ঘরে ভুলেও রকিং চেয়ার বা এই জিনিস রেখেছেন কি …
কলকাতা টাইমস :
ঘর সাজাতে কোনো নির্দিষ্ট জিনিস রাখা বা না রাখার ব্যাপারে আপনার মনে কি কোনো অহেতুক অমঙ্গলের চিন্তা বা কুসংস্কার কাজ করে?
আসুন পরিচিত হই গৃহস্থালির আসবাবপত্র সম্পর্কিত প্রাচীনকালের বেশ কিছু অদ্ভুত লৌকিক বিশ্বাসের সঙ্গে। চীনের ফেং সুই সহ অন্যান্য সংস্কৃতির কিছু লৌকিক বিশ্বাস অনুসারে গৃহস্থালির কিছু নির্দিষ্ট আসবাবপত্র আপনার জন্য দুর্ভাগ্য বয়ে আনতে পারে।
* রকিং চেয়ার : ধরুন একটি রকিং চেয়ার নড়ছে, স্বাভাবিক চিন্তায় চেয়ারটি বাতাসে নড়ছে তাই নয় কি? কিন্তু আইরিশ লৌকিক বিশ্বাস অনুসারে, অন্ধকার রুমে পুরোনো রকিং চেয়ার রাখা মানে হলো সে চেয়ারে কোনো শয়তানি আত্মাকে বসার আমন্ত্রণ জানানো। তাই এই বিশ্বাস অনুসারে পুরোনো রকিং চেয়ারের দুলুনি হলো গৃহে কোনো অশরীরী আত্মার অস্তিত্বের সংকেত, কি অদ্ভুত তাই না! হয়তো এমন কুসংস্কার বা বিশ্বাস থেকেই কেউ কেউ রকিং চেয়ারের পরিবর্তে মেঝের উপর স্থির থাকা চার পায়া চেয়ার পছন্দ করেন।
* সবুজ রঙের দেওয়াল : দেওয়ালের সবুজ রঙ অশুভ হতে পারে। অবশ্য এই কুসংস্কারের পিছনে একটি ঐতিহাসিক ভিত্তি রয়েছে। আঠারো শতকে সিনথেটিক সবুজ রঙ তৈরি করা হতো নব্য আবিষ্কৃত যৌগিক পদার্থ কিউপ্রিক হাইড্রোজেন আর্সেনিক থেকে। হ্যাঁ, এটি সেই পরিচিত আর্সেনিক বিষ। সবুজ রঙের দেয়াল অথবা সবুজ পেপারে মোড়ানো দেওয়াল পুরোনো স্যাঁতস্যাঁতে হয়ে গেলে সেই দেওয়াল থেকে ক্ষতিকর দূষিত গ্যাস নিঃসরণের সম্ভাবনা থাকত এবং সেই সময়ে দেওয়ালে সবুজ রঙ ব্যবহৃত হয়েছে এমন কারখানার শ্রমিকগণ অসুস্থ হয়ে মারা যাওয়ার ঘটনাও ঘটেছিল। ১৮২২ সালে সবুজ রঙ তৈরিতে আর্সেনিক ব্যবহারের ঘটনা যখন প্রকাশিত হয়, বিপদ এড়াতে ক্রেতা সাধারণ এর ব্যবহার বর্জন করে। যদিও এখনকার সবুজ রঙ তৈরিতে আর্সেনিকের মতো ক্ষতিকর পদার্থ ব্যবহৃত হয় না, তারপরও ইতিহাসের ওই ঘটনার পরিপ্রেক্ষিতে এখনও আজকের দিনের কিছু কুসংস্কারাচ্ছন্ন মানুষ সবুজ রঙের দেয়ালকে অশুভ ঘটনার পূর্বাভাস বা সংকেত বলে মনে করেন।
* ভাঙা আসবাব অথবা বন্ধ ঘড়ি : চীনের ফেং সুই প্রথায় ঘরে ভাঙা আসবাব না রাখার ব্যাপারে বেশ দৃঢ়ভাবে সতর্ক করা হয়েছে। কারণ এটি আপনার জীবনের ভিতরের ও বাহিরের বিশৃঙ্খল অবস্থার পরিচয়। ফেং সুই প্রথানুসারে সময় নির্দেশক যন্ত্র সবসময় সচল থাকা উচিৎ। অন্যথায় আপনার জীবনও কাদা-মাটিতে আটকে যাওয়া গাড়ির মতো কোনো বাঁধাধরা নিয়মে স্থবির হয়ে যেতে পারে, থেমে যেতে পারে জীবনের গতি বা উন্নতির চাকা। ঘরে ভাঙা ঘড়ি থাকা মানে আপনার পরিবারের কেউ শিগগির মারা যেতে পারে এমন অশুভ ঘটনার সংকেত দেয়। সুতরাং আপনার ঘরে এমন লুকানো বিপদ থাকলে অবশ্যই অবজ্ঞা করা উচিৎ নয়, খুঁজে দেখুন।
* কাঁটাযুক্ত গাছ : ঘরে টবে গাছ লাগাতে ভালোবাসেন এমন মানুষদের জন্য দুঃসংবাদ। ফেং সুই বিশ্বাস অনুসারে, কাঁটাযুক্ত গাছগুলো ঘরে অশুভ আবহ তৈরিতে চুম্বকীয় ক্ষেত্র হিসেবে কাজ করে। কাঁটাযুক্ত গাছগুলো আপনার ঘরের মানুষদের দুশ্চিন্তাগ্রস্থ করে তুলতে পারে, এমনকি সম্পর্কের অবনতিও ঘটাতে পারে। তবে ব্যতিক্রম হলো গোলাপ গাছ। গোলাপ ফুলের মোহনীয় সৌন্দর্যের পাপড়ি থেকে যে শুভ শক্তির আবহ তৈরি হয়, সেটি ধ্বংস করার জন্য যথেষ্ট শক্তি গোলাপ ফুলের কাঁটাভরা কান্ডের নেই বলে ধারণা করা হতো।
* অগোছালো বিছানা : সম্ভবত অগোছালো সন্তানদের নিয়ে হতাশ পিতামাতাদের একটি উদ্ভাবিত কুসংস্কার হলো- যদি তুমি বিছানা গুছিয়ে না রাখো অথবা গোছানোর সময়ে বাধাপ্রাপ্ত হও, তাহলে সেই বিছানায় তোমার সারারাত নিদ্রাহীন কাটবে৷
* খোলা ছাতা : এটি পরিচিত মনে হচ্ছে? প্রাচীন মিশরীয় বিশ্বাস মতে, ঘরের ভেতরে ছাতা খুলতে সতর্ক থাকতে হবে। কারণটি এতটাই অবিশ্বাস্য যা স্বাভাবিক চিন্তারও বাইরে৷ প্রাচীনকালে মনে করা হতো, প্রতিকূল আবহাওয়া থেকে রক্ষা করে এমন কিছু যদি ঘরে আনা হয় তাহলে ঘরের পাহারায় থাকা অভিভাবক আত্মাদের অসম্মান করা হয়। এমন কিছু আপনি ঘরে এনেছেন মানে এই বার্তা দিচ্ছেন অভিভাবক আত্মাদের যে, তারা ঘর রক্ষার জন্য যথেষ্ট শক্তিশালী নয়৷ এই কুসংস্কারে বিশ্বাস করা মানুষেরা হিংসুক আত্মাদের আক্রোশের ভয়ে এখনো পর্যন্ত ঘরে খোলা ছাতা রাখতে বা ছাতা খুলতে সাহস করে না৷
* মৃত অথবা শুকনো গাছ : যদি আপনি আপনার ঘর শুভ শক্তিতে ভরপুর ও প্রাণবন্ত রাখতে চান তাহলে কখনোই মৃত অথবা শুকনো গাছ ঘরে রাখবেন না৷ ঘরে এ ধরনের মৃত জিনিস রাখার ফলে ঘরে মৃত শক্তির প্রবেশ ঘটতে পারে এবং ঘরের আকর্ষণ ও শুভ শক্তি নষ্ট হয়ে যেতে পারে৷ আরও বলা হয়ে থাকে, কুচকানো পাতা, মরা ডাল, অতিথির চোখে আপনার ঘরের আমন্ত্রণ বা অভ্যর্থনা রূপটিকে নষ্ট করে দেয়।
* ট্যাক্সিডার্মি : যদি বলা হয় মরা গাছ ঘরে অশুভ শক্তি ডেকে নিয়ে আসে, তাহলে বাজি ধরে বলা যায় মৃত পশু আরো বেশি অপয়া। আপনি কি চাইবেন মৃত হরিণের মাথা দেয়ালে ঝুলিয়ে আপনার বন্ধুদের অভ্যর্থনা জানাতে? অথবা কোনো মৃত পশুর জ্বলজ্বলে দুটি চোখ আপনাকে সবসময় দেখছে এমন অস্বস্তিকর অনুভূতি নিয়ে ঘরে থাকতে আপনার ভালো লাগবে? এমনকি কুসংস্কারে তেমন একটা বিশ্বাস করেন না এমন গৃহমালিকও তার ঘরে ট্যাক্সিডার্মি রাখতে দুবার ভাবতে পারেন। কারণ ঘরে এরূপ ট্যাক্সিডার্মি অনেক সময়ে গৃহ ক্রয়ের জন্য আসা ক্রেতার বাড়ি কেনার ইচ্ছা নষ্ট করে দিতে পারে৷
* পুরোনো ক্যালেন্ডার : ফেং সুই প্রথানুসারে ঘরে ভাঙা ঘড়ি থাকলে আপনার জন্য যেমন দুর্ভাগ্য বয়ে আনতে পারে, একইভাবে ঘরের দেয়ালে পুরোনো ক্যালেন্ডার ঝুলিয়ে রাখলেও আপনি একইরকম পরিণতির সম্মুখীন হতে পারেন৷ ফেং সুই সংস্কৃতি অনুসারে, সময় নির্দেশক জিনিসপত্র সবসময় সঠিকভাবে সংরক্ষণ করতে হয় নতুবা তা আপনার জন্য দুর্ভাগ্য বয়ে আনতে পারে, জীবনের উন্নতির পথ সংকুচিত করে জীবনকে স্থবির করে দিতে পারে, পরিবারের মানুষদের আয়ু কমিয়ে দিতে পারে৷ যদি আপনি নিরাপদে থাকতে চান তাহলে লক্ষ্য রাখুন আপনার দেয়ালের ক্যালেন্ডারটির পাতা যেন সঠিক সময়ের পিছনে পড়ে না যায়৷