দূরে রাস্তার মোড়ে বসানো একটা ক্লোজ সার্কিট ক্যামেরার উপর নজর পড়ে তদন্তকারীদের। সেই ক্ষুদের দেওয়া তথ্যের উপর ভিত্তি করেই পাঁচিল টপকানোর আগে-পরের সময় ধরে শুরু হয় সিসি ক্যামেরার ফুটেজ খতিয়ে দেখা। আর সেটা দেখতে গিয়েই আবছা দেখা যায়, সন্ধ্যার অন্ধকারে এক জন নিয়াজের বাড়ির সদর দরজা খুলে ধীর পায়ে বের হচ্ছে।
ওই আবছা ছবি দেখেও দুঁদে গোয়েন্দাদের বুঝতে অসুবিধা হয়নি, ওই ছায়ামূর্তি দাগী চোর সুভাষগ্রামের সুরজিৎ অধিকারী বা ল্যাঙড়া গৌতমের। আসামী চিহ্নিত হতেই শুরু হয়ে যায় তল্লাশি।
এপ্রিল মাসের শেষেই জেল থেকে ছাড়া পাওয়া গৌতমের বারুইপুর, সুভাষগ্রাম, আক্রা-সন্তোষপুরের আস্তানায় শুরু হয় তল্লাশি। শেষ পর্যন্ত রাত ভোর হওয়ার আগেই তদন্তকারীরা আক্রাতে গৌতমের হদিশ পায় তার শাশুড়ির বাপের বাড়িতে। সকালেই চুরির সব মাল-সহ ধরা পড়ে গৌতম। পুলিশ কাকুরাও স্বীকার করছেন ওই ক্ষুদে গোয়েন্দার কেরামতিতেই এক রাতের ধরা পড়েছে চোর।