এ বিশেষ কারণেই দেহের মোট আট জায়গায় বাঁকা ছিল তার!
ঋষি আরুণির এক আশ্রম ছিল। সেখানে বৈদিক পাঠ নিতেন তাঁর কন্যা সুজাতা। তপোবনের শিষ্যদের মাঝে একজন ছিলেন কাহোড়া। আরুণির সম্মতিতেই সুজাতার পাণিগ্রহন করেন ব্রাহ্মণপুত্র কাহোড়া।
বিয়ের পরে অন্তঃসত্ত্বা হলেন সুজাতা। মায়ের গর্ভে থাকতে থাকতেই বেদজ্ঞান লাভ করতে থাকেন সেই শিশু। একদিন একসঙ্গে স্তোত্রপাঠ করছিলেন সুজাতা-কাহোড়া। সংস্কৃত শব্দ উচ্চারণে ভুল করে ফেলেন কাহোড়া। মায়ের গর্ভ থেকে পিতার ভুল শুধরে দেন অনাগত শিশু।
এত স্পর্ধা ! কুপিত হলেন কহোড়া। অভিশাপ দিলেন। এই শিশু যখন ভূমিষ্ঠ হবে‚ তাঁর দেহে থাকবে মোট আটটি বক্র বা বাঁক।
যথাসময়ে জন্ম নিলেন সুজাতার পুত্রসন্তান। বিফলে যায়নি পিতার অভিশাপ। দেহটি মোট আটটি স্থানে বাঁকা ছিল। সেই থেকে তাঁর নামকরণ হয় অষ্টাবক্র। দুই মহাকাব্য রামায়ণ‚ মহাভারত ছাড়াও বিভিন্ন পুরাণে উল্লেখ আছে অষ্টাবক্র মুনির।
বাল্মীকি রামায়ণে বর্ণিত‚ রাজা দশরথ স্বর্গ থেকে ফিরে এসে পুত্র রামচন্দ্রকে শোনাচ্ছেন অষ্টাবক্র-কাহোড়া উপাখ্যান। অধ্যাত্ম রামায়ণে আছে‚ অরণ্যপর্বে এক কবন্ধ এসে রামলক্ষ্মণকে বলছেন‚ তিনি আসলে ছিলেন এক গন্ধর্বকুমার। অষ্টাবক্র মুনিকে দেখে হেসেছিলেন বলে অভিশপ্ত হন। পরে ক্রোধ প্রশমিত হলে অষ্টাবক্র বলেছিলেন ত্রেতা যুগে রামচন্দ্র এসে তাঁকে শাপমুক্ত করবেন। তাই তিনি রামচন্দ্রের আশীর্বাদ নিতে এসেছেন। যাতে শাপমুক্ত হয়ে আবার কবন্ধ থেকে গন্ধর্বকুমার হতে পারেন।
পুরাণে বলা হয়েছে‚ একবার রাজা জনকের সঙ্গে সাক্ষাৎ করতে গিয়েছিলেন অষ্টাবক্র মুনি। কিন্তু তাঁর আকার-আয়তন দেখে রাজা জনক প্রথমে বেশি গুরুত্ব দেননি। স্থির করেন সভাপণ্ডিত বন্দিনের সঙ্গে নবাগতর বাক-লড়াই দেখবেন। সেইমতো শুরু হল মৌখিক দ্বন্দ্ব। শেষ পর্যন্ত জয়ী হলেন অষ্টাবক্র মুনিই।
তাঁর রচনার মধ্যে সর্বাপেক্ষা উল্লেখযোগ্য হল অষ্টাবক্র গীতা। অর্থাৎ অষ্টাবক্রের সঙ্গীত বা গান। সেখানেও বিশদে আলোচিত হয়েছে আত্মন ও ব্রহ্মণের মধ্যের সম্পর্ক। প্রাসঙ্গিকভাবেই এসেছে দ্বৈত ও অদ্বৈতবাদ। এই গ্রন্থের আর এক নাম অষ্টাবক্র সংহিতা।