সাবধান : ভিটামিনও হতে পারে মৃত্যুর কারণ!
কলকাতা টাইমস :
শারীরিক দুর্বলতা বা শক্তিবৃদ্ধির জন্য ভিটামিন ট্যাবলেট, ক্যাপসুল, সিরাপ বা ইনজেকশনের ব্যবহার নতুন কিছু নয়। পাড়া-মহল্লার ওষুধের দোকানেও হরহামেশাই ভিটামিন বেচাকেনা হয়। ভিটামিন নেয়ার জন্য অনেকেই ডাক্তারের পরামর্শও নেয়ার প্রয়োজন মনে করেন না। ভিটামিন ট্যাবলেট, ক্যাপসুল, সিরাপ বা ইনজেকশন শরীরের জন্য ভালো- তাতে কোনোই সন্দেহ নেই। কিন্তু প্রয়োজনের অতিরিক্ত ভিটামিন হয়ে উঠতে পারে মৃত্যুর কারণও! সম্প্রতি ভারতের দিল্লিতে ১০ বছর বয়সী এক শিশুর মৃত্যুতে ভিটামিনেরও এমন অন্ধকার দিকটি আবারও উঠে এসেছে আলোচনায়।
খবরে বলা হয়েছে, ভিটামিন ডি-এর ওভারডোজের কারণেই মৃত্যু হয়েছে ওই শিশুর। ইন্ডিয়ান জার্নাল অব পেডিয়াট্রিকসেও ওই ঘটনার উল্লেখ করা হয়েছে। আর তাতেই ডাক্তাররা ভিটামিন ব্যবহারে সবাইকে সতর্ক হওয়ার পরামর্শ দিয়েছেন।
ডাক্তাররা জানিয়েছেন, প্রতিদিন ১০০০ থেকে ২০০০ আইইউ (ইন্টারন্যাশনাল ইউনিট) পর্যন্ত ভিটামিন ডি গ্রহণ করা যেতে পারে। তবে তার জন্যও ডাক্তারের পরামর্শ গ্রহণ করা প্রয়োজন। আর পরীক্ষা-নিরীক্ষার পর ভিটামিন ডি-এর ঘাটতি অতিরিক্ত পাওয়া গেলে প্রয়োজন হলে ডাক্তার দিনে ৬ লাখ ইউনিট পর্যন্ত ব্যবহারের অনুমতি দিতে পারেন। তবে সেটাও সাধারণত দেয়া হয় স্বল্প মেয়াদে। ড. গোপাল বলেন, ‘ঘাটতি পূরণ হওয়ার আগ পর্যন্ত সপ্তাহ বা মাসে একবার ৬০ হাজার ইউনিটের ডোজ দেয়া যেতে পারে। আর ৬ লাখ ইউনিটের ডোজ দেয়া হয় সাধারণত ৬ মাসে একবার। কিন্তু ৬ লাখ ইউনিটের ডোজ নেয়ার সঙ্গে সঙ্গেই শরীরে শক্তি চলে আসে। ফলে ভালো বোধ করার জন্য অনেকেই প্রতিদিন ৬ লাখ ইউনিটের ডোজ নিতে থাকেন।’ দিল্লির ওই শিশুর ক্ষেত্রেও একই ঘটনা ঘটেছিল। তাকে প্রতিদিন ১ হাজার ইউনিটের ডোজ নেয়ার পরামর্শ প্রেসক্রিপশনে থাকলেও তাকে নিয়মিত দেয়া হয় ৬ লাখ ইউনিটের ডোজ।
পুষ্টিবিদ শিনি চন্দন বলেন, ভিটামিন ডি একমাত্র ভিটামিন যা হরমোন হিসেবেও কাজ করে থাকে। এমনকি এটা যতটা ভিটামিন তার চেয়েও বেশি হরমোন। তাই ভিটামিন ডি নিতে চাইলে ডাক্তারের পরামর্শ আগে নিতে হবে। অনেক ফিটনেস ট্রেইনার ভিটামিন ডি নেয়ার পরামর্শ দিয়ে থাকেন। এই চর্চাকে অনিরাপদ মনে করেন শিনি চন্দন। অর্ক সেন্টার ফর হরমোনাল হেলথের ড. আর ভরত বলেন, ভিটামিন ডি খুব সহজেই যেকোনো ওষুধের দোকানে পাওয়া যায়। কিন্তু শরীরে ভিটামিন ডি-এর মাত্রা পরিমাপ করার পরীক্ষা-নিরীক্ষা অত্যন্ত ব্যয়বহুল। এটাকেই তিনি উদ্বেগের প্রধান একটি কারণ হিসেবে মনে করছেন। তিনি বলেন, ‘এতে করে যেটা হয়, মানুষ তার শরীরে এই ভিটামিনের প্রয়োজন আছে কি-না তা না জেনেই এটা নিতে থাকে।’
তিনি বলেন, শাক-সবজি, মাছ-মাংস, ফল-মূল বা সূর্যের রোদের মতো প্রাকৃতিক উৎস থেকে যে ভিটামিন পাওয়া যায় সেটাই ভিটামিনের সর্বোত্তম রূপ। তাই ভিটামিন ওষুধের চেয়ে খাবার থেকেই ভিটামিনের অভাব পূরণ করার চেষ্টা করা উচিত বলে মনে করেন তিনি। আর ওষুধ গ্রহণ করতে চাইলেও সেক্ষেত্রে ডাক্তারের পরামর্শ তো নিতেই হবে। নিজের খেয়াল-খুশি মতো তাই ভিটামিন ওষুধ খাওয়ার অভ্যাস বন্ধ করাই ভালো।