একেবারেই অস্বাস্থ্যকর নয় চিকেন বিরিয়ানি, যদি….
কলকাতা টাইমস :
আপনি কি চিকেন বিরিয়ানি ভক্ত। সে বাড়িতে হোক বা রাস্তায় দেখলেই আর নিজেকে থামাতে পারেন না। কিন্তু আবার স্বাস্থ্য নিয়েও চিন্তার শেষ নেই। আবার সঙ্গে যদি মা-ঠাকুমা থাকেন তাহলে তো একটাই কথা “এমন আনহেল্দি খাবার খেতে হয় না সোনা।” কিন্তু আমি যদি বলি এই উত্তরে ঠিকের থেকে ভুল রয়েছে বেশি, তাহলে কী বলবেন? মানে! আপনি কি বলতে চাইছেন চিকেন বিরিয়ানি একেবারেই অস্বাস্থ্যকর নয়? একেবারেই!
কারণ বিরিয়ানি বানানোর সময় যদি তাতে কয়েকটি জিনিস যোগ করা হয়, আর কিছু জিনিস মাইনাস, তাহলে বলবো বিরিয়ানির থেকে হেলদি খাবার দুটো হয় না। কেন এমন কথা বলছি তাই ভাবছেন তো? একটু খেয়াল করে দেখুন তো চিকেন বিরিয়ানি বানাতে মূলত কী কী লাগে। প্রথমত, চিকেন। সঙ্গে চাল, আলু, মশলা, তেল, ঘি এবং আরও কিছু। এবার আসল ছবিটি বোঝার চেষ্টা করুন।
চিকেন আমাদের শরীরে প্রোটিনের ঘাটতি দূর করার পাশাপাশি আরও নানাভাবে দেহের গঠনে সাহায্য করে। সাধারণ ভাতের জায়গায় যদি ব্রাউন রাইস ব্যবহার করা যায়, তাহলে শরীরে ফাইবারের ঘাটতি দূর হয়। সেই সঙ্গে মেলে আরও অনেক উপকার। আর ঘি কত ভাবে যে শরীরকে রোগমুক্ত রাখতে সাহায্য করে, তা নিশ্চয় আর বলে দিতে হবে না। এবার তেলের বিষয়ে আসা যাক। প্রচুর মাত্রায় তেল ব্যবহার না করে ঘিয়ের সঙ্গে যদি অল্প মাত্রায় অলিভ অয়েল ব্যবহার করা যায়, তাহলে শরীরের কোনও ক্ষতি হওয়ার আশঙ্কাই থাকে না। আর সেই সঙ্গে যদি বিরিয়ানি বানানোর সময় তাতে নানা স্বাদের সবজি যোগ করে দেওয়া যায়, তাহলে তো কথাই নেই! কারণ এমনটা করলে শরীরে ভিটামিন এবং মিনারেলের ঘাটতি দূর হয়। ফলে শরীর ভিতর থেকে শক্তিশালী হয়ে ওঠে। একেবারে শেষে আসা যাক জায়ফলের বিষয়ে। এই প্রকৃতিক উপাদানটি ছাড়া বিরিয়ানির স্বাদ অধরাই থেকে যায়। আর মজার বিষয় হল জয়ফলের শারীরিক উপকারিতার বিষয়ে জানলে আপনি অবাক হয়ে যাবেন। তাহলে বন্ধু সব মিলিয়ে কী দাঁড়ালো! সত্যিই তো এইভাবে দেখলে বিরিয়ানি যে আদপেই একটা স্বাস্থ্যকর খাবার, সে বিষয়ে মনে কোনও প্রশ্নই থাকে না! আরে দাঁড়ান দাঁড়ান। এখনও সবটা তো বলা হয়ে ওঠেন। মানে! মানে হল এই ভাবে একটু মডিফাই করে যদি বারিয়ানি বানিয়ে খেতে পারেন, তাহলে আরও অনেক উপকার মেলে। যেমন…
১.শরীর ভিতর থেকে শক্তিশালী হয়ে ওঠে: শরীরের বেঁচে থাকার জন্য জলের পর যে উপদানটির প্রয়োজন পরে, সেটি হল প্রোটিন। আর বিরিয়ানির অন্দরে লুকিয়ে থাকা মুরগির মাংসের পিসটা সেই প্রোটিনের চাহিদা মেটাতে বিশেষ ভূমিকা পালন করে থাকে। সেই সঙ্গে মুগির মাংসের অন্দরে থাকা আরও সব উপকারি উপাদান রোগ প্রতিরোধ ক্ষমতার উন্নতি ঘটানোর পাশাপাশি হজম ক্ষমতার উন্নতিতে এবং মস্তিকের ক্ষমতা বৃদ্ধিতে বিশেষ ভূমিকা পালন করে থাকে।
২. ত্বক সুন্দর হয়ে ওঠে: মানে! বিরিয়ানি খাওয়ার সঙ্গে ত্বকের সৌন্দর্যের কী সম্পর্ক? আসলে বন্ধু বিরিয়ানিতে যে আলুটা ব্যবহার হয়, সেটি এই কাজটি করে থাকে। আসলে আলুর মধ্যে থাকা ভাটিমানি সি এবং বি-কমপ্লেক্স আসল খেলটা দেখায়। আর এই দুটি উপাদানকে এক্ষেত্রে সঙ্গ দেয় পটাশিয়াম, ম্যাগনেসিয়াম, ফসফরাস এবং জিঙ্কের মতো পুষ্টিকর উপাদান। এবার বুঝেছেন তো আলুকে নিয়ে আমরা যতই বদনাম রটাই না কেন, আদতে কিন্তু এই প্রকৃতিক উপাদানটি আমাদের উপকারই করে থাকে।
৩. হার্ট চাঙ্গা হয়ে ওঠে: ব্যক্তিগতভাবে আমার খুব একটা পছন্দ না হলেও অনেকেই বিরিয়ানির সঙ্গে সেদ্ধ ডিম পরিবেশন করে থাকেন। এমনটা করাতে কোনও ক্ষতি তো হয়ই না, উল্টে অনেক উপকার মেলে। কারণ ডিমের অন্দরে থাকা একাধিক উপকারি উপাদান শরীরকে রোগমুক্ত রাখার পাশাপাশি দেহের অন্দরে জমতে থাকা খারাপ কোলেস্টেরলের মাত্রা কমাতে শুরু করে। ফলে হার্টের কোনও ধরনের ক্ষতি হওয়ার আশঙ্কা একেবারে কমে যায়।
৪. মশলার কেরামতি: বিরায়ানি বানাতে আদা, রসুন, পিঁয়াজ সহ একাধিক মশলাকে কাজে লাগানো হয়ে থাকে। এই সবকটির অন্দরেই প্রচুর মাত্রায় পুষ্টিকর উপাদান মজুত তো থাকেই, সেই সঙ্গে উপস্থিত থাকে অ্যান্টি-অক্সিডেন্টের মতো শক্তিশালী কম্পোনেন্টও, যা শরীর থেকে টক্সিক উপাদানদের বের করে দিয়ে সেদ্ধ ডিম মতো মারণ রোগকে দূরে রাখতেও বিশেষ ভূমিকা নেয়।
বানানোর সময় ব্যবহার করা চলবে না?
১. যতটা সম্ভব কম পরিমাণ তেল ব্যবহার করতে হবে। প্রয়োজনে অলিভ অয়েল ব্যবহার করা যেতে পারে।
২. সাধারণ চালের পরিবর্তে ব্রাউন রাইসকে কাজে লাগাতে হবে।
৩. বেশি করে শাক-সবজি ব্যবহার করতে হবে। বিশেষত পালং শাক, ধনে পাতা, ব্রকলি, ফুলকপি প্রভৃতি।
৪. ভুলেও রেড মিট ব্যবহার করা চলবে না। কারণ বেশি মাত্রায় পাঁঠার মাংস খেলে শরীরের বেশ ক্ষতি হয়।
৫. অনেকেই বিরিয়ানিকে সুস্বাদু করে তুলতে ডালডা ব্যবহার করে থাকেন। এমনটা করা একেবারেই উচিত নয়। কারণ ডালডার মতো উপাদান বেশি মাত্রায় শরীরে প্রবেশ করলে হার্টের মারাত্মক ক্ষতি হয়।