আজ সাত স্বামীর রক্ত ‘সাত বিবির গোড়’ এ

কলকাতা টাইমস :
একজন বা দু’জন নয়; নিজের সাত জন স্বামীকে খুন করেছিলেন সুজানা আন্না মারিয়া! প্রায় ২০০ বছর আগের ঘটনা। যা নিয়ে কান পাতলে আজও শোনা যায় নানান কথা। ডাচ আমলে চুঁচুড়া শহরে বসবাসকারী ওই নারীর জীবনের ওপর ভিত্তি করে সাহিত্যিক রাসকিন বন্ড লিখেছিলেন ‘সুজানাস সেভেন হাসবেন্ড্স’। সেই কাহিনি অবলম্বনে ২০১১ সালে মুক্তি পায় বিশাল ভরদ্বাজের সিনেমা ‘সাত খুন মাফ’। মুখ্য চরিত্রে অভিনয় করেছিলেন প্রিয়াঙ্কা চোপড়া।
ভারতের পশ্চিমবঙ্গের চুঁচুড়া প্রিয়নগরে জিটি রোডের পাশেই রয়েছে আন্না নামের ডাচ এই মহিলার সমাধি। ১৮০৯ খ্রিস্টাব্দে সুজানা আন্না মারিয়ার সমাধির ওপর তৈরি হয় স্মৃতিসৌধ। আজও ‘সাত বিবির গোড়’ নামেই পরিচিত সেটি।
কথিত রয়েছে, সুজানার সাত স্বামী ছিলেন। তাই তার পরিচিতি ছিল ‘সাত সাহেবের বিবি’ নামেও। যদিও তার কোনো প্রামাণ্য নথি এখনো পর্যন্ত পাওয়া যায়নি। লন্ডনে ইন্ডিয়া অফিস রেকর্ড অনুযায়ী জানা যায়, সুজানার দুই জন স্বামী ছিলেন। প্রথমে বাংলার ডাচ ডিরেক্টর পিটার ব্রুয়েস, পরে ইংরেজ ব্যবসায়ী থমাস ইয়েটসকে বিয়ে করেন তিনি।
এই ডাচ এই নারী যেমন সুন্দরী ছিলেন তেমনি ছিলেন ব্যক্তিত্বময়ী। শেষ ইচ্ছা অনুযায়ী তার প্রিয় বাগান আয়েশবাগে তাকে সমাহিত করা হয়। এই আয়েশবাগই এলাকার ইংরেজ এবং ওলন্দাজদের কবর স্থান হিসেবে বিবেচ্য হবে বলে উইল করে যান সুজানা। যদিও তার সেই ইচ্ছা পূরণ হয়নি।
সুজানার মৃত্যুর সময়েই চুঁচুড়া মিয়ারবেড়ে ডাচ সেমিট্রি’র গোড়াপত্তন হয়। তার জীবদ্দশায় কর্মকাণ্ড সম্পর্কে খুব একটা বেশি জানা না গেলেও প্রচলিত জনশ্রুতি রয়েছে যে তিনি দানধ্যান করতেন। তার উইল থেকে জানা যায়, তার ও স্বামীদের কবরসৌধ রক্ষণাবেক্ষণের জন্য মোট চার হাজার রুপি রেখে গিয়েছিলেন। বাকি অর্থ রাখা ছিল গরিব-দুঃখীদের দান করার জন্য।
ঐতিহাসিকদের মতে, এই কাজের জন্য সুজানা ‘রানি মা’ নামেও পরিচিত হন। তাই আয়েশবাগে সৌধটি রানি আন্না মারিয়ার কবর নামে পরিচিত। তবে ইতিহাস ও যাবতীয় দস্তাবেজ যাই বলুক, আন্না মারিয়ার চরিত্রটি রহস্যময় হয়ে ওঠেছে তাকে ঘিরে গড়ে ওঠা লোককথা নিয়ে। এমনটা দাবি করা হয় যে, সাত বার বিয়ে করেছিলেন আর বিয়ের পর প্রতিবার তার বিবাহিত স্বামী রহস্যজনকভাবে মারা যান। এমনকি এর পিছনে খুনের তথ্য দাঁড় করেন অনেকে, কিন্তু তার স্বপক্ষে কোনো প্রমাণ আজ অবধি মেলেনি।
১৮০৯ খ্রিস্টাব্দে নির্মিত সৌধটি বর্তমানে ভারতীয় পুরাতত্ত্ব বিভাগ দ্বারা সংরক্ষিত। চারদিক খোলা এই সৌধটি ইন্দো-ইওরোপিয়ান স্থাপত্যের নিদর্শন। চারদিক থেকে খাড়াই সিঁড়ি উঠে গেছে সৌধটির গর্ভগৃহে। গর্ভগৃহের দরজায় দু’দিকে দু’টি করেন্থিয়ান স্তম্ভ জোড়ায় জোড়ায় অবস্থান করছে। স্মৃতিসৌধটির মাথায় ইওরোপীয় ধাঁচের এক অর্ধ গোলাকৃতি গম্বুজ ও তার মাথায় একটি চূড়া রয়েছে। সৌধটির গঠনের জন্য এটিকে ডাচ মন্দির হিসেবেও চেনেন অনেকে। প্রাচীন সৌধের চূড়ার মাথায় স্মারকলিপি হিসেবে ডাচ ভাষায় খোদাই করে লেখা রয়েছে সুজানার নাম।
ভারতীয় পুরাতত্ত্ব বিভাগের কর্মী নীলাঞ্জন চক্রবর্তী বলেন, আন্না মারিয়ার স্মৃতিসৌধের ঐতিহাসিক গুরুত্ব থাকলেও স্থানীয়দের উৎসাহ সেভাবে চোখে পড়ে না। সন্ধ্যা নামতেই ওই চত্বরে শুরু হয় অসামাজিক কাজকর্ম। দিনে নিরাপত্তারক্ষী থাকলেও রাতে থাকে না। কোনো আলোর ব্যবস্থা নেই।