বাড়িতে জিন নেই তো? বুঝে নিন আগে-ভাগে
কলকাতা টাইমস :
ভুত আছে কি নেই এই বিতর্ক বহুদিনের! তবে একপক্ষ ভুত কিংবা অতৃপ্ত আত্মায় বিশ্বাস করলেও বিজ্ঞান কিন্তু তা করে না। তবে ব্যাখ্যাতীত বিষয়গুলো সামনে চলে আসলে অনেকেই তা জিনের কারসাজি বলে থাকেন। ইসলাম ধর্মেও পৃথিবীতে মানুষের পাশাপাশি জিনের বসবাস করার কথা উল্লেখ রয়েছে।
পৃথিবীর সব স্থানেই জিন জাতি বসবাস করে থাকে। তবে মানুষের বসবাস কম রয়েছে এমন স্থান তাদের প্রিয় বলে কোনো কোনো বিশেষজ্ঞ দাবি করে থাকেন। আবার তারাই বলেন, অনেক জিন মানুষের বাড়িতেও বাস করে থাকে। তবে সেটা যে খুব বেশি তা নয় বলেই আশ্বস্ত করেন বিশেষজ্ঞরা।
কিন্তু বাড়িতে সত্যিই ভুত অথবা জিন রয়েছে কিনা তা জানার উপায় কি? এই সম্পর্কে ব্রিটেনের আধিভৌতিক বিষয়ে কাজ করা জোয়ে নিকল বলছেন, মোটামুটি ৬টি লক্ষণ দেখে বোঝা সম্ভব বাড়িতে অতৃপ্ত আত্মা কিংবা জিনের উপস্থিতি আছে কিনা।
শীর্ষস্থানীয় আধিভৌতিক বিষয়ক গবেষক এবং Committee For Skeptical Inquiry’এর Senior Research Fellow জোয়ে নিকলের মতে পৃথিবীর সব স্থানেই ব্যাখ্যার অতীত ঘটনার নজির আছে। তবে লক্ষণ না দেখে কোনো ঘটনা সম্পর্কেই সিদ্ধান্ত পৌঁছানো ঠিক নয়।
বাসস্থানে ভৌতিক আনাগোনা আছে কিনা সে সম্পর্কে নিকলের মতামত এরকম …
১. বাড়িতে একা থাকাকালে হঠাৎ যদি মনে হয় কেউ আপনার কাঁধ, ঘাড় বা পিঠ স্পর্শ করেছে তবে সচেতন হওয়া প্রয়োজন। তবে নিশ্চিত হয়ে নিন কেউ নিছক দুষ্টুমি করে এমন ভয় দেখাচ্ছে কিনা। উত্তর যদি ‘না’ হয় তবে ব্যাখ্যার অতীত বিষয় নিয়ে খোঁজ-খবর নিন। বাড়ির অতীত ইতিহাস সম্পর্কে জানুন!
২. ঘরে মানুষ না থাকলেও যদি দেখেন ঘরের আসবাবপত্র আপনা থেকেই স্থান পরিবর্তন করেছে, তবে প্রথমে আতঙ্কিত না হয়ে মনে করার চেষ্টা করুন। বেশিরভাগ ক্ষেত্রে বেখেয়ালে ঘরের আসবাবপত্র সরিয়ে রাখেন অনেকে। পরে মনে না থাকায় অযথাই আতঙ্কিত হয়ে পড়েন। তবে বিষয়টিকে সম্পূর্ণ উড়িয়ে দেওয়ার আগে যাচাই করার পরামর্শ দিচ্ছেন নিকল। যদি সত্যিই আসবাবপত্রগুলো রহস্যময় আচরন করে তবে বিষয়টি চিন্তার!
৩. নতুন বাসায় উঠে যদি জানতে পারেন, সেখানে আগে কোনো মানুষের অস্বাভাবিক মৃত্যু ঘটেছে কিংবা স্থানটিতে আগে কবরস্থান অথবা শ্মশান ছিল তবে প্রথমেই ভয়ের কারণ নেই। কিন্তু সাবধানতার প্রয়োজন রয়েছে বলেই নিকল মনে করেন। কেননা, কবরস্থান কিংবা শ্মশানে কোনো দুষ্টু বিদেহী আত্মার আনাগোনা থাকলেও থাকতে পারে।
৪. একা বাড়িতে থাকার সময় যদি মনে হয় ঘরের তাপমাত্রা অস্বাভাবিক ভাবে ঠাণ্ডা কিংবা গরম হয়ে গেছে তবে আতঙ্কিত না হয়ে কারণ খুঁজে বের করুন। আবহাওয়ার পরিবর্তনের কারণেও এমনটি হতে পারে। কিন্তু কোনো ব্যাখ্যা যদি না পান কিংবা আপনি একা না থাকলে এমনটা কখনো অনুভূত না হয়ে থাকে তবে বিষয়টি ভাবার মতো বলেই মনে করেন নিকল।
৫. নির্জন বাসায় যদি কোনো গ্রহণযো্গ্য কারণ ছাড়াই নানা ধরনের শব্দ কানে আসে তবে উৎস সম্পর্কে খোঁজ করুন। অনেক সময় ইঁদুর বেড়ালের কারণেও নানান শব্দের সৃষ্টি হয়। কিন্তু যদি তা না হয়, তবে সচেতন হয়ে শব্দের উৎস বের করার চেষ্টা করুন। তাতেও যদি প্রশ্নের সমাধান না মেলে তবে বাড়িটিতে আগে থাকা মানুষদের কাছে খোঁজ নিন। জানার চেষ্টা করুন, তারাও এমন অভিজ্ঞতার মুখে পড়েছিলেন কিনা।
৬. কোনো কারণ ছাড়াই ঘরে যদি দুর্গন্ধ ছড়িয়ে পড়তে দেখেন তবে সাবধান হোন। বিষয়টা মোটেও স্বাভাবিক নয়। বরং ভয়ঙ্কর পিশাচের আগমনের সংকেত এটি। তবে এসব ভাবনা মাথায় আনার আগে খুঁজে দেখুন ঘরে ইঁদুর, টিকটিকি মরে রয়েছে কিনা। অনেক সময় এসব প্রাণী বেশ কিছুদিন মরে পড়ে থাকলে গন্ধ ছড়াতে পারে।
বাড়িতে ভুত বা জিন আছে কিনা এই বিষয়টি জানার চাইতেও জরুরি মনে সাহস রাখা। কেননা সাহসী মানুষের কাছে এসব আধিভৌতিক বিষয় কাছে ঘেঁষতে পারে না। কেননা সাহসী মানুষের কাছে ভয়ঙ্কর প্রেতাত্মাও দুর্বল হয়ে যায় বলে দাবি করেছেন জোয়ে নিকল।
এছাড়া মন শক্ত রাখার পাশাপাশি ঘরে নিয়মিত প্রার্থনা, সৃষ্টিকর্তার বাণী, বিভিন্ন আয়াত টাঙ্গিয়ে রাখলে তা দুষ্ট আত্মা কিংবা জিনকে কাছে ঘেঁষতে দেয় না। তবে ঘরে যেখানে সেখানে খোলা আয়না কিংবা মানুষের প্রতিকৃতি না রাখাই উত্তম। ইসলাম ধর্মেও ঘরের ভেতরে মানুষ অথবা হিংস্র প্রাণীর প্রতিকৃতি স্থান না দেয়ার পরামর্শই দেয়া হয়েছে।