September 29, 2024     Select Language
৭কাহন Editor Choice Bengali KT Popular সফর

যক্ষের মায়া : এই কুয়োর সিঁড়িতে পা দিলেই মৃত্যু অনিবার্য!

[kodex_post_like_buttons]

কলকাতা টাইমস :

মায়া বা মোহ মানুষকে সহজে ছাড়ে না। জীবদ্দশায় জড়িয়ে রাখে আষ্টেপৃষ্ঠে। মৃত্যুর পরেও যে রেহাই দেয়, তেমনটা কিন্তু নয়। প্রেততত্ত্ববিদরা তাই বলে থাকেন, কোনও কিছুর উপর যদি অতিরিক্ত মোহ থাকে, তবে তার টানে মৃত্যুর পরেও মুক্তি পায় না আত্মা।

তখন সে ওই মোহের সম্পদের কাছে ঘোরাফেরা করে প্রেতযোনি অবলম্বন করে! আবার, এমন অনেক উদাহরণও দেখা গিয়েছে, যেখানে স্রেফ ভালবাসার মানুষটিকে দেখার জন্য মৃত্যুর পরেও পৃথিবী ছেড়ে যেতে পারেনি আত্মা। দুই ক্ষেত্রেই বিচ্ছেদজাত অতৃপ্তি তাকে মুক্তি দেয়নি।

এর বাইরেও পার্থিব সম্পদ মানুষকে পৌঁছে দিতে পারে প্রেতদশায়। সেই সম্পদ পাহারা দেওয়ার জন্যই পৃথিবী ত্যাগ করতে পারে না মানুষের আত্মা। সে সব ক্ষেত্রে একটি বিশেষ অনুষ্ঠানের মাধ্যমে সমস্ত সম্পত্তি অর্পণ করা হয় ভবিষ্যত প্রেতের হাতে। এই প্রথাকে বলা হয় যখ। গুরগাঁওয়ের ফারুখ নগরের দুর্গ আজও দাঁড়িয়ে রয়েছে এই যখ প্রথার সাক্ষী হয়ে।

সেখানে কী ভাবে যখ গুপ্তধন রক্ষা করে চলেছে, তা জানার আগে যখ প্রথার দিকে একটু তাকাতে হবে। যখ শব্দটির উৎপত্তি সংস্কৃত যক্ষ থেকে। যক্ষরা ধন-সম্পদের প্রহরী। পৃথিবীর যাবতীয় ধন-সম্পদ কুক্ষিগত রয়েছে তাদের রাজা কুবেরের কাছে। তাদের অনুমতি ছাড়া তাই ধন-সম্পদের লেনদেন সম্ভব নয়।

কিন্তু, এই যখ প্রথা একটু অন্য। এখানে জীবন্ত মানুষকেই পরিণত করা হয় যখে!
জানা যায়, ধন-সম্পদ রক্ষার জন্য অতীতে অনেক বাসস্থানেই থাকত একটি করে পাতালঘর। সেই পাতালঘরে সমস্ত ধন-সম্পদ রেখে দেওয়া হত। আর রেখে দেওয়া হত একটি বালককে। একটি বিশেষ পূজার্চনার মাধ্যমে তাকে উৎসর্গ করা হত সমস্ত সম্পদ। এবং, তাকে দিয়ে প্রতিজ্ঞা করিয়ে নেওয়া হত, সেই বংশের উত্তরাধিকারী ছাড়া আর কাউকেই সে এই সম্পদের ধারে কাছেও ঘেঁষতে দেবে না!

পূজা এবং প্রতিজ্ঞা শেষ হলে সম্পদ-সহ বালকটিকে ফেলে রাখা হত সেই পাতালঘরে। বরাবরের জন্য বন্ধ করে দেওয়া হত পাতালঘরের প্রবেশপথ। বালকটিও একটা সময়ের পর খাবারের অভাবে, জলের অভাবে, আলো-বাতাসের অভাবে প্রাণত্যাগ করত ওই পাতালঘরে। কিন্তু, তার আত্মা মুক্তি পেত না। কেন না, সে সম্পদ রক্ষা করার জন্য প্রতিজ্ঞাবদ্ধ। যক্ষদের কাজ এক্ষেত্রে করছে বলেই তাকে বলা হত যখ।

কাহিনি বলে, গুরগাঁওয়ের ফারুখ নগরের দুর্গেও না কি বাস করে এমনই এক যখ। সেখানে গচ্ছিত রয়েছে অমূল্য গুপ্তধন! কিন্তু, তা বর্তমানে পরিণত হয়েছে যখের ধনে। কেউ সেই সম্পদ উদ্ধারের চেষ্টা করতে পারেনি।

এও জানা যায়, দুর্গের ঠিক কোথায় রয়েছে সেই গুপ্তধন। রয়েছে এক কুয়োয়। সেই কুয়োর নাম গৌস আলি শাহ বাওলি। অনুমান করা হয়, তাঁর বংশের ধন-সম্পদই তিনি যখ প্রথার মাধ্যমে সুরক্ষিত রেখেছিলেন এখানে।

সত্যি বলতে কী, যে সব ঐতিহাসিক স্থাপত্য এখনও নিজেদের সত্ত্বা অক্ষুণ্ণ রাখতে পেরেছে, কালের প্রকোপে বড় একটা ক্ষতিগ্রস্ত হয়নি, সেই সব পুরাকীর্তি নিয়েই গুপ্তধনের গুজব শোনা যায়। গৌস আলি শাহের বাওলিও সেই তালিকাভুক্ত হতেই পারত! হল যে না, তার কারণটা ভৌতিক! মৃত্যুমিছিলের ঘটনা জুড়ে গেল তার গায়ে।

ঘটনা বলছে, গৌস আলি শাহের বাওলি থেকে গুপ্তধন উদ্ধারের চেষ্টা কম বার হয়নি। অত্যুৎসাহীরা যেমন মাঝে-মধ্যেই কুয়োয় নেমে গুপ্তধন উদ্ধারের চেষ্টা করেছেন, তেমনই অভিযান চালানো হয়েছে সরকারি তরফেও। পরিণাম কিন্তু এক হয় ঘটনাস্থলেই হৃদরোগে মৃত্যু, নয় তো আচমকা অসুস্থ হয়ে পড়ে রোগশয্যা ছেড়ে আর না-ওঠা! মৃত্যুমিছিলের এই অভ্রান্ততা দেখে বর্তমানে সতর্কতা জারি করা হয়েছে ফারুখ নগরের দুর্গে। কাউকে আর নামতে দেওয়া হয় না বাওলিতে।

তবে, লোভ বড় বিষম বস্তু! সে সহজে মানুষকে ছাড়ে না। কে বলতে পারে, ভবিষ্যতেও কেউ গৌস আলি শাহের বাওলি থেকে গুপ্তধন উদ্ধারের চেষ্টা করবেন না!
করলে? লোভে পাপ, পাপে মৃত্যু! আর কী বা বলা যায়!

Related Posts

Leave a Reply