কাজের প্রতি আগ্রহ হারিয়ে ফেলেছেন? আপনারই দোষ!
কলকাতা টাইমস :
একসময় আমি একটি কসাইখানায় কাজ করতাম। আমার কাজ ছিল মেঝেতে জমা হয়ে থাকা রক্ত পরিষ্কার করা। একদিন আমার ম্যানেজার আমাকে জিজ্ঞেস করলেন, “তুমি এত সুখী কেন এবং এত দ্রুত কাজ কর কেন? অথচ তুমি কসাইখানার মতো একটি বাজে জায়গায় কাজ কর।”
আমি কিছুক্ষণ সতর্কতার সঙ্গে চিন্তা করলাম। এরপর আমি বললাম, “আমি সুখী কারণ আমার একটি কাজ আছে। আর আমি আমার কাজকে মূল্যায়ন করছি, কারণ আমি আমার বিয়ে এবং কলেজের জন্য অর্থ সঞ্চয় করছি। এখানে কাজ করা অবস্থায়ই আমি ফের আমার পছন্দমতো কোনো কাজ খুঁজে নেব। এবং তাতে উন্নতির সর্বোচ্চ চেষ্টা করব।” এটা সহজ ছিল না। কিন্তু ভবিষ্যতের জন্য সঞ্চয় করতে পেরে আমি সুখী। আর ওই কাসাইখানাটির মেঝেকে আমি আর যেকোনো কসাইখানার চেয়ে বেশি ঝকঝকে করে পরিষ্কার করি।
আপনিও কি আপনার বর্তমান কাজে একঘেয়েমিতে আক্রান্ত হয়েছেন। এবং আপনার পক্ষে যা দেওয়া সম্ভব তার মাত্র অর্ধেক দিচ্ছেন? যদি তাই হয়, তাহলে বুঝতে হবে যে কাজের প্রতি আপনি আপনার আবেগ হারিয়েছেন। এর প্রধান কারণ হলো স্বার্থপরতা। এ থেকে মুক্তির এবং কর্মজীবনে মনোযোগ ধরে রাখার জন্য এখানে রইল চারটি পরামর্শ।
১. সক্রিয়ভাবে এমন কিছুর সন্ধান করুন যা আপনি উপভোগ করতে পারবেন।
“আবেগ কর্মের মধ্যে নয়; বরং আমাদের নিজেদের মধ্যেই থাকে।” ‘হাউ টু ফাইন্ড প্যাশন ইন ইউর জব’ শিরোনামের একটি নিবন্ধে এমনটিই বলেছেন, টিনা সু। টিনা বলেন, “হয় আমরা যেখানে আছি সেখানেই এটিকে খুঁজে পাব আর নয়ত আমরা কখনোই তা খুঁজে পাব না। শুধু আমাদের নিজেদের মধ্যেই আমাদের আত্মার আবেগটি বিকশিত হতে পারে। আর সেই আবেগকে উসকে দেওয়ার সেরা স্থানটি আপনি এখন যেখানে আছেন সেটিই।”
সুতরাং নিজের এবং বর্তমান কাজের মধ্যেই সেই আবেগটি খুঁজে নিন। আপনি যেখানে আছেন সেখান থেকেই যদি নিজের মধ্যে আবেগ উসকে দিতে পারেন তাহলে বাইরের জগত নিজেই এক অলৌকিক এবং মহৎ উপায়ে আপনি যে নতুন ব্যক্তি হয়ে উঠছেন তার সঙ্গে নিজেকে মানিয়ে নেওয়ার উপায় তৈরি করে নেবে।
২. রুটিনের বাইরে বেরিয়ে আসুন।
আপনি যদি নিজের আবেগকে পুনঃআবিষ্কার করতে চান তাহলে এখনই নিজের সীমিত গণ্ডির বাইরে বেরিয়ে আসুন। এবং আপনার দিগন্ত প্রসারিত করুন। লোকে প্রায়ই নিজেদের আরামদায়ক গণ্ডির মধ্যেই নিজেকে সীমাবদ্ধ রাখতে চায়। এবং এর বাইরে বের হতে চায় না। আপনিও যদি তেমনই হন তাহলে নিজের চিন্তার সীমা ভেঙে ফেলার জন্য ভিন্ন কিছু করুন।
“আবেগ বিরল একটি বিষয়; এটি একরাত্রি অবস্থানের মতো,” বলেছেন, থাই নগুয়েন। ‘সেভেন ওয়েজ সাকসেসফুল অ্যান্ড ফুলফিলড পিপল থিঙ্ক ডিফারেন্টলি’, শিরোনামের নিবন্ধে এ কথা বলেন তিনি। তিনি বলেন, “আবেগ গরম, এটি পোড়ায়। প্রতিদিনই আপনি তাতে প্রবেশ করতে পারবেন না। কিন্তু প্রতিদিনই আপনার কৌতূহল রয়েছে এমন কিছু একটার পেছনে তাড়া করুন। সেটিকে অনুসরণ করুন। এটি একটি যোগসূত্র। আর এটি হয়ত আপনাকে আপনার আবেগের কাছে পৌঁছে দেবে।”
আপনি যদি কাজে আপনার আবেগ হারিয়ে ফেলে থাকেন, তাহলে নিজের চিন্তার সীমা ভেঙে ফেলুন এবং আপনার অফিসের পরিবেশও বদলে ফেলুন। এটা আপনার পছন্দ। আর আপনি নিজেই সিদ্ধান্ত নিতে পারবেন নিজের আবেগের জায়গাটা আপনি খুঁজে বের করবেন কিনা।
৩. জিজ্ঞেস করুন আপনি কীভাবে সহযোগিতা করতে পারেন।
সামনে এগিয়ে যান। আপনার বসকে জিজ্ঞেস করুন কী করে আপনি কম্পানির উন্নতিতে অবদান রাখতে পারেন। এতে প্রমাণিত হবে যে আপনি আন্তরিকভাবেই কম্পানির উন্নতি চান। এরপর আপনার বস আপনাকে হয়ত আরো উপভোগ্য এবং গুরুত্বপূর্ণ কোনো কাজে দেবেন। যাতে হয়ত কম্পানির আরো বেশি উপকার হবে। আজকাল সময়ের চেয়ে বরং আপনি বস্তুগতভাবে ঠিক কী অবদান রাখছেন তাকেই বেশি বড় করে দেখা হয়। আর আপনি কী পাবেন তার চেয়ে বরং আপনি কী অবদান রাখছেন সেটিই বেশি গুরুত্বপূর্ণ।
৪. নিজের কাজের কৃতিত্ব গ্রহণ করুন।
কাজের ব্যাপারে আবেগি হওয়ার সেরা উপায় হলো গুণগত মানসম্পন্ন কাজ সৃষ্টি করা, যেটি নিয়ে আপনি গর্ববোধও করতে পারবেন। গুণগত মান সংবলিত ও সুসম্পন্ন কাজ আপনার প্রতি মনোযোগ বাড়াবে এবং আপনি প্রশংসিতও হবেন। আর ওই প্রশংসার ফলে আপনি আপনার আবেগকেও আরো বাড়িয়ে তুলতে পারবেন। নিজের উৎপাদনশীলতা বাড়াতে প্রয়োজনে নতুন কোনো প্রশিক্ষণও নিতে পারেন।
কাজের প্রতি যদি আপনার সত্যিই আবেগ থাকে তাহলে আপনি প্রতিদিন সকালেই কাজে যাওয়ার ব্যাপারে উত্তেজনা বোধ করবেন। আপনার সহকর্মীরাও আপনার বাড়তি উদ্দীপনাটুকু লক্ষ করবেন। আপনি ঘরেও ফিরে আসবেন সুখী মনে। যা দেখে আপনার পরিবারও খুশি হবে। সুতরাং নিজের কাজটিকে উপভোগ করতে শিখুন এবং কাজের ব্যাপারে নিজের মধ্যে আবেগ ফিরিয়ে আনুন।