ভারতের সঙ্গে যুদ্ধ বাধলে চীনের সর্বনাশ, কেন জানেন
কলকাতা টাইমস :
হাতে বন্দুক, পিছনে সারিবদ্ধ কামান। চোখে চোখ রেখে ট্রিগারে আঙুল দিয়ে দাঁড়িয়ে কয়েক হাজার ভারতীয় ও চীনা সেনা। এই হচ্ছে লাদাখ সীমান্তে পরিস্থিতি। বারুদের স্তূপে একটি মাত্র স্ফুলিঙ্গের অপেক্ষা, মুহূর্তে ঘটবে সর্বগ্রাসী যুদ্ধের বিস্ফোরণ।
যার পরিণতি হবে ভয়াবহ। তবে সামরিক ও অর্থনৈতিক দিক থেকে এগিয়ে থাকলেও ভারতের কাছে নাস্তানাবুদ হবে চীন, এমনটাই মনে করছেন ভারতের সামরিক বিশেষজ্ঞদের একাংশ। এই প্রতিবেদনে জেনে নিন কেন আপোষ করতে বাধ্য হবে চীন।
১) চীনের জ্বালানির জোগান আটকে দেবে ভারত: চীনা সেনা ও শিল্পাঞ্চল হচ্ছে চীনের শক্তির উৎস। তবে একই সঙ্গে এরাই বেজিংয়ের দুর্বল জায়গা। কারণ হচ্ছে এই দুই বাহুকে কার্যক্ষম রাখতে প্রয়োজন বিশাল পরিমাণের জ্বালানির। চীনাফৌজ হাজার-হাজার শো ট্রাক, প্রচুর হাউৎজার কামান, বিমান বিধ্বংসী কামান, বাঙ্কার বিধ্বংসী ক্ষেপণাস্ত্র, মিসাইল লঞ্চিং প্যাড, রকেট লঞ্চিং প্যাড, শত্রুপক্ষের বিমান চিহ্নিতকারী রেডার ইউনিট, অ্যান্টি ট্যাঙ্ক গ্রেনেড, মোবাইল কমিউনিকেশন সিস্টেম ইত্যাদি ব্যবহার করে।
এর জন্য প্রয়োজন পেট্রল, ডিজেল-সহ প্রচুর পরিমাণের অন্যান্য জ্বালানির। এছাড়াও রয়েছে শিল্পাঞ্চলগুলিতে জ্বালানির চাহিদা। উল্লেখ্য, চাহিদা মেটাতে মূলত পশ্চিম এশিয়া ও আফ্রিকা থেকে জ্বালানি আমদানি করে চীন। এই জ্বালানির ৮০ শতাংশ জলপথে মালাক্কা প্রণালী হয়ে চীনে পৌঁছায়। আর এখানেই বিপাকে চীন। মালাক্কা প্রণালীর নিকটেই নিকোবর দ্বীপপুঞ্জে রয়েছে ভারতের বিশাল নৌবহর। ফলত সহজেই চীনের জ্বালানি আমদানি বন্ধ করে দিতে সক্ষম ভারত। আর জ্বালানি না থাকলে যুদ্ধ চালানোর ক্ষমতা হারাবে চীন। মনে করা হয়, এই ভয়েই ১৯৭১ ও ১৯৯৯ সালে কারগিল যুদ্ধে পাকিস্তানের পাশে দাঁড়ায়নি চীন।
২) উপমহাদেশে চীনা পরিকাঠামো থাকবে ভারতীয় সেনার নিশানায়: ডোকলামে যুদ্ধ বাধল ভারতের যেকোনও জায়গায় হামলা চালাবে চীন। কিছুদিন আগে এমনটাই হুঁশিয়ারি দিয়েছে বেজিং। তবে এক্ষেত্রেও আদতে ক্ষতি হবে চীনেরই। ভারতীয় মিসাইলের আওতায় থাকা বেশ কিছু জায়গায় প্রচুর বিনিয়োগ ও পরিকাঠামো নির্মাণ করেছে চীন।
যেমন, ‘চায়না-পাকিস্তান ইকোনমিক করিডর’ (সিপিইসি)। পাক-অধিকৃত কাশ্মীরে ওই প্রকল্পের আওতায় প্রায় ৬২ বিলিয়ন মার্কিন ডলার বিনিয়োগ করেছে চীন। এছাড়াও বাংলাদেশের চট্টগ্রাম বন্দর, শ্রীলঙ্কার হামবানটোটা ও পাকিস্তানের গদর বন্দরে বিশাল অঙ্কের বিনিয়োগ করেছে সে দেশ। যুদ্ধ লাগলে ওই বন্দরগুলিকে ঘিরে ফেলে অচল করে দেবে ভারতীয় নৌসেনা। হামলার মুখে পড়বে সিপিইসি। এমতাবস্থায় প্রবল ক্ষতির সন্মুখীন হবে চীনা অর্থনীতি। তাই আদতে লোকসান হবে চীনেরই।
৩) কূটনৈতিকস্তরে বিপাকে পড়বে বেজিং: জাপান, ভিয়েতনাম, ফিলিপাইন, দক্ষিণ কোরিয়া-সহ প্রায় ১৪টি প্রতিবেশী দেশের সঙ্গে সীমা বিবাদে জড়িয়ে রয়েছে চিন। ডোকলাম নিয়ে ভারতের সঙ্গে যুদ্ধে জড়ালে, ওই দেশগুলির সমর্থন স্বাভাবিকভাবেই ভারতের সঙ্গে থাকবে। ফলত চাপে পড়বে বেজিং। এছাড়াও ভারত-সহ ওই দেশগুলির সঙ্গে ধাক্কা খাবে বাণিজ্যি।
উল্লেখ্য, ওই দেশগুলিতে বিশাল অঙ্কের পণ্য রপ্তানি করে চীন। ফলত বাণিজ্য বন্ধ হলে প্রবল ক্ষতিগ্রস্ত হবে কমিউনিস্ট দেশটি। এছাড়াও যুদ্ধ শুরু হলে দক্ষিণ-চীন সাগরে চীনের উপর চাপ সৃষ্টি করবে আমেরিকা ও জাপান। ফলে এই মুহূর্তে হুঙ্কার দিলেও আদতে যুদ্ধের পথে হাটবে না চীন বলেই মনে করছেন বিশেষজ্ঞরা।
৪) ভারত-আমেরিকা-জাপান বেষ্টনীতে গুঁড়িয়ে যাবে চীন: অর্থনৈতিক ও সামরিক শক্তির বলে বলীয়ান হয়ে এশিয়া মহাদেশের বেশ কয়েকটি দেশকে নিজের স্বার্থে ব্যবহার করার চেষ্টা করছে চিন। অর্থনৈতিকভাবে দুর্বল দেশগুলিকে টাকার টোপ দিয়ে দেনার ফাঁদে ফেলছে বেজিং। এইভাবেই শ্রীলঙ্কাকে ফাঁদে ফেলে হামবানটোটা বন্দর হাতিয়ে নিয়েছে কমিউনিস্ট দেশটি।
একইভাবে পাকিস্তানকে ‘ওয়ান বেল্ট ওয়ান রোড’ প্রকল্পে ব্যবহার করছে সে দেশ। তবে ভারতকে কোনও মতেই ফাঁদে ফেলতে পারেনি চীন। তাই ক্রমশ হুমকির পথে হাঁটছে তারা। কিন্তু ‘এই ভারত ১৯৬২-র ভারত নয়’ ভারতের স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী রাজনাথ সিংয়ের এই বয়ান যথেষ্ট গুরুত্বপূর্ণ। কারণ ভারত-চীন যুদ্ধ বাধলে, জাপান ও আমেরিকা এগিয়ে আসবে দিল্লির সমর্থনে। এবং একসঙ্গে এই তিন মহাশক্তিকে টেক্কা দেওয়া চীনের পক্ষে কোনও মতেই সম্ভব নয়। ফলত মাথা নোয়াতে বাধ্য হবে বেজিং।