November 11, 2024     Select Language
Editor Choice Bengali KT Popular রোজনামচা শারীরিক

এ যেন মানবকোষে প্রবেশের চাবি 

[kodex_post_like_buttons]
কলকাতা টাইমস :

ত বছরের নভেম্বরের শেষের দিকে ওমিক্রনের আবির্ভাবের পর থেকে এর গতি-প্রকৃতি বোঝার জন্য যুক্তরাজ্য ও অন্যান্য দেশের বিজ্ঞানীরা প্রতিযোগিতা চালিয়ে যাচ্ছেন। এসব গবেষণায় এখন পর্যন্ত যা জানা গেছে, তাতে মনে হচ্ছে নতুন ধরনটি একেবারে ভিন্ন ধরনের একটি মহামারির জন্ম দিচ্ছে। ফলে ধরনটির প্রতি আমাদের দৃষ্টিভঙ্গি পরিবর্তনেরও দরকার হয়ে পড়েছে।

শুরুতেই বিজ্ঞানী সম্প্রদায়ের মধ্যে ওমিক্রন যে উদ্বেগের কারণ হয়ে দেখা দেয়, সেটা হচ্ছে মূল ভাইরাসটির তুলনায় এর মধ্যে ৫০টি রূপান্তর ঘটেছে, যার বেশির ভাগই অন্যান্য ধরনে উল্লেখযোগ্য পরিবর্তন আনার ক্ষেত্রে ভূমিকা রেখেছে। এই রূপান্তরগুলো স্পাইক প্রোটিনেই বেশি ঘটেছে। আর স্পাইকগুলো ভাইরাস কণায় জায়গা করে নেয় এবং মানবকোষে প্রবেশের চাবি হিসেবে কাজ করে।

ব্রিটেনের মেডিক্যাল রিসার্চ কাউন্সিল (এমআরসি) ও ইউনিভার্সিটি অব গ্লাসগো পরিচালিত সেন্টার ফর ভাইরাস রিসার্চের (সিভিআর) সহকর্মী বিজ্ঞানীদের সঙ্গে আমি একটি গবেষণায় অংশ নিয়েছি। এই গবেষণা বলছে, ওমিক্রনের স্পাইকের গঠনে এত বড় পরিবর্তন ঘটেছে তা আমাদের শরীরে টিকা থেকে প্রাপ্ত সুরক্ষাব্যবস্থাকে ক্ষতিগ্রস্ত করার আশঙ্কা খুব বেশি। আমরা (ও অন্যরা) দেখতে পেয়েছি যে অ্যাস্ট্রাজেনেকা, ফাইজার ও মডার্না টিকার দুটি ডোজ অন্যান্য ভেরিয়েন্টের তুলনায় ওমিক্রনের বিরুদ্ধে উল্লেখযোগ্য মাত্রায় কম কার্যকর ছিল। এর মধ্য দিয়ে ওমিক্রন কেন অন্য ধরনগুলোর চেয়ে বেশি সংক্রামক, সেই ব্যাখ্যাও দেওয়া যায়। এখন পর্যন্ত আমাদের যেসব টিকার অনুমোদন দেওয়া হয়েছে, তার সবই ২০১৯ সালের ডিসেম্বরে উহানে আবির্ভূত করোনাভাইরাসটির প্রাচীনতম ধরনটির স্পাইক প্রোটিনের বিরুদ্ধে প্রতিরোধক্ষমতা বাড়ানোর ওপর ভিত্তি করে তৈরি করা।

তার পরও অনুমোদিত টিকাগুলোর তিনটির কার্যকারিতা উল্লেখযোগ্য মাত্রায় উন্নত করা হয়েছে। তাই ওমিক্রনের আবির্ভাবের পর বুস্টার ডোজ প্রদানের হার বাড়ানোর দিকে যুক্তরাজ্যের নজর দেওয়া একটি ভালো দিক। তবে এই উদ্যোগ যুক্তরাজ্যের জাতীয় স্বাস্থ্যসেবা ব্যবস্থাকে মারাত্মক চাপ থেকে রক্ষার জন্য যথেষ্ট হবে না। কারণ এরই মধ্যে আক্রান্ত ও আক্রান্তদের সংস্পর্শে আসায় আইসোলেশনের কারণে হাসপাতালগুলোতে কর্মীদের ঘাটতি দেখা দিয়েছে এবং বয়স্ক বা নিয়মিত স্বাস্থ্য সমস্যায় ভোগা ব্যক্তিরা গুরুতর অসুস্থ হওয়ার ঝুঁকির মধ্যে পড়ে গেছে।

স্পাইক প্রোটিনের এই পরিবর্তন শুধু টিকাগুলোকেই ক্ষতিগ্রস্ত করছে না, এটি মানব কোষে প্রবেশের পদ্ধতিতেও পরিবর্তন এনেছে। আমাদের গবেষণা এবং ইম্পেরিয়াল কলেজ লন্ডনের পৃথক গবেষণার একটি অপ্রত্যাশিত ফল হচ্ছে, ওমিক্রন মানবদেহের কোষে প্রবেশের পদ্ধতিতে মৌলিকভাবে পরিবর্তন এনেছে। গবেষণা দুটির প্রাথমিক প্রতিবেদনে বলা হয়েছে, ওমিক্রন কিছুটা কম গুরুতর অসুস্থতার কারণ হতে পারে বলে যে কথাটি বলা হচ্ছে তার সঙ্গে ভাইরাসটির জীবনচক্রের পরিবর্তনের সম্পর্ক থাকতে পারে।

আমরা দেখেছি, পূর্ববর্তী ধরনগুলো কোষঝিল্লি (সেল মেমব্রেন) গলিয়ে দিয়ে মানব কোষে প্রবেশ করে, যা ভাইরাসটিকে কোষ থেকে কোষে ছড়িয়ে পড়ার সুযোগ দিয়ে গুরুতর রোগের কারণ হয়েছে। এর পরিবর্তে ওমিক্রন একটি ক্যাপসুলের মতো কোষঝিল্লি দ্বারা আচ্ছাদিত হয়ে পড়ে এবং পরে কোষের ভেতরে ঢুকে পড়ে। এরপর বিভাজিত হওয়া ও অন্যান্য কোষে ছড়িয়ে পড়ার আগে তাকে অবশ্যই কোষে থাকা ক্যাথেপসিন নামের ভিন্ন ধরনের প্রোটিনের সহায়তায় ক্যাপসুলটি থেকে সরে পড়তে হয়।

গবেষণার এই ফলটিকেই এখন ইম্পেরিয়াল কলেজ লন্ডনের গবেষকরা অনুমোদন করেছেন। তাঁরা আরো দেখিয়েছেন যে ওমিক্রন অগ্রাধিকারমূলকভাবে নাকের কোষগুলোকে আক্রান্ত করতে পারে এবং ফুসফুসের কোষগুলোকে আক্রান্ত করার আশঙ্কা কম। তবে ওমিক্রন থেকে শ্বাসযন্ত্রের সংক্রমণ রোধ করতে আমাদের ব্যবস্থাগুলো আরো উন্নত বা হালনাগাদ করতে হবে কি না তা জানতে আরো গবেষণা দরকার।

এখন নতুন ভেরিয়েন্টের বিরুদ্ধে আমাদের ইমিউনিটি সর্বোচ্চ পর্যায়ে উন্নীত করার সবচেয়ে ভালো উপায় হতে পারে ওমিক্রন (ও সামনে আরো যেসব ভেরিয়েন্ট আসতে পারে সেগুলো) লক্ষ্য করে ভ্যাকসিন তৈরি করা। এগুলোর জন্য ক্লিনিক্যাল ট্রায়াল ও এটি চালু করার জন্য প্রয়োজনীয় অর্থ বরাদ্দ এবং সবচেয়ে বেশি ঝুঁকিতে থাকা ব্যক্তিদের জন্য সংরক্ষণ করা লাগতে পারে। গুরুত্বপূর্ণ বিষয় হচ্ছে, দুই ডোজের চেয়ে তিন ডোজ টিকা অনেক উন্নত—এই গবেষণার ফলটি জানতে আমরা সময় নিয়েছি।

Related Posts

Leave a Reply