November 22, 2024     Select Language
Editor Choice Bengali KT Popular সফর

পাথর হয়েই দেখতে বাধ্য করবে এই পাথুরে বন

[kodex_post_like_buttons]
কলকাতা টাইমস :

পাথুরে বন। চীনারা ডাকে ‘শিলিন’ নামে। ইংরেজিতে স্টোন ফরেস্ট। পৃথিবীর আশ্চর্যজনক স্থানগুলোর একটি এই পাথুরে বন। চীনের ইউনান প্রদেশের কুনমিং শহর থেকে প্রায় ৯০ কিলোমিটার দূরে এর অবস্থান। প্রতিদিন নৈসর্গের এই পাথুরে বন দেখতে ঢল নামে হাজারো পর্যটকের।

নামের সঙ্গে পাথুরে বনের গঠনও অপূর্ব। নৈসর্গে ভরা চীনের এই পাথুরে বনের চারদিকে বৃক্ষ নয়, মাথা উঁচু করে বিশাল উচ্চতায় দাঁড়িয়ে আছে পাথর আর পাথর। যেদিকেই চোখ যায়, দৃষ্টিতে পড়ে সারি সারি পাথুরে বৃক্ষ। প্রায় ১০ কিলোমিটারজুড়ে এ পাথুরে বন। প্রকৃতির এক আশ্চর্য খেয়াল এই পাথুরে বন। নিবিড়ভাবে দেখলে টের পাওয়া যায় সারি সারি পাথরগুলোয় প্রকৃতি আপন মনে নানা কারুকাজ খোদাই করে রেখেছে। পাথুরে বনের মধ্যে রয়েছে ছোট ছোট অসংখ্য জলাশয়। সেখানে ছেড়ে দেওয়া হয়েছে গোল্ড ফিশ।

পাথুরে বনে পাথরের সঙ্গেই সব কিছুর বসবাস। এই পাথুরে বন অবলোকন করতে প্রতিবছর ছুটে আসে বিশ্বের হাজারো পর্যটক। চীনারাও বাদ যায় না। পাথুরে বনের সৌন্দর্য উপভোগ করতে অন্য প্রদেশগুলোর বহু চীনা প্রতিদিন এখানে ছুটে আসে। ফলে প্রতিদিন সকাল-সন্ধ্যা হাজারো মানুষের ভিড় লেগেই থাকে। আশ্চর্য এই পাথুরে বন নিয়ে রয়েছে নানা কাহিনি। এই বনকে ঘিরে রচিত হয়েছে অনেক গল্প ও সিনেমা। পৃথিবীজুড়েই চীনের এই পাথুরে বন নিয়ে পর্যটকদের আগ্রহ বিপুল।

গতকাল শুক্রবার পাথুরে বন পরিদর্শনে গেলে চোখে পড়ে হাজারো মানুষের ভিড়। টিকিট কাটতে যেমন দীর্ঘ লাইনে দাঁড়াতে হচ্ছে, বনে প্রবেশের গাড়িতে উঠতেও দাঁড়াতে হচ্ছে দীর্ঘ লাইনে। বাসে করে বনের ভেতরে প্রবেশের আগেই উঁচু উঁচু পাথুরে বৃক্ষগুলো হাতছানি দিয়ে ডাকে যেন পর্যটকদের। একসময় এই বনে প্রবেশের টিকিটের মূল্য ছিল ১৯০ ইউয়ান। পর্যটকদের বিপুল উপস্থিতি দেখে চীন সরকার বর্তমানে সেটিকে নামিয়ে এনেছে ১৬৫ ইউয়ানে। প্রবেশ টিকিট কাটার পর কাটতে হয় বাসের আরেকটি টিকিট। এর মূল্য ২৫ ইউয়ান। বাসে করে গন্তব্যস্থলে পৌঁছতেই চোখে পড়ে বিশাল পাথুরে বন। বাস থেকে নামতেই চোখে পড়ল একটি জলাশয়। তাতে দাঁড়িয়ে নানা ধরনের শত শত পাথর। জলাশয়টির পাশ ঘিরে চারদিকে দাঁড়িয়ে থাকা বিশাল বিশাল পাথরের বন। সে এক মনোহর দৃশ্য!

একটু সামনে এগোতেই চোখে পড়ে দুটি পাথর গা ঘেঁষে আটকে আছে। মনে হয়, এই বুঝি একটু দমকা হাওয়ায় পড়ে যাবে! কিন্তু যুগ যুগ ধরে এভাবেই ঝুলে আছে পাথর দুটি। তার পাশেই শত শত পাথর। কোনোটি একে অন্যের সঙ্গে, আবার কোনোটি নিঃসঙ্গ একা দাঁড়িয়ে।

পাথুরে বনের সৌন্দর্য উপভোগ করতে জলাশয়ের পাশ ঘেঁষে পাথর কেটে নির্মাণ করা হয়েছে ছোট ছোট সেতু। এই সেতুগুলোর নির্মাণকৌশলও মনোমুগ্ধকর।

জানতে চাইলে বনের একজন গাইড হু চেন ইয়া বলেন, পাথুরে এই বন নিয়ে রয়েছে নানা গল্প। বনে রয়েছে ওয়াচ টাওয়ার, যেখানে উঠে পুরো বনের বিশাল একটা অংশ অবলোকন করা যায়।

পাথুরে বন দেখতে আসা বাংলাদেশি শিক্ষার্থী ও চীনের কুনমিং সায়েন্স অ্যান্ড টেকনোলজি বিশ্ববিদ্যালয়ের ছাত্র খালেদ মাহমুদ সুজন বলেন, ‘বনটি সত্যি মনোমুগ্ধকর। আমি দ্বিতীয়বার এলাম। দাঁড়িয়ে থাকা শত শত পাথরের নৈসর্গিক সৌন্দর্য যে কাউকে বিমোহিত করে।’

বাংলাদেশের চট্টগ্রামের বাসিন্দা, কুনমিং ইন্টারন্যাশনাল কিন্ডারগার্টেন স্কুলের শিক্ষক মোহাম্মদ সাহেদ হোসেন (সোহেল) বলেন, ‘এই বনের খ্যাতি বিশ্বজুড়ে। এটিকে ঘিরে নানা গল্প-কাহিনি রচিত হয়েছে। আছে সিনেমাও। যতবার এখানে এসছি, মুগ্ধ হয়েছি। শত শত বছর ধরে কিভাবে একটির পর একটি বিশাল বিশাল পাথর মাথা উঁচু করে দাঁড়িয়ে আছে, তা সত্যি বিস্ময়কর।’

প্রচলিত রয়েছে, প্রেমিককে বিয়ে করতে চেয়েছিল উইগো আদিবাসী এক নারী, কিন্তু সমাজের বাধার মুখে প্রতিষ্ঠা পায়নি তার ভালোবাসা। ফলে শোকে জমে পাথর হয়ে যায় সে। মাথায় স্কার্ফ এবং হাতে ঝুড়ি নিয়ে ঘুরতে থাকা সেই নারীর মতো দেখতে একটি পাথরও রয়েছে এই বনে। এটির সামনে প্রতিবছর নানা অনুষ্ঠানের আয়োজন করে উইগো আদিবাসীরা।

চীনের ইউনান প্রদেশের এই পর্বতমালাটি হিমালয় পর্বতমালারই একটি অংশ। ছোট-বড়, উঁচু-নিচু বিচিত্র পাথর দিগ্বিদিক এমনভাবে ছড়িয়ে-ছিটিয়ে আছে, যেন এক গভীর পাথুরে জঙ্গল। ২০০৭ সালে ইউনেসকো শিলিন পাথুরে বনকে ওয়ার্ল্ড হেরিটেজ বা বিশ্ব ঐতিহ্যের অংশ ঘোষণা করে।

Related Posts

Leave a Reply