November 25, 2024     Select Language
৭কাহন Editor Choice Bengali KT Popular

‘হেলিকপ্টার পেরেন্টিং’-য়েই কিন্তু সর্বনাশ 

[kodex_post_like_buttons]
কলকাতা টাইমস : 

ন্তান আপনার নয়নের মণি। আপনার ভুবন। কিন্তু সারাক্ষণ তাকে ঘিরে আবর্তিত হয়ে অজান্তেই তার সর্বনাশ করছেন না তো? আপনার জন্য রইল পরামর্শ।

‘হেলিকপ্টার ইলা’ র ইলা রাইতুরকরের কথা মনে আছে? বা ‘ইচ্ছে’র মমতাকে? আপাতদৃষ্টিতে এই দুই নারীর আকাশ-পাতাল ফারাক। একজন কলকাতার এক নিম্ন মধ্যবিত্ত সংসারের গৃহিনী। অপরজন আদ্যোপান্ত শহুরে সিঙ্গল মাদার। কিন্তু দু’জনেরই একই সমস্যা। অষ্টপ্রহর পুত্রের পিছনে জোঁকের মতো লেগে থাকার প্রবণতা। আর নিজের সন্তানকে ‘প্রতিষ্ঠিত’ করার আকাঙ্ক্ষার বশবর্তী হয়ে তার ব্যক্তিস্বাতন্ত্র্যকে সম্পূর্ণ অস্বীকার করা।

মা-ঠাকুমাদের সময়ে একটা জনপ্রিয় বুলি ছিল, সন্তানকে ‘হাতের তেলোতে’ মানুষ করা মা-বাবার কর্তব্য। ‘হেলিকপ্টার পেরেন্টিং’ হচ্ছে তারই নয়া সংস্করণ। সোজা কথায় এটি একটি পেরেন্টিং স্টাইল যেখানে মা-বাবা সর্বক্ষণ হেলিকপ্টারের মতো নিজের সন্তানকে পর্যবেক্ষণ করেন। এরকম বাবা-মায়েরা সন্তানকে পারতপক্ষে কাছছাড়া করতে চান না। অত্যধিক রক্ষণশীলতা, সন্তানের প্রতি অস্বাভাবিক মাত্রায় অধিকারবোধ, সন্তানের স্বাধীনতায় অযাচিত হস্তক্ষেপ করা থেকেই হেলিকপ্টার পেরেন্টিং-এর সূচনা।

আজকাল অধিকাংশ পরিবার নিউক্লিয়ার ফ্যামিলি। আর বেশিরভাগ বাবা-মায়েরই এক সন্তান। এরা খুব সহজেই মা-বাবার মনোযোগের কেন্দ্রবিন্দু হয়ে ওঠে। সন্তানকে নিজের জীবনের একমাত্র প্রায়োরিটি করে তোলা থেকেই হেলিকপ্টার পেরেন্টিং এর সুত্রপাত। এ ছাড়াও বহু মা-বাবাই তাঁদের অপূর্ণ বাসনাগুলি তাঁদের সম্তানের মধ্যে দিয়ে চরিতার্থ করার স্বপ্ন দেখেন এবং অজান্তেই বাচ্চার দুঃস্বপ্নের হেলিকপ্টার অবিভাবক হয়ে ওঠেন। এই সমস্যা শুরুতেই নির্মূল না করা হলে পরবর্তীকালে তার নেতিবাচক প্রভাব এড়ানো খুব কঠিন হয়ে পড়ে।

অতিরিক্ত রক্ষণশীলতা বাচ্চাদের স্বাবলম্বী হয়ে ওঠার ক্ষেত্রে সমস্যা তৈরি করে। তা ছাড়া মানসিকভাবে সন্তান মা-বাবার উপর অত্যধিক নির্ভরশীল হয়ে পড়াটাও হেলিকপ্টার পেরেন্টিং-এর একটি নিন্দনীয় সাইড এফেক্ট। এর ফলে বাচ্চারা পরবর্তীকালে প্রাপ্তবয়স্ক হয়েও বহু সমস্যার সম্মুখীন হয়। জেনে নিন নিজেকে কীভাবে ‘হেলিকপ্টার’ হয়ে ওঠা থেকে সামলাবেন।

সন্তানকে স্বতন্ত্র ব্যক্তি হিসেবে দেখুন

সন্তানের জন্মদাতা হিসেবে তাকে অনেকসময় একটি আলাদা ব্যক্তি হিসেবে দেখা খুব কঠিন। কিন্তু আপনার সন্তানের স্বার্থেই তাকে একজন স্বতন্ত্র মানুষ হিসেবে দেখুন। তাকে নিজের ভাল-মন্দের সিদ্ধান্ত নিতে উৎসাহ দিন। একটু বড় হলে চেষ্টা করুন ওর ব্যক্তিস্বাধীনতায় অতিরিক্ত হস্তক্ষেপ না করতে। ও যাতে নির্দিষ্ট লক্ষণরেখা না পেরোয়, তার জন্য ছোট থেকে নীতিশিক্ষা দিন। প্রতিটি কর্মের ফলাফলের দায় যে ওকেই সামলাতে হবে এটাও শেখান। তা হলে শৈশব থেকেই ওর একটি শক্তপোক্ত মুল্যবোধের ভিত তৈরি হবে। ওর ওপর একটু ভরসা করেই দেখুন না!

আপনার সন্তান আপনার ব্যর্থ বাসনা পূর্ণ করার হাতিয়ার নয়

কথাটা অপ্রিয় হলেও সত্য। নিজের অপূর্ণ আকাঙ্ক্ষা নিয়ে আক্ষেপ থাকাটাই স্বাভাবিক। কিন্তু তা বলে সেটি পরিপূর্ণ করার দায় আপনার সন্তানের নয়। আপনার সন্তানের যে স্বতন্ত্র চিন্তাভাবনা থাকতে পারে, নিজস্ব সাধ-স্বপ্ন থাকতে পারে, সেটা ভুললে চলবে না।

‘পারফেকশন’- এর উপর জোর দেবেন না সন্তানের থেকে নিখুঁত রিপোর্ট কার্ড, নিখুঁত ব্যবহার কে না চায়! কিন্তু জীবনের অধিকাংশ ক্ষেত্রে কোনও নিখুঁত বা আদর্শ ফলাফল যে সবসময় অর্জন করা যায় না এটা বুঝুন। সাফল্য অবশ্যই কাম্য। পাশাপাশি ব্যর্থতাকে ভয় না পেয়ে তার থেকে শিক্ষালাভ করতে সাহায্য করুন আপনার খুদেকে।

কর্মফল সম্পর্কে বাচ্চাকে সচেতন করুন

ঠিকঠাক লেখাপড়া না করলে রেজ়াল্ট খারাপ হবে। হোমওয়র্ক না করলে স্কুলে টিচারের কাছে অপদস্থ হতে হবে। জীবনে কর্মফল বলে যে একটি বস্তু রয়েছে সে ব্যাপারে আপনার খুদেকে সতর্ক করে দিন। তা হলে ও নিজে থেকেই দায়িত্ববান হতে শিখবে। আপনাকে আর আলাদা করে ওর তদারকি করতে হবে না।

Related Posts

Leave a Reply