বন্ধ আবারো প্রমান করে দিল বিরোধীরা ঐক্যবদ্ধ নয়
সৌগত রায় বর্মন
দেশের এই মুহূর্তের যা অবস্থা তাতে ক্রমশই পরিষ্কার হয়ে যাচ্ছে যে মেরুকরণ আসন্ন। এই মেরুকরণ দরকার, কেননা সারা দেশের মানুষ, কে কোন পক্ষে তা বোঝা যাচ্ছে না। প্রতি মুহূর্তে পক্ষ বদল হয়ে যাচ্ছে। কারণ তথ্য প্রযুক্তি। আসলে সবাই যেন হতভম্ব হয়ে আছে। কেউ কোনও সিদ্ধ্যান্ত নিতে পারছে না। কেউ যানে না, কোন পক্ষকে সমর্থন করবে অথবা করবে না। সকালে এক, বিকেলে আরেক।
আগেই বলা হয়েছে যে এই হতভম্ব অবস্থার জন্য দায়ী তথ্যের স্বচ্ছতা। প্রযুক্তি যত উন্নত হবে ততই সত্য থেকে সরে আসব আমরা।
দিনের পর দিন কেন্দ্রের বিজেপি সরকারের একেক জন নেতা একেক রকম কথা বলে চলেছেন। কারো সঙ্গে কারো কোনো কথার কোনও মিল নেই। বিরোধী পক্ষ ঠিক এটাই চাইছিল। ফলে দু’পক্ষেরই প্রচারে শুধুই ভ্রান্তি। স্পষ্টতই এখন বোঝা যাচ্ছে সি এ এ বা এন আর সি বা এন আর পি নিয়ে কেউই খুব একটা কিছু বুঝে উঠতে পারছে না।
ভ্রান্তি, অস্বচ্ছতা ও সঠিক তথ্যের অভাবে দিকভ্রান্ত নৌকোর মত এপার ওপার দোলাচল করছে সাধারণ মানুষ।
ঠিক এরকম একটি অস্থির সময়ে বাম সংগঠনগুলি ভারত বন্ধ ডেকে বসল। এই রাজ্যের প্রশাসন প্রত্যাশিতভাবেই বন্ধের বিরোধিতায় তাদের অবস্থান ঘোষণা করেদিল।
ফলে কি হল? প্রধান হয়ে উঠল দলগত অবস্থান। মুছে গেল দেশের সাধারণ মানুষের সঙ্কট। রাজনৈতিক ভাবে লাভবান হল কেন্দ্রের বিজেপি সরকার।
আজ ভারত জোরা আন্দোলন চলছে। দেশের বিভিন্ন প্রান্তে চলছে নাগরিকত্ব আইন নিয়ে বিক্ষোভ । এই নয়া আইন দরকার ছিল কিনা তা নিয়ে উত্তাল হয়েছে সারা দেশ। কেন্দ্রীয় সরকারের পুলিশ বর্বরতার লাঠি, গুলি, ধরপাকর ও আরও অনেক দমনপীড়ন চলছে অসম থেকে বাংলা , কেরল থেকে দিল্লি এবং অন্যান্য রাজ্যেও। এই বিষয়টি নিয়ে প্রচুর আলোচন চলছে, চলছে লেখালেখি, চলছে অবস্থান, বিক্ষোভ, লাঠি, গুলি।
এই অবস্থায় দেশে প্রথম মুখ খুলেছিলেন মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়। বোঝা যায় এটা সম্পুর্ণ ভোট ব্যাংক সুরক্ষিত রাখতে তার দলের একটি নির্দিষ্ট কর্মসূচি। সেই কর্মসূচিতে হয়তো ছিল না তার ও দলের কোনও আবেগ। সেটাই স্বাভাবিক। ক্ষমতায় থেকে কে আর বিরোধীদের জয়ী করতে চায় ?
এই বন্ধ ঠিক সে কারণেই বিজেপি বিরোধী আন্দোলনের গায়ে একটি প্রশ্ন রেখে গেল। স্পষ্ট হয়ে গেল রাজনীতি কখনও দলের উর্ধে উঠতে পারে না।
এই মুহূর্তে যদি বামপন্থীদের কথাই বলতে হয় তবে বলা যেতে পারে এনআরসি বিরোধী আন্দোলনে সব চাইতে দেরি করে রাস্তায় নেমেছে বামপন্থীরা।
কিন্তু আন্দোলনের তীব্রতায় তেমন কোনও দাগ কাটতে পারেনি। বরঞ্চ ধারে বা ভারে এগিয়ে ছিলেন মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়। রাজপথে নেমেছেন পরপর তিন দিন। প্রায় প্রতিদিনই কোনও না কোনও কর্মসূচি নিয়ছেন। কিন্তু প্রশ্ন তো থেকেই যাচ্ছে। কেননা সেই আটজন, যারা বিল পাশের দিন ছিলেন অনুপস্থিত। মমতার আন্দোলনে এই প্রশ্নের জবাব কিন্তু এখনো পাওয়া জায়নি।
দেশের বিভিন্য প্রান্তে কিন্তু সাধারণ মানুষই এগিয়ে এসে দল বেধেছে নয়া নাগরিকত্ব আইনের বিরুদ্ধে। লাখ লাখ মানুষ রাস্তায় রাত জেগে ক্ষোভ উগড়ে দিয়েছে মোদি, আমিত শার বিরুদ্ধে। সেখানে কোনও রাজনৈতিক দল নেই। নেই কোনও দলীয় সংগঠন । এই মুহূর্তে কলকাতার পার্ক সার্কাসে অবস্থানে বসেছে জাত ধর্ম নির্বিশেসে মহিলারা। ওদিকে দিল্লিতে জেএনইউয়ের সামনে অবস্থানে আছেন তরুন নেত্রী ঐশী ঘোস, কানাইহা কুমার ও সারা ভারত থেকে আসা বিভিন্য ছাত্র নেতা ও সংগঠন।
এদের কাছে কোনও বাম , তৃনমূল , কংগ্রেস বা অন্যান্য ভোটপন্থী রাজনৈতিক দলের কোনও প্রয়োজন নেই এবং এই কথাটা পরিষ্কার করে জানিয়ে দিয়েছেন কানাইহা কুমার। দিল্লির রাজপথে দাঁড়িয়ে।
এই বন্ধ যদি সফল হয়ে থাকে তবে তার জন্য কোনও রাজনৈতিক দলকে অভিনন্দন না দিয়ে বরঞ্চ বলা ভালো বহুদিন বাদে মানুষ কোনও রাজনৈতিক কর্মসূচিতে অংশ গ্রহন করল একশ ভাব আবেগ নিয়ে, কোনও দলের ডাকে নয়।
সুতরাং চোখের সামনেই দেখা গেল, বিরোধীরা এখনো সংগবদ্ধ নয়। ভোটের ব্যাপারীদের এত সহজে বিশ্বাস করা ঠিক হবে না।
লড়াইটা রাস্তার, মসনদের নয়।