সাবধান : রাতের কাজ মানেই কিন্তু মৃত্যু নিশ্চিত!
[kodex_post_like_buttons]
কলকাতা টাইমস :
চীনের সিচুয়ান ইউনির্ভাসিটির গবেষকদের করা এই মেটা-অ্যানালিসিস অনুসারে দিনের পর দিন রাত জেগে কাজ করলে দেহের অন্দরে কোষের বিভাজন ঠিক মতো হতে পারে না। ফলে ক্যান্সার সেলের জন্ম নেওয়ার আশঙ্কা প্রায় ১৯ শতাংশ বৃদ্ধি পায়। তবে এখানেই শেষ নয়, গবেষকরা দক্ষিণ আমেরিকা, ইউরোপ, অস্ট্রেলিয়া এবং এশিয়ার একাধিক দেশ থেকে সংগ্রহ করা প্রায় ১১৪,৬২৮ টি ক্যান্সার স্টাডি বিশ্লেষণ করেন জানতে পারেন নাইট শিফট করতে থাকলে স্কিন ক্যান্সারে আক্রান্ত হওয়ার সম্ভাবনা প্রায় ৪১ শতাংশ বৃদ্ধি পায়। সেই সঙ্গে ৩২ শতাংশ বৃদ্ধি পায় ব্রেস্ট ক্যান্সারে আক্রান্ত হওয়ার সম্ভাবনা।
আসলে আমাদের শরীরের ভিতরে একটি বায়োলজিকাল ক্লক রয়েছে। এই ঘড়িটি ঘুম থেকে ওঠা থেকে শুরু করে রাতে শুতে যাওয়া পর্যন্ত সব কাজের সময় নথিভুক্ত করে থাকে। অর্থাৎ শরীরকে কখন কোন কাজটা করতে হবে, তা মূলত এই বায়োলজিকাল ক্লকই নির্দেশ দিয়ে থাকে। এখন যদি কেউ রাতে ঘুমনোর জায়গায় জেগে থেকে কাজ করা শুরু করেন, তাহলে বায়োলিজকাল ক্লক বুঝে উঠতে পারে না যে এমন পরিস্থিতিতে কী করা উচিত। ফলে শরীর নিজ নিয়মের বাইরে গিয়ে কাজ করা শুরু করে, যে কারণে বিরূপ প্রভাব পরতে শুরু করে শরীরের উপর। আর এমনটা দিনের দিন হওয়ার কারণে প্রথমেই অনিদ্রা রোগ মাথা চাড়া দিয়ে ওঠে। সেই সঙ্গে ধীরে ধীরে আরও সব জটিল রোগ শরীরে এসে বাসা বাঁধে। ফলে স্বাভাবিক ভাবেই হঠাৎ মৃত্যু হওয়ার আশঙ্কা বাড়ে।
সম্প্রতি বায়োলিজকাল ক্লকের উপর গবেষণা চালিয়ে তিন মার্কিন গবেষক নবেল প্রাইজে ভূষিত হয়েছেন। তাদের গবেষণায় দেখা গেছে বায়োলজিকাল ক্লককে মন মতো চালালে মারাত্মক বিপদ হয়! এক্ষেত্রে যে যে ঘটনাগুলি ঘটার আশঙ্কা বৃদ্ধি পায়, সেগুলি হল…
১. ডায়াবেটিস রোগে আক্রান্ত হওয়ার আশঙ্কা বৃদ্ধি পায়: এই বিষয়ক হওয়া একাধিক গবেষণায় দেখা গেছে দীর্ঘ সময় ধরে রাত জেগে কাজ করে গেলে দেহের অন্দরে এমন কিছু পরিবর্তন হতে শুরু করে যে তার প্রভাবে ইনসুলিনের কর্মক্ষমতা কমতে শুরু করে। ফলে স্বাভাবিকভাবেই রক্তে শর্করার মাত্রা বাড়তে শুরু করে। সেই সঙ্গে বাড়ে টাইপ-২ ডায়াবেটিসে আক্রান্ত হওয়ার আশঙ্কা।
২. ওজন বাড়তে থাকে: দিনের পর দিন রাতে জেগে থাকলে খাবার ঠিক মতো হজম হতে পারে না। ফলে একদিকে যেমন গ্যাস-অম্বলের প্রকোপ বৃদ্ধি পায়, তেমনি ওজনও বাড়তে শুরু করে। আর যেমনটা আপনাদের সকলেরই জানা আছে যে ওজন বাড়লে ধীরে ধীরে সুগার, প্রেসার এবং কোলেস্টেরলের মতো মারণ রোগ এসে শরীরে বাসা বাঁধে। ফলে আয়ু চোখে পরার মতো কমে যায়।
৩. মা হতে সমস্যা হতে পারে: শরীরের নিজস্ব ছন্দ বিগড়ে গেলে দেহের অন্দরে এমন কিছু নেতিবাচক পরিবর্তন হতে থাকে যে তার সরাসরি প্রভাব পরে মা হওয়ার ক্ষেত্রে। একাধিক গবেষণায় দেখা গেছে যে সব মেয়েরা নিয়মিত নাইট শিফট করেন তাদের মিসক্যারেজ এবং প্রিটার্ম ডেলিভারি হওয়ার আশঙ্কা বৃদ্ধি পায়। সেই সঙ্গে কম ওজনের বাচ্চা জন্ম নেওয়ার সম্ভাবনাও থাকে। তাই মা হওয়ার পরিকল্পনা করলে ভুলেও রাত জেগে কাজ করবেন না যেন!
৪. ব্রেন পাওয়ার কমে যায়: রাতের বেলা মস্তিষ্কের আরাম নেওয়ার সময়। তাই তো এই সময় দিনের পর দিন কাজ করলে ধীরে ধীরে ব্রেন পাওয়ার কমতে শুরু করে। সেই সঙ্গে ডিপ্রেশন, হাইপোলার ডিজঅর্ডার, স্লো কগনিটিভ ফাংশন, স্মৃতিশক্তি লোপ পাওয়া সহ আরও সব সমস্যা মাথা চাড়া দিয়ে ওঠে।
৫. রোগ প্রতিরোধ ক্ষমতা কমে যায়: গবেষণায় দেখা গেছে রাত জেগে কাজ করলে কর্টিজল হরমোনের মতো স্ট্রেস হরমোনের ক্ষরণ মারাত্মক বেড়ে যায়। ফলে সারা রাত কাজ করার ক্ষমতা জন্মালেও রোগ প্রতিরোধ ক্ষণতা একেবারে কমে যায়। ফলে নানাবিধ রোগ ঘাড়ে চেপে বসতে সময়ই লাগে না। প্রসঙ্গত, স্ট্রেস হরমোনের ক্ষরণ বৃদ্ধি পেলে মানসিক চাপও বাড়তে শুরু করে, যা শরীরের পক্ষে মারাত্মক ক্ষতিকারক।
৬. চোট-আঘাট লাগার প্রবণতা বেড়ে যায়: সারাদিন যতই ঘুমোন না কেন, রাতে ঘুম আসতে বাধ্য। এমন পরিস্থিতিতে মনোযোগ যেমন হ্রাস পায়, তেমনি শরীরের সচলতাও কমতে শুরু করে। ফলে অফিসে চোট-আঘাত লাগার প্রবণতা বৃদ্ধি পায়।