নবাবের মা-মাসিকে দীর্ঘদিন আঁধারে রেখে জলসমাধি দেওয়া হয় যেভাবে
রবার্ট ক্লাইভের নেতৃত্বে ইস্ট ইন্ডিয়া কোম্পানি বাংলার শাসনভার গ্রহণ করে। পলাশীর যুদ্ধে পরাজয়ের পর মীরজাফর রাজধানীতে পৌঁছে নবাবকে খুঁ’জে না পেয়ে চারদিকে লোক পাঠান। ১৭৫৭ সালের ৩ জুলাই সিরাজউদ্দৌলা মহানন্দা নদীর স্রোত অতিক্রম করে এলেও তাতে জোয়ার-ভাটার ফলে হঠাৎ জল কমে যাওয়ায় নাজিমপুরের মোহনায় এসে তার নৌকা চরে আট’কে যায়।
তিনি নৌকা থেকে নেমে খাবার সংগ্রহের জন্য একটি মসজিদের কাছে বাজারে আসেন। সেখানে কিছু লোক তাকে চিনে ফেলে অর্থের লোভে মীর কাশিমের সৈন্যবাহিনীকে খবর দেয়। কথিত আছে, এক ফকির এখানে নবাবকে দেখে চিনে ফেলে। ওই ফকিরকে নবাব এক সময় শা’স্তি দিয়েছিলেন। ফলে সেই ফকির নবাবের খবর জানিয়ে দেয়।
মীর কাশিমের বাহিনী এসে সিরাজউদ্দৌলাকে ব’ন্দি করে রাজধানী মুর্শিদাবাদে পাঠিয়ে দেয়। ব’ন্দি হওয়ার সময় নবাবের সাথে ছিলেন তার স্ত্রী লুৎফুন্নেসা বেগম এবং চার বছরের কন্যা উম্মে জহুরা। পরদিন ৪ জুলাই মীরজাফরের আদেশে তার ছেলে মীরনের তত্ত্বাবধানে মুহম্মদী বেগ নবাবকে হ’ত্যা করে। নবাবের মৃ’ত্যুর পর স্ত্রী লুৎফুন্নেসা এবং তার শিশুকন্যাকে মীর জাফরের ছেলে মীরনের নির্দেশে ঢাকায় ব’ন্দি করে রাখা হয়েছিল।
সিরাজের পতনের পূর্ব পর্যন্ত ষড়য’ন্ত্রকারীরা ঘষেটি বেগমকে ব্যবহার করলেও পতনের পর আর তাকে কোন সুযোগই দেওয়া হয়নি। এ সময় তারা তাদের মা শরফুন্নেসা, সিরাজের মা আমেনা, পিসি ঘষেটি বেগম, সিরাজের স্ত্রী লুৎফুন্নেসা ও তাঁর শিশুকন্যা সবাইকে ঢাকার জিঞ্জিরা প্রাসাদে ব’ন্দি করে রাখে।
ঢাকার বর্তমান কেরানীগঞ্জের জিঞ্জিরা প্রাসাদে তারা বেশ কিছুদিন ব’ন্দি জীবন যাপন করার পর মীরনের নির্দেশে ঘষেটি বেগম ও আমেনা বেগমকে নৌকায় করে নদীতে ডুবিয়ে মারা হয়। ক্লাইভের হস্তক্ষেপে শরফুন্নেসা, সিরাজের স্ত্রী লুৎফুন্নেসা এবং তার শিশুকন্যা রক্ষা পান। পরবর্তীতে তাদের মুর্শিদাবাদে আনা হয়। ইংরেজ সরকারের দেওয়া সামান্য বৃত্তির ওপর নির্ভর করে তাদের জীবন ধারণ করতে হয়। সিরাজের মৃ’ত্যুর দীর্ঘ ৩৪ বছর পর লুৎফুন্নেসা ১৭৯০ সালে মা’রা যান।
মীর জাফর ও মীরন পরাজিত নবাব সিরাজকে হ’ত্যার পর আমেনা এবং পরিবারের অন্যান্য নারীদের কয়েকটি নিকৃষ্ট নৌকায় চড়িয়ে অত্যন্ত অপমানজনকভাবে ও অবহেলার সঙ্গে জাহাঙ্গীরনগরে পাঠিয়ে দেন। ‘সিয়ারুল মুতাখখেরিন’র লেখক গোলাম হোসাইন তাবাতাবাই লিখেছেন, ‘সিরাজ পরিবারকে জাহাঙ্গীরনগর পাঠানোর কিছুদিন পর মীরন জাহাঙ্গীরনগরের শাসনকর্তা যশরথ খানকে লিখিত নির্দেশ দেয়, যাতে তিনি দুজন হতভাগ্য বয়স্কা মহিলাকে (ঘষেটি বেগম ও আমিনা) হ’ত্যা করেন।’
কিন্তু শাসনকর্তা যশরথ খান এ নারী ও তাদের স্বামীদের কাছে তার উন্নতি ও অন্নের জন্য ঋণী ছিলেন। তাই তিনি মীরনের এই ঘৃ’ণ্য নির্দেশ পালন করতে অসম্মতি জানান।
পরে ঢাকার জিঞ্জিরা প্রাসাদে সিরাজের মা আমেনা এবং খালা ঘষেটি বেগম দীর্ঘদিন বন্দি থাকার পর তাদের জলে ডুবিয়ে হ’ত্যা করা হয়।