মৃত্যুমুখ ফিরিয়ে আনতে সক্ষম ‘গ্রিন থেরাপি’!
কলকাতা টাইমস :
এখনকার প্রজন্ম যেন সারাক্ষণ ভয়ে ভয়ে থাকে। এই না একটা রোগের বোমা এসে পড়ে, আর ওমনি জীবনটা না শেষ হয়ে যায়। এমন হওয়াটা অস্বাভাবিক নয়! ফিলিস্তিনের গাজা উপত্যকায় বেঁচে থাকা মুষ্টিমেয় ফিলিস্তিনের জীবনের নিশ্চয়তা যেমন কেড়ে নিয়েছে ইসরায়েলি ক্ষেপণাস্ত্র, তেমনি স্ট্রেস আমাদের আয়ুর পরিধি কমিয়েছে চোখে পড়ার মতো। এমন অবস্থায় মৃত্যুমুখ থেকে আমাদের বাঁচাতে পারে একমাত্র গ্রিন থেরাপিই।
কী এই গ্রিন থেরাপি? জীববিজ্ঞানীরা মনে করেন প্রকৃতির অল্প ছোঁয়াতেও একাধিক জোটিল রোগের উপশম ঘটতে পারে। কারণ প্রকৃতির শরীরে এতটাই শক্তি লুকিয়ে রয়েছে যে, যেকোনো রোগকে সমূলে সারিয়ে তুলতে সময়ই লাগে না। এই শক্তিকে কাজে লাগিয়ে যে চিকিৎসা করা হয়, তাকেই বিজ্ঞানের পরিভাষায় গ্রিন থেরাপি বলা হয়।
আর সব থেকে মজার বিষয় হলো গ্রিন থেরাপির সুফল পেতে কোনো ডাক্তারের চেম্বারে যাওয়ার প্রয়োজন পড়ে না। কিছুটা সময় প্রকৃতির মাঝে কাটালেই উপকার মিলতে শুরু করে।
প্রকৃতির সঙ্গে থাকাকালীন আমাদের মস্তিষ্ক এবং শরীরে একাধিক পরিবর্তন ঘটতে শুরু করে। সেই সঙ্গে বিশেষ কিছু হরমোনের ক্ষরণ বেড়ে যাওয়ার কারণে ব্রেন এবং শরীরের কার্যক্ষমতাও বৃদ্ধি পায়। ফলে ধীরে ধীরে স্ট্রেস এবং অন্যান্য একাধিক রোগ কমতে শুরু করে।
প্রসঙ্গত, নিজের ওপর নানাভাবে গ্রিন থেরাপি করতে পারেন। যেমন ধরুন…
আউট ডোর অ্যাকটিভিটি
নানা ধরনের অ্যাডভেঞ্চার স্পোর্টসে অংশ নেওয়াও এক ধরনের গ্রিন থেরাপি। কারণ যখনই আপনি বাড়ির বাইরে, পরিবেশের কাছাকাছি গিয়ে কোনো কাজ করছেন, তখন পরিবেশের ভালো প্রভাব আপনার মন, শরীর এবং মস্তিষ্কের ওপর পড়তে থাকে। ফলে নানাভাবে উপকার মেলে। রক ক্লাইম্বিং, রাফটিং অথবা বন্ধুরা মিলে সবুজ ঘেরা পার্কে কয়েক চক্কর হাঁটাতেও দারুণ উপকার পাওয়া যায়।
মনকে নিমেষে ভাল করে দেয়
মানসিক চাপের কারণে মন যখন বিধ্বস্ত, তখন কিছুটা সময় খারাপ ভাবনার থেকে ছুটি নিয়ে পার্কে গিয়ে বসে থাকতে ক্ষতি কী! দেখবেন নিমেষে মন ভালো হয়ে যাবে। আসলে প্রকৃতির অন্দরে এমন কিছু ক্ষমতা থাকে যা মানসিক ক্ষতকে চোখের পলকে ভরিয়ে তোলে। ফলে মন একেবারে চাঙা হয়ে ওঠে। তা ছাড়া সবুজের কাছাকাছি এলে আমাদের মস্তিষ্কে বিশেষ কিছু হরমোনের ক্ষরণ বেড়ে যায়। এই হরমোনগুলিও স্ট্রেস কমাতে বিশেষ ভূমিকা নেয়।
ক্লান্তি দূর হয়
আগেকার দিনে অসুস্থ হলেই চিকিৎসকেরা জল-হাওয়া বদলানোর পরামর্শ দিতেন। কেন জানেন? কারণ প্রকৃতির কোলে সময় কাটালে শরীরের রোগপ্রতিরোধ ক্ষমতার উন্নতি ঘটতে থাকে। ফলে রোগ-ভোগের আশঙ্কা হ্রাস পায়। সেই সঙ্গে শরীরও চনমনে হয়ে ওঠে। ফলে ক্লান্তি দূর হয়। তাই তো প্রতিমাসে যদি বেড়াতে যাওয়ার সুযোগ না পান, ক্ষতি নেই! প্রতিদিন কম করে ৩০ মিনিট প্রকৃতির মাঝে কাটানোর চেষ্টা করুন, তাহলেই দেখবেন উপকার মিলতে শুরু করেছে।
মানসিক অবসাদ কমায়
জীবনযুদ্ধ প্রতিদিন এতটাই ভয়ঙ্কর হয়ে উঠছে যে মানসিক চাপ হাতের বাইরে চলে যাচ্ছে। আর যার প্রভাব সরাসরি পড়ছে পরিবারের বাকি সদস্যদের ওপর। ফলে ভাঙছে সম্পর্ক। বাড়ছে একাকিত্ব। এমন পরিস্থিতিতে প্রকৃতিই কিন্তু আপনার একমাত্র বন্ধু হয়ে উঠতে পারে। কারণ যেমনটা আগেও আলোচনা করা হয়েছে, প্রকৃতি হলো সেই ওষুধ যা নিমেষে মানসিক অবসাদ কমায়। ফলে কাঁটার মুকুট পরেও হাসির সন্ধান পেতে কষ্ট হয় না।
সমাজিকতার সুযোগ মেলে
নিউক্লিয়ার ফ্যামিলির জুগে লোকজন যেন চেনা মানুষের বাইরে কারও সঙ্গেই মিশতে পারে না। ফলে সামান্য কিছুতেই একাকিত্ব এমনভাবে ঘিরে ধরে যে জীবন দুর্বিসহ হয়ে ওঠে। এ ক্ষেত্রে সরাসরি না হলেও প্রকৃতি কিন্তু আপনাকে সাহায্য করতে পারে।
কীভাবে? রোজ সকাল-বিকাল পার্কে হাঁটতে গেলে মুখচেনা মানুষদের সংখ্যা বাড়তে থাকে। আর ধীরে ধীরে এই মানুষগুলির সঙ্গে সম্পর্কের গভীরতা কখন যে আকাশ ছোঁয়, তা আমরা অনেকেই বুঝে উঠতে পারি না। ফলে চেনা মানুষের পরিধিটা বাড়তে থাকে। ফলে কমতে থাকে একাকিত্ব এবং বিষন্নতা।
সম্পর্ক যেন সকল গণ্ডি পেরোয়
আচ্ছা মানবজীবনে কি শুধু মানুষের সঙ্গেই সম্পর্ক হয়? ভালো করে ভেবে দেখুন, এমনটা কিন্তু হয় না। এই সে দিন যেমন অফিস আসার পথে রাস্তার একটা কুকুরের সঙ্গে বেজায় বন্ধুত্ব হয়ে গেল। এখন ওকে দেখলেই বিস্কুট খাওয়াই। আর লেজ নাড়াতে নাড়াতে ব্যাটা আমার পিছু নেয়।
এই ভাবে গ্রিন থেরাপির দৌলতে প্রকৃতির কোলে বেঁচে থাকা বাকি প্রাণীদের সঙ্গেও আমাদের সম্পর্ক তৈরি হতে শুরু করে। আর এমন সম্পর্ক যে শরীর এবং মনের জন্য বেশ উপকারী, তা বিজ্ঞান ইতিমধ্যেই প্রমাণ করে ছেড়েছে।
গ্রিন থেরাপির আরও কিছু প্রয়োজনীয়তা
সময় বদলাচ্ছে। সেই সঙ্গে বদলাচ্ছে মানসিকতাও। এখন প্রতিযোগিতা এমন জায়গায় পৌঁছেছে যে মনকে চাঙা রাখতে কিছু সময়ের জন্য হলেও ব্যস্ত জীবন থেকে ছুটি নেওয়ার প্রয়োজন বেড়েছে। এমন পরিস্থিতিতে গ্রিন থেরাপির আর কোনো বিকল্প আছে বলে তো মনে হয় না। বেশি কিছু করতে হবে না। প্রতিদিন সকালে আধাঘণ্টা খালি পায়ে ঘাসের ওপর হাঁটুন। তাহলেই এত উপকার পাবেন যে আর অন্য কোনো ধরনের শরীরচর্চা করার প্রয়োজনই পড়বে না।