অপকর্ম করে বেড়ানো বেড়াল যখন রক্ষাকর্তা
কলকাতা টাইমস :
পর্তুগালের রাজধানী লিসবন বিশ্বের অন্যতম প্রাচীন একটি শহর। এই শহরের বিড়াল প্রায় নিঃশব্দে নানা অপকর্ম করে বেড়ায়৷ এবার শহরের প্রায় ছয় কোটি ইঁদুর শায়েস্তা করতে সেই বিড়াল-বাহিনী কাজে লাগানো হচ্ছে৷
সেই লক্ষ্যে সবার আগে বিড়ালগুলোকে সঠিক জায়গায় নিয়ে যেতে হয় এবং বিড়ালগুলোর জন্য একটা কলোনি তৈরির প্রয়োজন হয় বলে বলা হয়েছে৷
দেশটির স্ট্রিট অ্যানিম্যালস অ্যাসোসিয়েশনের আনা ডুয়ার্তে ও তার পথঘাটের প্রাণিকল্যাণ সংগঠনের সহকর্মীরা বেওয়ারিশ বিড়াল ধরে সেগুলোর পুনর্বাসন করেন৷
আনা ডুয়ার্তে মনে করিয়ে দেন, ‘বিড়াল শিকারি প্রাণী৷ বিড়ালের গন্ধ পেলে ইঁদুর পালিয়ে যায়৷ আমরা বিড়ালের জন্য বাসস্থানের ব্যবস্থা করে ইঁদুর দূরে রাখছি৷’
আর সেই লক্ষ্যেই লিসবনে ‘বিড়াল পেট্রোলিং বাহিনী’ গড়ে তোলার উদ্যোগ নেয়া হয়েছে ৷ তবে জংলি বিড়াল আকর্ষণ করতে হলে ধৈর্যের প্রয়োজন৷ কিন্তু সেই প্রচেষ্টা বিফল হওয়ায় প্রাণী সংরক্ষণকারীরা বিকল্প পথ বেছে নিচ্ছেন৷ পারলে গোটা কলোনি বন্দি করতে চান তারা৷
আনা ডুয়ার্তে বলেন, ‘বিড়াল সহজেই বন্ধু খুঁজে নেয়৷ এই প্রাণী একইসঙ্গে ঘুমায়, খেলা করে৷ ফলে বিচ্ছিন্নভাবে না করে একসঙ্গে সব বিড়ালের পুনর্বাসন করা অনেক সহজ৷’
লিসবন শহরে বিড়ালের প্রায় হাজারখানেক কলোনি বা বসতি রয়েছে৷ বিষয়টি নিয়ে শহরের বাসিন্দাদের মধ্যে বিতর্ক রয়েছে৷ কারো মতে, বিড়াল উপকারে আসে৷ অন্যদের কাছে বেওয়ারিশ বিড়াল বোঝা ছাড়া কিছুই নয়৷
লিসবন পৌর কর্তৃপক্ষের প্রাণী সংক্রান্ত কর্মকর্তা ও ‘ক্যাট পেট্রোল’ প্রকল্পের সহ উদ্যোক্তা মারিসা কারেশ্মা দোস রেইস ঠিক সেটাই প্রমাণ করতে চান৷
তিনি বলেন, ‘বিড়াল ও মানুষের জন্য তো বটেই, এমনকি ইঁদুরের জন্যও এটা ভালো৷ কারণ এটা ইঁদুর নিয়ন্ত্রণে রাখার প্রাকৃতিক পদ্ধতি৷ বিড়ালের ভয়ে ইঁদুর আর দেখা যায় না৷’
শহরে একটি বিড়াল ধরা পড়েছে৷ সেটির চোখেমুখে আতঙ্ক৷ বিড়ালটি এখনো জানে না যে ভালোর জন্যই সেটিকে সরিয়ে নিয়ে যাওয়া হচ্ছে৷
আনা ডুয়ার্তে এ প্রসঙ্গে বলেন, ‘কোনো বসতি সম্পর্কে ক্ষোভ থাকলে বিড়ালের বিপদের আশঙ্কা রয়েছে৷ সেগুলোকে বিষ খাওয়ানো বা নিপীড়ন করা হতে পারে৷ কোনো পুরানো ভবন ভেঙে নতুন করে তৈরির সময় তাদের অন্য কোথাও চলে যেতে হয়৷’
লিসবন শহরের কেন্দ্রস্থলে একটি স্কুলে এমনই একঝাঁক বিড়ালের নতুন কলোনি হয়ে উঠেছে৷ সারাক্ষণ বিড়াল ঘোরাফেরা করছে৷
স্কুলের সহকারী প্রিন্সিপাল ও শিক্ষিকা হিসেবে আঙ্গেলা লোপেস মনে করেন, এ ক্ষেত্রে সঠিক শিক্ষা অত্যন্ত জরুরি৷ তিনি বলেন, ‘আমার মতে, প্রাণীদের প্রতি শ্রদ্ধাবোধ শেখাও জরুরি৷ আমরা ভালো নাগরিক সম্পর্কে অনেক কথা বলি৷ প্রাণী সম্পর্কে সচেতনতা সৃষ্টির এটা ভালো উপায়৷’
আনা দুয়ার্তেও এ বিষয়ে সম্পূর্ণ একমত৷ ‘ক্যাট পেট্রোলিং’ এই উদ্যোগের সূচনা হতে পারে৷ তিনি বলেন, ‘আমার মতে, এটা সূচনামাত্র৷ সমস্যার সমাধান করতে আমাদের আরো মানবিক ও পরিবেশবান্ধব সমাধানসূত্র চাই৷’