বাঁচতে চাইলে এই মেশিনটি পরিষ্কার করুন রোজ-ভালোভাবে
কলকাতা টাইমস :
শরীরের সুস্থ থাকা বা না থাকার সঙ্গে আমাদের রোজের বেশ কিছু অভ্যাসের সরাসরি যোগ রয়েছে। যেমন ধরুন, আমরা প্রতিদিন স্নান করে পরিষ্কার জামা কাপড় পরে অফিস যাই ঠিকই, কিন্তু ডেস্ক বা কম্পিউটার কিবোর্ড পরিষ্কার আছে কিনা, সেদিকে কোনও দিন খেয়াল করি কি? সমীক্ষা বলছে, প্রায় ৭০ শতাংশ মানুষই এই ছোট ছোট বিষয়গুলির দিকে খেয়াল করেন না। পরিবর্তে হাটতে-ফুটতে অফিস পৌঁছে কোনও মতে লেগে যান কাজে। আর এই ফাঁকে হাজারো ক্ষতিকর জীবাণু হাত হয়ে পোঁছে যায় শরীরের অন্দরে। এমনটা হওয়া মাত্র আমাদের ঠিকানা হয় হাসপাতাল নয়তো বাড়ির বিছানা। কিন্তু কিবোর্ড এমন জীবাণুর আঁতুড়ঘর হয়ে ওঠে কীভাবে?
কিবোর্ডে ও জীবাণু: সম্প্রতি প্রকাশিত এক গবেষণাপত্র অনুসারে টয়লেট সিটে যে পরিমাণ ব্যাকটেরিয়া থাকে তার থেকে প্রায় ১৫০ গুণ বেশি জীবাণু বাসা বেঁধে থাকে কম্পিউটার কিবোর্ডে। আর এই পরিমাণ জীবাণুর মধ্যে সব সময় আমাদের আঙুল চলতেই থাকে। ফলে এইসব ক্ষতিকর উপাদানগুলি প্রথমে আঙুল, তারপর হাত হয়ে কোনও না কোনও ভাবে মুখে পৌঁছে যায়। আর ব্যাস, তারপর আর দেখে কে! সেগুলি মুখের অন্দরে প্রবেশ করে সরাসরি চলে যায় শরীরের ভিতরে। তারপর ধীরে ধীরে শরীরকে কোরে তোলে অসুস্থ। প্রসঙ্গত, একাধিক গবেষণায় দেখা গেছে কিবোর্ডে মূলত যে ব্যাকটেরিয়াগুলি থাকে, সেগুলি হল ই.কোলাই এবং স্টেফিলোকক্কাস অ্যারিয়াস।
ই-কোলাই ব্যাকটেরিয়া: এই ব্যাকটেরিয়াটি একবার যদি শরীরে প্রবেশ করে যায় তাহলে বেজায় বিপদ! কারণ এর কারণে রক্ত পায়খানা, ডায়ারিয়া, কিডনি ফেলিওর, এমনকি অ্যানিমিয়ার মতো রোগে আক্রান্ত হওয়ার আশঙ্কা বৃদ্ধি পায়। শুধু তাই নয়, অনেক ক্ষেত্রে ক্রনিক ইউরিনারি ট্রাক্ট ইনফেকশন হওয়ার পাছনেও এই জাবীণুটির ভূমিকা থাকে। রোদের হাত থেকে ত্বককে বাঁচাতে চান?
স্টেফিলোকক্কাস অ্যারিয়াস: এই জীবণুটির কারণে একাধিক রোগ হতে পারে। যেমন- ত্বকের সংক্রমণ, ব্রণ, ফলিকিফলিটিস, কার্বোঙ্কল, নিউমোনিয়া, মেনিনজাইটিস, অস্টিওমায়ালাইটিস, এন্ডোকার্ডাইটিস, টক্সিক শক সিনড্রন, সেপসিস প্রভৃতি। রোগের নামগুলো দেখে নিশ্চয় বুঝতে পারছেন সবকটিই কিন্তু বেশ জটিল এবং কষ্টদায়ক রোগ। তাই এবার থেকে কম্পিউটার কি-বোর্ডে আঙুল চালানোর আগে সেটিকে একবার ভাল করে পরিষ্কার করে নিতে ভুলবেন না যেন!
কিবোর্ডে এত ব্যাকটেরিয়া আসে কোথা থেকে? সমীক্ষা বলছে কাজের চাপের অজুহাতে অনেকেই ক্যান্টিনে খেতে যান না। পরিবর্তে কাজ করতে করতে ডেস্কেই লাঞ্চ সেরে পেলেন। এমনটা করার সময় খাবারের টুকরো কিবোর্ডের মধ্যে পরতে থাকে। আর সেগুলি জমতে জনতে এক সময় গিয়ে নানাবিধ ক্ষতিকর ব্যাকটেরিয়ার খাদ্য়ে পরিণত হয়। ফলে বাড়তে শুরু করে জীবাণুদের সংখ্যা। এক সময়ে গিয়ে এই সংখ্যাটা কয়েক লক্ষে গিয়ে পৌঁছায়। এখানেই শেষ নয়, আরও নানা কারণে কিবোর্ড, ব্যাকটেরিয়াদের স্বর্গরাজ্যে পরিণত হয়। যেমন ধরুন, আমাদের মধ্যে অনেকেই প্রস্রাব করার পর ভাল করে হাত পরিষ্কার করেন না। ফলে হাতে থেকে যাওয়া জীবাণু কিবোর্ডে এসে বাসা বাঁধে। আর এইসব জীবাণুকে সংখ্যায় বাড়তে সাহায্য করে ধুলো-বালি। প্রসঙ্গত, ভাইরাল ইনফেকশনের সময় হাঁচতে হাঁচতেই আমরা অফিসে কাজ করে থাকি।
হাঁচার সময় লক্ষাধিক জীবাণু কিবোর্ডে এসে জড়ো হয়। আর পরিষ্কার না করার কারণে সেগুলি ডেস্কেই থেকে যায়। আর পরবর্তি সময় আরও শক্তিশালী হয়ে উঠে আমাদের শরীরের উপর পুনরায় আক্রমণ সানায়।
সুস্থ থাকতে কিবোর্ডের দেখভাল করতে হবে কীভাবে?
এক্ষেত্রে সহজ কতগুলি পদ্ধতি আছে, যেগুলি মেনে চললে কিবোর্ডে লুকিয়ে থাকা ক্ষতিকর জীবাণুদের হাত থেকে সহজেই মুক্ত মেলা সম্ভব হবে। যেমন-
১. কিবোর্ডটা আনপ্লাগ করে সেটি উপুর করে নারাতে থাকুন। এমনটা করলে দেখবেন প্রচুর ধুলো এবং নোংড়া বেরিয়ে যাবে। সেই সঙ্গে জীবাণুও।
২. কিবোর্ডের ফাঁকে ফাঁকে জমে থাকা ময়লা পরিষ্কার কারার জন্য ব্রাশ অথবা ভ্যাকিউম ক্লিনার ব্যবহার করতে পারেন।
৩. একটা পরিষ্কার সুতির কাপড়ে অল্প করে অ্যালকোহল নিয়ে ভাল করে কিবোর্ডের বাটানগুলি পরিষ্কার করুন। সপ্তাহে কয়েকবার এমনভাবে পরিষ্কার করলেই দেখবেন আর সংক্রমণের ফাঁদে পরবেন না।
৪.কাজের পর কিবোর্ড ঢাকা দিয়ে রাখার চেষ্টা করবেন। এমনটা করলে ধুলো-বালি কম জমবে। ফলে জীবাণুরা সংখ্যায় বৃদ্ধি পাওয়ার সুয়োগই পাবে না।
৫. যতটা পারবেন ডেস্কে খাবার কম খাবেন। যেমনটা ইতিমধ্যেই জেনে গেছেন যে কিবোর্ডে জীবাণুদের সংখ্যা বৃদ্ধির পিছনে এই কু-অভ্যাসটি কিন্তু অনেকাংশে দায়ি থাকে।