শুধু ‘লাভজনক ব্যবসায়’ দাঁড়িয়েছে সংবিধানের চতুর্থ স্তম্ভ ! স্টিং অপারেশনের দাবি
নিউজ ডেস্কঃ
মিডিয়া কে সংবিধানের একটি স্তম্ভ হিসাবে ধরা হয়। যদিও এখন মিডিয়ার প্রিন্ট, ইলেকট্রনিক, ডিজিটালে বিভক্ত কিন্তু তাতে কি ? ভাগ হলেই কি তাদের লক্ষ্য, কাজ পাল্টে যায়। ভাগ হলে যায় না কিন্তু যখন এটি শুধুমাত্র ব্যবসা হিসাবেই থেকে যায় খোকন এর চরিত্র অবশ্যই পাল্টে যায়। যেমন হয়েছে ভারতের সেই ২৫টি প্রথম সারির মিডিয়া গোষ্ঠীর ক্ষেত্রে।
একটি অনুসন্ধানী নিউজ পোর্টাল তাদের চালানো স্টিং অপারেশনের ভিডিও অনলাইনে প্রকাশ করে দাবি করেছে, দেশের অন্তত ২৫টি প্রথম সারির মিডিয়া গোষ্ঠী কোটি কোটি টাকার বিজ্ঞাপনের বিনিময়ে তথাকথিত হিন্দুত্ব এজেন্ডার প্রসারে ও বিজেপিকে ক্ষমতায় রাখার চেষ্টাতে সামিল হতে রাজি হয়ে গিয়েছিল।
কোবরাপোস্ট নামের এই পোর্টালটি যখন গোপন ক্যামেরার সামনে দেশের বহু নামীদামী মিডিয়া হাউসের কর্মকর্তাদের এই ‘ডিল’ নিয়ে কথা বলতে দেখা গেছে।তবে প্রকাশিত ওই ভিডিওর সত্যতা যাচাই করা সম্ভব হয়নি।
ভারতে বেশির ভাগ মিডিয়া হাউসকে যে ‘কেনা যায়’, এ ঘটনা তা প্রমাণ করে দিয়েছে বলে অনেকেই বলছেন, তবে টাইমস গ্রুপের মতো অভিযুক্ত অনেক মিডিয়া গোষ্ঠীই আবার দাবি করছে এই স্টিং মিথ্যায় ভরা।
কোবরাপোস্ট জানাচ্ছে, তাদের রিপোর্টার পুষ্প শর্মা একটি হিন্দু ধনী ধর্মীয় আশ্রমের প্রধান সেজে বিভিন্ন মিডিয়া গোষ্ঠীর কাছে একটি লোভনীয় প্রস্তাব নিয়ে গিয়েছিলেন।
প্রস্তাবটি ছিল, বিজেপিকে ২০১৯ সালে ক্ষমতায় রাখার লক্ষ্য নিয়ে ওই পত্রিকা বা চ্যানেলগুলোতে প্রথমে শ্রীকৃষ্ণ ও ভাগবত গীতার প্রচার করতে হবে।
তারপর বিজেপির প্রতিপক্ষ রাহুল গান্ধী-মায়াবতী-অখিলেশ যাদবের মতো নেতাদের বিরুদ্ধে আক্রমণ শানাতে হবে এবং ভোটের ঠিক আগে চলবে খোলাখুলি হিন্দুত্বর প্রচার।
ওই আন্ডারকভার রিপোর্টার নিজের ছদ্মনাম নিয়েছিলেন ‘আচার্য অটল’, আর বলা হয়েছিল তিনি আরএসএসের হয়েই এ কাজ করছেন।
ভিডিওগুলো বলছে, ২৭টির মধ্যে ২৫টি মিডিয়া হাউসই কোটি কোটি টাকার ওই প্রস্তাব একরকম লুফে নেয়।
দিল্লির সাংবাদিক-অ্যাক্টিভিস্ট আরফা খানুম শেরওয়ানির বলছেন, বেশ কয়েক বছর ধরেই শোনা যাচ্ছে ভারতে মিডিয়া পয়সার জন্য যা খুশি করতে রাজি। তাদের অতি সহজেই কিনে নেয়া সম্ভব। তবে এই প্রথম সেই অভিযোগের সমর্থনে কোনও অকাট্য সাক্ষ্যপ্রমাণ মিলল।
তিনি বলেন, সকলে না-হোক, ভারতে মিডিয়ার একটা বিরাট অংশ যে সত্যিই পয়সার জন্য যা খুশি করতে পারে সেটা তো এখন দেখাই যাচ্ছে!
কোবরাপোস্টের রিপোর্টারকে যাদের সঙ্গে কথা বলতে দেখা গেছে, তাদের মধ্যে আছেন ভারতের বৃহত্তম মিডিয়া গোষ্ঠী টাইমস গ্রুপের অন্যতম মালিক তথা ম্যানেজিং ডিরেক্টর ভিনিত জৈনও।
যাচাই না-করা ওই ভিডিওগুলোতে দেখা যাচ্ছে, টাইমস গ্রুপ পাঁচশো কোটি রুপির বিনিময়ে আচার্য অটলের দেওয়া এজেন্ডা বাস্তবায়নে রাজি। এ অর্থের বেশিটাই আবার নগদ বা কালো টাকাতে নিতেও তাদের আপত্তি নেই।
টাইমস গ্রুপ এদিন অবশ্য দাবি করেছে, ওই ভিডিও মিথ্যায় ভরা ও বিকৃত। তারা ওরকম কোনও চুক্তিতেও সই করেনি।
তবে ‘দ্য ওয়ার’ পোর্টালের কর্ণধার ও দ্য হিন্দুর সাবেক সম্পাদক সিদ্ধার্থ বরদারাজন এই সাফাইতে বিশ্বাস করছেন না।
বরদারাজন বলছেন, ভারতে অধিকাংশ মিডিয়া হাউসের কাছে মুনাফাই যে শেষ কথা এই স্টিং অপারেশন সেটা প্রমাণ করে দিয়েছে।
তিনি বলেন, যে এজেন্ডা দেশকে ভাগ করে দেবে ভোটের আগে দেশকে পোলারাইজ করবে, সেটা জেনেবুঝেও লাভের জন্য তা রূপায়ন করতে তাদের এতটুকুও দ্বিধা হয় না।
স্টিং-বিদ্ধ মিডিয়া গোষ্ঠীগুলির মধ্যে একটি আবার দিল্লি হাইকোর্টের স্থগিতাদেশ নিয়ে তাদের নিয়ে তৈরি করা ভিডিওটির প্রচার আপাতত আটকাতে পেরেছে।
তবে কিছুটা আশ্চর্যজনকভাবে ভারতের বিরোধী দলগুলো কোবরাপোস্টের এই স্টিং অপারেশন নিয়ে আনুষ্ঠানিক প্রতিক্রিয়া দেয়া থেকে এখনও বিরত থেকেছে।
রাজনীতিক ও সোশ্যাল অ্যাক্টিভিস্ট যোগেন্দ্র যাদব আবার টুইটারে আক্ষেপ করেছেন, কেন ভারতের মূল ধারার সংবাদপত্রগুলির একটিও এই স্টিং নিয়ে কোনো খবরই প্রকাশ করছে না?
তার সহকর্মী ও ভারতের শীর্ষস্থানীয় আইনজীবী প্রশান্ত ভূষণ আবার অভিযুক্ত মিডিয়াগুলোকে বর্জন করার ডাক দিয়েছেন।
প্রশান্ত ভূষণ বলছেন, ভারতের লোককে এখন স্থির করতে হবে যেসব চ্যানেল বা সংবাদপত্র জেনেবুঝে দেশকে ভাগ করার, দেশের মানুষকে পরস্পরের বিরুদ্ধে লড়িয়ে দেয়ার ষড়যন্ত্রে সামিল হতে রাজি হয়ে যায় তাদেরকে আমরা বয়কট করব কি না।
তিনি বলেন, এখন সময় হয়েছে এই সব তথাকথিত মিডিয়ার বদলে অন্য সূত্র থেকে খবর জোগাড় করার।
ভারতে মিডিয়া জগতের বহু দিকপাল রয়েছেন যাদের সংস্থার নাম এই স্টিং বিতর্কে জড়ায়নি। তাদের অনেককেই এই স্টিং অপারেশন নিয়ে মুখ খোলার চ্যালেঞ্জ ছুড়ে দিয়েছিলেন যোগেন্দ্র যাদব।
তার জবাবে এডিটর্স গিল্ড অব ইন্ডিয়ার চেয়ারম্যান শেখর গুপ্তা টুইট করে বলেছেন ‘পেইড নিউজ’ বা পয়সার বিনিময়ে লেখা খবর হল সাংবাদিকতার ইবোলা ভাইরাস। তবে তিনি স্টিং অপারেশনকে সাংবাদিকার এথিকস-বিরোধী বলেই মনে করেন।
এই গোটা বিতর্কে এটাও উল্লেখ করার মতো যে ২৭টি মিডিয়া হাউসের মধ্যে মাত্র দুটি কোবরাপোস্টের পাতা ফাঁদে পা দেয়নি।
তারা সরাসরি তাদের প্রস্তাব খারিজ করে দিয়েছিল। ওই দুইটি পত্রিকা হচ্ছে কলকাতার পত্রিকা – দৈনিক বর্তমান ও সংবাদ।