মাত্র ৪ সেকেন্ডেই যে কারুর প্রিয়ভাজন হতে পারবেন, কিভাবে ?
কলকাতা টাইমস :
প্রথম সাক্ষাতের মাত্র কয়েক সেকেন্ডের মধ্যেই লোকে আপনার ব্যক্তিত্ব সম্পর্কে মূল্যায়ন শুরু করে দেয়। আপনি কি কর্মে নিয়োগযোগ্য? বা আপনার সঙ্গে কি ডেটিং করা যায়? অথবা আপনার সঙ্গে কি বন্ধুত্ব করা যায়?
প্রথম দেখাতেই লোকের পছন্দনীয় হওয়া সম্ভব হলেও তা খুব একটা সহজ কাজ না। সুতরাং আপনি কি প্রথম দেখাতেই আপনার সেরা অবয়বটি উপস্থাপন করতে চান।
আপনাকে এ ক্ষেত্রে সহায়তা করার জন্যই আমরা বক্তা ও লেখক নিকোলাস বুথম্যান এর ‘হাউ টু মেক পিপল লাইক ইউ ইন নাইনটি সেকেন্ড অর লেস’ বইটি খুঁটিয়ে দেখেছি। বইটিতে কারো সঙ্গে কথা বলার সময় তার মধ্যে আপনার ব্যাপারে আস্থা তৈরি করার জন্য একটি প্রধান কৌশলই গুরুত্বের সঙ্গে উপস্থাপন করা হয়েছে।
সেরা অংশটি কী? এই পুরো প্রক্রিয়া মাত্র ৪ সেকেন্ডে সম্পন্ন হয়। পড়ুন তাহলে :
পদক্ষেপ ১ : খোলামেলা হন
বুথম্যান বলেন, আপনাকে দৈহিক এবং মানসিক উভয়ভাবেই খোলামেলা হতে হবে।
বুথম্যান বলেন, দৈহিক ভঙ্গির ক্ষেত্রে আপনাকে আপনার হৃৎপিণ্ডটি সরাসরি যার সঙ্গে কথা বলবেন তার দিকে তাক করে রাখতে হবে। হৃদয়টি আপনার হাত বা বাহু দিয়ে ঢেকে রাখবেন না। এ সময় আপনার পরনে যদি কোনো জ্যাকেট থাকে তাহলে এর বোতামগুলো খুলে নিন।
ইতিবাচক অঙ্গভঙ্গি বজায় রাখাটাও গুরুত্বপূর্ণ। আপনি যখন কোনো লোককে অভিবাদন জানাবেন, তখন আপনাকে ওই ইতিবাচকতা সম্পর্কে সতর্ক থাকতে হবে এবং তা অনুভবও করতে হবে।
পদক্ষেপ ২ : চোখে চোখ রাখুন
বুথম্যান বলেন আপনাকেই প্রথমে তার চোখে চোখ রেখে কথা বলতে হবে। আর চোখে ইতিবাচক অনুভূতির প্রতিফলনও ঘটাতে হবে।
কিন্তু সরাসরি কারো চোখের দিকে তাকাতে যদি আপনার লজ্জা লাগে তাহলে বুথম্যানের নির্দেশনা অনুযায়ী আপনি একটি কৌশল রপ্ত করতে পারেন। কৌশলটি হলো আপনি যখন টেলিভিশন দেখবেন তখন ক্যামেরার সামনে থাকা লোকদের চোখের রংটি কী তা মনোযোগ দিয়ে দেখুন এবং মনে মনে সে রংটির নাম বলুন। পরের দিন আপনার যত লোকের সঙ্গে সাক্ষাৎ হবে তাদের সকলের সঙ্গেও একই কাজ করুন।
তবে করো চোখের দিকে একটানা বেশিক্ষণ সরাসরি তাকিয়ে থাকবেন না। সাম্প্রতিক এক গবেষণায় দেখা গেছে, লোকে তাদের চোখের দিকে কারো সরাসরি ৩ সেকেন্ড তাকিয়ে থাকাকেই বেশি পছন্দ করেন। কিন্তু ৯ সেকেন্ডের বেশি সময় তাকিয়ে থাকা কেউই সহ্য করেন না।
পদক্ষেপ ৩ : দ্যুতি
বুথম্যান পরামর্শ দেন, আপনিই যদি প্রথমে একটু হাসির দ্যুতি বা আভা ছড়িয়ে দেন তাহলে অপরজন ভাববেন যে আপনি আন্তরিকতাপূর্ণ মানসিকতার লোক।
গবেষণায় আরো দেখা গেছে, আপনি যখন কোনো সুখী পরিপ্রেক্ষিতে কারো সঙ্গে সাক্ষাৎ করবেন তখন একটি মুচকি হাসি দিলে তা আপানাকে ওই লোকের কাছে স্মরণীয় রাখবে।
তবে মনে রাখবেন, যদি কোনো চাকরির সাক্ষাৎকারে গিয়ে আপনি হাসির এই কৌশল ব্যবহার করেন তাহলে প্রাথমিক অভিবাদনের পরপরই হাসির রেশটুকু মুছে ফেলুন।
এক গবেষণায় গবেষকরা কলেজ শিক্ষার্থীদেরকে চাকরির ইন্টারভিউর চরিত্রে অভিনয় করতে বলেন। এতে তারা দেখতে পান যারা সংবাদপত্রের প্রতিবেদক, ম্যানেজার এবং গবেষণা সহকারী পদের প্রার্থীর ভূমিকায় অভিনয় করেছেন তারা হাসার ফলে অনুমিত চাকরিটি পাননি। বিশেষ করে ইন্টারভিউর মাঝামাঝি সময়ে তারা হাসি দিয়েছিলেন।
পদক্ষেপ ৪ : হ্যালো বলুন
আপনি যখন ‘হাই’, ‘হেই’ বা ‘হ্যালো’ বা অন্য কোনো অভিবাদনমূলক শব্দ ব্যবহার করে তখন আপনাকে আনন্দমুখর ভাবও প্রকাশ করতে হবে। যাতে মনে হয় যে আপনি তার সাক্ষাৎ পেয়ে সত্যিই আনন্দিত।
এরপর আপনি আপনার হাতটি বাড়িয়ে দেবেন। হ্যান্ডশেকটি দৃঢ়ভাবে করা নিশ্চিত করুন। যা সাধারণভাবে একটু বেশি ইতিবাচক ভাব সৃষ্টি করে।
কারো সঙ্গে সাক্ষাতের পর তিনি যদি তার নামটি বলেন তাহলে আপনি তার নামটি কয়েকবার পুনরুচ্চারণ করুন। উদারহণত, আপনি হয়ত বলতে পারেন, ”সারা, আপনার সাক্ষাৎ পেয়ে আমি আনন্দিত, সারা!”
আপনি যখন একসঙ্গে একাধিক ব্যক্তির সাথে সাক্ষাৎ করবেন তখন হয়ত সকলের সঙ্গেই একবারে হ্যান্ডশেক করা সম্ভব নাও হতে পারে। তবে বুথম্যান বলেন, হাত না মিলিয়েই হ্যান্ডশেক করা সম্ভব। এর জন্য আপনি হ্যান্ডশেক করলে যা করতেন তার সবই করুন। আপনার হৃদয়টি তাদের দিকে তাক করুন। এরপর বলুন হ্যালো এবং মুচকি হাসুন। কিন্তু হাত বাড়িয়ে দেবেন না।
পদক্ষেপ ৫ : সামনের দিকে হালকা ঝুঁকে হাত মেলান
যার সঙ্গে সাক্ষাৎ করছেন তার দিকে পুরোপুরি ঝুঁকে পড়ার কোনো দরকার নেই। বুথম্যান বলেন, খুবই সামান্য পরিমাণে এবং হালকাভাবে সামনের দিকে ঝুঁকুন যাতে বুঝা না যায় যে আপনি সামনের দিকে ঝুঁকেছেন। এর মধ্য দিয়ে এই মনোভাব প্রকাশ করুন আপনি তার কথা শুনতে আগ্রহী।