দেরি করে ঘুম থেকে উঠে ছোট করছেন জীবন রেখা
[kodex_post_like_buttons]
কলকাতা টাইমস :
আর্লি টু বেড অ্যান্ড আর্লি টু রাইজ, মেকস এ ম্যান হেলদি ওয়েলদি অ্যান্ড ওয়াইজ।’ ছোটবেলায় বড়দের মুখে এই কথাটা আমরা অনেকেই শুনেছি। আর এই প্রবাদকে গুরু বাক্য মনে করে শৈশবে সকলেই খুব তাড়াতাড়ি উঠে পড়তাম ঘুম থেকে। কিন্তু যেই বড় হলাম, অমনি পরিবর্তন সবকিছুর। “আর্লি টু বেড অ্যান্ড আর্লি টু রাইজ” এর পরিবর্তে আমাদের জীবনে প্রবেশ করল “লেট টু বেড অ্যান্ড লেট টু রাইজ”। রাতে ঘুমোতে যাওয়া থেকে শুরু করে সকালে ঘুম থেকে ওঠা, কোনও কিছুর আর নির্দিষ্ট সময় রইল না আমাদের কাছে।
সকালে ঘুম থেকে ওঠার সময় চোখটা যেন কিছুতেই খুলতে চায় না। যার পিছনে রয়েছে অনিয়ন্ত্রিত এবং অগোছালো জীবনযাপন, কর্মজীবনের বিভিন্ন শিফট, রাত জেগে ফেসবুক, ইনস্টাগ্রাম, টুইটার, টেলিগ্রাম, হোয়াটসঅ্যাপ এর পেছনে সময় দেওয়া কিংবা ওয়েব সিরিজের হাতছানির মতো বিভিন্ন কারণ। কিন্তু এই যে দেরি করে ঘুমোতে যাওয়া কিংবা দেরি করে ঘুম থেকে ওঠা, এই অভ্যাস অজান্তেই আমাদের জীবনে বড় ক্ষতি ডেকে আনছে। ঠেলে দিচ্ছে বিপদের মুখে। বিশেষজ্ঞরা জানাচ্ছেন এই অভ্যাস অকালে মৃত্যুর ঝুঁকিকে বাড়িয়ে তুলছে।
ক্রোনোবায়োলজি ইন্টারন্যাশনাল (Chronobiology International) এর জার্নালে প্রকাশিত একটি গবেষণাপত্র থেকে জানা যায়, যে সকল ব্যক্তিরা নিয়মিত সকালে ঘুম থেকে ওঠেন তাদের গড় আয়ু রাতজাগা ব্যক্তি বা ঘুম থেকে দেরি করে ওঠা ব্যক্তিদের থেকে সাড়ে ছয় বছর বেশি। গবেষকরা জানাচ্ছেন, রাত জাগা বা ঘুম থেকে দেরিতে ওঠার বদঅভ্যাস যারা গড়ে তুলেছেন তাদের মধ্যে ৯০ শতাংশ মানুষ মানসিক ব্যাধির শিকার হন। ৩০ শতাংশ মানুষ ডায়াবেটিস, বিভিন্ন স্নায়বিক সমস্যা ও অন্ত্রের রোগে আক্রান্ত হন।
আপনিও যদি এই বাজে অভ্যাসকে সঙ্গী করে দিনযাপন করছেন, তবে এখনই এটি ত্যাগ করুন। অন্যথায় ঘোর বিপদের মুখে পড়তে পারেন। যদি মনে হয় যে এই অভ্যাস ত্যাগ করার জন্য সকালে তাড়াতাড়ি উঠতে চান, কিন্তু উঠতে পারছেন না, তবে আজ আমরা আমাদের এই আর্টিকেলের মাধ্যমে জেনে নিন কীভাবে সকালে তাড়াতাড়ি উঠবেন। পায়ের ত্বক শুষ্ক-রুক্ষ হয়ে যাচ্ছে? পায়ে কড়া পড়েছে? এই সব উপায়ে দূরে রাখুন সমস্যা
১) শিফটিং ডিউটিকে সঙ্গে করেই প্রথমেই একটা ‘ডেইলি রুটিন’ তৈরি করে ফেলুন। রুটিনে যুক্ত করুন কোন জিনিসের পেছনে কত সময় আপনি ব্যয় করবেন। সেই সময় অনুযায়ী সারাদিন কাটান। কিন্তু মনে রাখবেন রুটিনে যেন, রাতে ঘুমের সময়টা ৭-৮ ঘণ্টা থাকে।
২) সকালে কখন ঘুম থেকে উঠবেন সেই সময়টা নির্দিষ্ট করুন। ঘুম থেকে ওঠার সময় থেকে অন্তত ৭-৮ ঘণ্টা আগে ঘুমোতে যান। তবে মনে রাখবেন ঘুমোতে যাওয়ার আগে ঘুম থেকে ওঠার যে সময়টা ভেবে রেখেছেন তা যেন একটিমাত্র নির্দিষ্ট সময়ই থাকে। মনের মধ্যে বারবার সময় পরিবর্তন করার কথা ভাবলে অবচেতন মন আপনার ঘুমে দারুণভাবে ব্যাঘাত ঘটাবে।
৩) ঘরে সূর্যের আলো ও বাইরের বাতাস যেনো ভালোভাবে আসতে পারে সেই ব্যবস্থা করে রাখুন। ঘর অন্ধকার করে রাখবেন না। ঘর অন্ধকার থাকলে ঘুম থেকে উঠতে দেরি হবে।
৪) এমন কিছু যোগব্যায়াম রয়েছে যা করলে তাড়াতাড়ি ঘুম ভাঙে। তাই ঘুমোতে যাওয়ার আগে এই ব্যায়ামগুলি অবশ্যই করুন।
৫) ঘুমানোর সময় মোবাইল ব্যবহার করবেন না। ঘুমোতে যাওয়ার এক ঘণ্টা আগে মোবাইল, টিভি, ল্যাপটপ ব্যবহার করা বন্ধ করুন।
৬) যারা বাড়িতে থাকেন তারা দুপুরের ভাত-ঘুম দেবেন না। এই অভ্যেস পরিত্যাগ করুন। আপনি অভ্যাস ত্যাগ করতে পারলে রাতে খুব তাড়াতাড়ি ঘুম আসবে এবং সকালে খুব তাড়াতাড়ি উঠতে পারবেন।
৭) রাত্রে ঘুমোতে যাওয়ার এক ঘণ্টা আগে ডিনার করুন এবং খুব হালকা খাবার খান। খাবার পরে একটু হাঁটাহাঁটি করুন এতে খাবার সহজে হজম হবে এবং সকালে ঘুম থেকে উঠতেও সুবিধা হবে।
৮) ঘুম ভাঙলে খাট থেকে উঠে হাঁটাচলা করুন। ঘুম থেকে উঠে বসে থাকবেন না, এতে পুনরায় ঘুম পাবে। দুই থেকে তিন মিনিট হাঁটার পর এক্সারসাইজ বা যোগ-ব্যায়াম করুন। এতে শরীর, মন সতেজ ও সুস্থ থাকবে।