যে হাতে জুতো সেলাই সেই হাতে এমন সৃষ্টি, শুনলে মাথা নত করবেন !
কলকাতা টাইমস :
পাকিস্তানের ফয়সলাবাদের ছোট শহর রোদালা। সেখানে বাজার এলাকায় একটু হাঁটলেই চোখে পড়বে রাস্তার ধারে বসে একমনে জুতা সেলাই করছেন মুনাওয়ার শাকিল। বাবা ছিলেন মুচি। কিন্তু মুনাওয়ারের মাত্র ১৩ বছর বয়সেই বাবা মারা যান। তখন থেকে মুনাওয়ার পথের ধারে জুতা সেলাইয়ের কাজ করেন। বলা বাহুল্য, পড়াশোনা করেননি। পরিবারের খিদে মেটাতে গিয়ে শৈশব বিসর্জন দিয়েছেন।
পাকিস্তান হোক বা ভারত, বাংলাদেশ এ পর্যন্ত গল্পটা খুব চেনা। কিন্তু ঠিক এখান থেকেই মুনাওয়ারের গল্পটা একেবারে অন্য রকম হতে যাচ্ছে। তিন দশক ধরে মুনাওয়ার মুচির কাজ করছেন। রোজগার বাড়াতে সকাল বেলায় বাড়িতে-দোকানে খবরের কাগজ ফেরি করেন। সব মিলিয়ে দিনে তিনশ’ টাকার বেশি আয় হয় তার। তবু একটি জিনিস ছাড়েননি তিনি। কবিতা লেখা।
বাবা মারা যাওয়ার পরেই সাদা কাগজে আঁকাবাঁকা হাতের লেখায় একটি কবিতা লিখেছিলেন। তার পর থেকে ক্রমাগত লিখে গিয়েছেন। জন্ম, মৃত্যু, প্রেম, সৃষ্টির্কতা— একের পর এক অবলীলায় লিখে গিয়েছেন তার অনুভূতি। ছন্দে, ভাষ্যে যা এক সোনার খনি। ২০০৪ সালে কোনোক্রমে টাকাপয়সা জোগাড় করে প্রথম বইটি ছাপান। এখনো প্রতিদিনে আয় থেকে প্রকাশককে দেওয়ার জন্য ১০ টাকা করে আলাদা করে রাখেন।
প্রযুক্তির দাপটে বই বিক্রি কমে গিয়েছে। কিন্তু মুনাওয়ারের কবিতার বইয়ের বিক্রি কমেনি। তার পাঁচটি বই পুরস্কৃত হয়েছে। চার দিক থেকে তার বইয়ের তারিফ হচ্ছে পাকিস্তানে। তার গুণমুগ্ধ ছড়িয়ে বিদেশেও। কিন্তু কারো থেকে বিন্দুমাত্র সাহায্য তিনি নেননি। অনেকেই তাকে অর্থনৈতিক সাহায্য করতে চেয়েছেন। মুনাওয়ার শাকিল তাদের হাসিমুখে ফিরিয়ে দিয়েছেন। সকালে খবরের কাগজ ফিরি, তার পরে মুচির কাজ এবং রাতে কবিতা— মুনাওয়ার শাকিল আছেন ভালই। ক্ষুধার বাস্তব আর কাব্যের কল্পজগতে যার এমন অনায়াস যাতায়াত, পার্থিব সুখ তাকে টানবে কী করে?