এক সময়ের ময়দানের রাজা এখন তার দিন কাটছে চরম দুরবস্থায়
ময়দানের অনেকেই তাঁর নাম শুনলে এখন পাঁচবার ভাববেন। আসলে তিনি একেবারেই হারিয়ে গিয়েছেন কলকাতা ফুটবল থেকে। অথচ একটা সময়ে ইস্টবেঙ্গল-মোহনবাগানে দাপটের সঙ্গে খেলেছেন। কিন্তু এখন ক’জনই বা রতন দত্তের নাম এখন আর মনে রেখেছেন!
কেমন আছেন রতনবাবু? খবর নিয়ে জানা গেল, অত্যন্ত আর্থিক দুরাবস্থার মধ্যে দিন কাটাতে হয়েছে তাঁকে। শোনা যায়, কিছু ধারদেনাতেও জড়িয়ে পড়েছিলেন তিনি। তবে পাড়ার বন্ধুরা পাশে দাঁড়িয়েছিলেন। কিন্তু আর্থিক অনটন রয়ে গিয়েছে এখনও। রাজ্য সরকারের দ্বারস্থ হওয়ারও চেষ্টা করেছিলেন। কিন্তু কোনও লাভ হয়নি। সমরেশ চৌধুরীর সঙ্গে মাঝমাঠে খেলা রতন দত্ত বলছিলেন, ‘‘আমি নিজের কথা কাউকে বলতে পারি না। তবে এটা ঠিকই যে, খুব খারাপ সময়ের মধ্যে দিয়ে আমাকে যেতে হয়েছে। এখনও তার জের চলছে। পাড়ার একজনের সাহায্যে ক্রীড়ামন্ত্রীর সঙ্গেও যোগাযোগের চেষ্টা করেছিলাম। কিন্তু শেষপর্যন্ত ক্রীড়ামন্ত্রীর কাছে পৌঁছতে পারিনি আমি।’’
মাঠে একেবারেই আসেন না। ফুটবল মাঠ থেকে যোগাযোগ বিচ্ছিন্ন করে দিয়েছেন পুরোপুরি। কিন্তু কেন? অভিমানে? কিছুক্ষণ থেমে থাকলেন ৬৯ বছরের প্রৌঢ়। তারপর ধীরে ধীরে বললেন, ‘‘আসলে কী বলুন তো, ক্লাবে গেলে কেউ ভাবতে পারেন কোনও উদ্দেশ্য নিয়ে এসেছি। পুরনো কর্তারাও আর নেই। কে কী ভাববেন। সে কারণেই আর কোথাও যাই না। ফুটবল নিয়ে আলোচনা থেকেও যতটা সম্ভব দূরে থাকি।’’ কথাগুলো বড় করুণ শোনাল।
১৯৭৭ লিগের ঐতিহাসিক ডার্বিতে ইস্টবেঙ্গল জিতেছিল ২-০ গোলে। মোহনবাগান মাঠে মোহনবাগানকে হারিয়ে। ম্যাচটির ঐতিহাসিক গুরুত্ব এই কারণে ছিল, ওই ম্যাচটি প্রথম টেলিভিশনে সম্প্রচারিত হয়েছিল। সেই ম্যাচে ইস্টবেঙ্গলের মাঝমাঠে কার্যকরী ভূমিকা নিয়েছিলেন রতন দত্ত। বলছিলেন, ‘‘সেবার ইস্টবেঙ্গল ছেড়ে বেশির ভাগ তারকা ফুটবলার মোহনবাগানে চলে গিয়েছিল। মোহনবাগানে তখন খেলছে তরুণ বোস, সুধীর কর্মকার, শ্যাম থাপা, গৌতম সরকার, দিলীপ পালিত, সুব্রত ভট্টাচার্য। সেই তুলনায় ইস্টবেঙ্গল অনেক ভাঙাচোরা টিম ছিল। কিন্তু আমাদের কোচ অমল দত্ত বলে দিয়েছিলেন, যেভাবেই হোক ম্যাচটা জিততেই হবে। জেতার জন্য আমরা সর্বশক্তি দিয়ে ঝাঁপিয়েছিলাম। টিমগেম খেলেছিলাম। ওই ম্যাচটা আমার জীবনের অন্যতম সেরা ম্যাচ।’’ কথাগুলো বলার সময় একেবারে নস্ট্যালজিক হয়ে পড়লেন নিঃসঙ্গ রতনবাবু।
বাটা স্পোর্টস ক্লাব দিয়ে পেশাদার ফুটবলে হাতেখড়ি। তারপর বিএনআরে খেলেছেন। তবে ১৯৭৭-এর শেষে পাড়ার ক্লাব নাকতলা উদয়ন সঙ্ঘের জোরাজুরিতে খেলতে গিয়ে হাঁটুতে মারাত্মক চোট পান। সেই চোট পুরোপুরি কখনও সারেনি। যার ফলে খুব অল্প বয়সেই ফুটবলজীবন শেষ হয়ে গিয়েছিল রতন দত্তের। যদিও তারপরও জর্জ টেলিগ্রাফে এক বছর খেলেছিলেন। কিন্তু শেষপর্যন্ত ফুটবল মাঠ থেকে সরে আসতে বাধ্য হয়েছিলেন তিনি। এখন নানা সমস্যায় জড়িয়ে আছেন। তবে নিজের জন্য কখনও কোনও ক্লাবের কাছে সাহায্য চাননি। এতটাই প্রবল তাঁর আত্মসম্মান। তবে আশায় আছেন, রাজ্য সরকার যদি তাঁর দিকে কিছুটা সাহায্যের হাত বাড়িয়ে দেয় তবে হয়তো তাঁর আর্থিক সমস্যার কিছুটা সুরাহা হবে।