দিনে দুবার ঘুমান নাকি ?
[kodex_post_like_buttons]
কলকাতা টাইমস :
ঘুম। আমাদের জীবনে এই দুটি শব্দের গুরুত্ব খুব কম। এক দলের কাছে তো এটা কেবলই অলসতার আরেক নাম। কিন্তু বিজ্ঞান বলে আমাদের শরীরের ভাল-মন্দের সঙ্গে সরাসরি যোগ রয়েছে ঘুমের। শুধু তাই নয়, দীর্ঘদিন ঠিক মতো ঘুম না হলে মৃত্যু পর্যন্তও ঘটতে পারে। কিন্তু প্রশ্নটা অন্য জায়গায়। এতদিন চিকিৎসকেরা বলতেন রাতে ৭-৮ ঘন্টা ঘুমলেই চলবে। তাহলেই আর শরীর বাবাজিকে নিয়ে ভাবতে হবে না। কিন্তু এখন নতুন একটা তথ্য় সামনে এসেছে। গবেষকরা বলছেন টানা ৮ ঘন্টা না ঘুমিয়ে দিনে দুবার ৪ ঘন্টা করে ঘুমালে নাকি শরীরের বেশি উপকরা হয়। সত্য কি এমনটা হল? সম্প্রতি প্রকাশিত একটি গবেষণা পত্র অনুসারে দিনে দুবার ঘুমলে শরীরে যা উপকার হয়, তা একবার ঘুমলে হয় না। সেই কারণেই তো চিকিৎসক মহলের পাশাপাশি ঘুম বিশেষজ্ঞরাও দিনে দুবার ঘুমানোর পক্ষে সাওয়াল করা শুরু করেছেন। কিন্তু আমরা তো দিনের বেলা অফিসে থাকি। তাহলে দুবার ঘুমবো কী করে? একদম ঠিক কথা। কিন্তু বিজ্ঞানকে অস্বীকার করার মতো ক্ষমতা আমাদের আছে বলে তো মনে হয় না।
তাহলে কি এতদিন আমরা ঠিক পদ্ধতিতে ঘুমাতাম না? এই পৃথিবীতে এমন অনেক দেশ রয়েছে যে দেশের নাগরিকরা “বাইফেসিক স্লিপ” এ বিশ্বাস করে থাকেন। অর্থাৎ দিনে দুবার ঘুমানোই উচিত, এমন নিয়ম মেনে চলা মানুষের সংখ্যাটা কিন্তু নেহাতিই কম নয়। এদের মধ্যে অনেকেই রাতের বেলা ৬ ঘন্টা এবং দিনের বেলা ২ ঘন্টা ঘুমিয়ে থাকেন। কেউ কেউ তো আবার রাতে ৪ ঘন্টা আর দিনে ৪ ঘন্টার ঘুমে অভ্যস্ত। প্রসঙ্গত, ইতিহাস ঘাঁটলেও এমন কথাই জানতে পারা যায়। একাদিক বইয়ে উল্লেখ রয়েছে প্রাচীন পৃথিবীতে এমন অনেক মানুষ ছিলেন যারা সকাল-রাত্রি মিলিয়ে ৮ ঘন্টা ঘুমতেন। এই ধরনের নিয়মই নাকি সকলে অনুসরণ করতেন। কিন্তু যবে থেকে বিদ্যুতের আবিষ্কার হয়েছে, তবে থেকেই নাকি স্লিপিং সার্কেলে পরিবর্তন এসেছে। এমনটাই বিশ্বাস বিজ্ঞানিদের।
দিনে দুবার ঘুমনোর উপকারিতা: প্রাচীন কালে কী যুক্তি মেনে লোকেরা দুবার ঘুমতেন, তা জানা নেই। কিন্তু আধুনিক গবেষণা অনুসারে দু ধাপে ঘুমলে ব্রেন পাওয়ার বৃদ্ধি পায়। ফলে স্মৃতিশক্তি, বুদ্ধি এমনকী মনোযোগেরও উন্নতি ঘটে। প্রসঙ্গত, মধ্যযুগীয় সাহিত্যে উল্লেখ পাওয়া যায় আফ্রিকা এবং আমেরিকার বাসিন্দারা দিনে দুবার ঘুমতে পছন্দ করতেন। তাদের হাত ধরেই নাকি এই সংস্কৃতি বাকি পৃথিবীতে ছড়িয়ে পরেছিল।
আরও উপকারিতা: একাধিক কেস স্টাডি করে জানা গেছে বর্তমানে পৃথিবীর মোট জনসংখ্যার প্রায় এক তৃতীয়াংশ অনিদ্রার শিকার। আর এর পিছনে মূল কারণ নাকি ঘুমের প্যাটার্ন বদলে যাওয়া। বিজ্ঞানিরা মনে করেন টানা ৮ ঘন্টা ঘুমানোর চক্করেই নাকি ঘুমে এমন ব্যাঘাত ঘটতে শুরু করেছে, যা দিনে দুবার ঘুমলে কখনই হয় না। তাই ঘুমকে দুভাগে করে নিলে যে অনেক রোগেরই প্রকোপ কমে যায়, সে কথা বলাই বাহুল্য!
আমাদের পূর্বপুরুষদের অভ্যাস ছিল বলেই কি আমাদের লাঞ্চের পর ঘুম পায়? কথাটা যে খুব, এমন নয়! স্লিপ সায়েন্টিস্টদের মতে বিদ্যুতের আবিষ্কারের আগে সূর্যালোক দেখেই সময় নির্ধারণ করা হত। তাই তো সন্ধ্যা হতেই কাজ শেষ করে শুয়ে পরতেন সকলে, উঠতেন একেবারে সকাল সকাল। তাই তো দুপুর বেলা একটু বিশ্রাম না নিলে চলতো না। এই অভ্যাস এখন বদলে গেলেও আমাদের শরীর কিন্তু ভলেনি। তাই তো আমাদের সবারই লাঞ্চের পর জমিয়ে ঘুম আসে। আসলে সে সময় শরীর সিগনাল দিতে থাকে যে যাও বন্ধুরা যাও একটু ঘুমাও!
সব শেষে… বিজ্ঞান এবং ইতিহাস, উভয়ই দিনে দুবার ঘুমানোকে মান্যতা দিলেও আজকের যুগে কী এমনটা সম্ভব? মনে তো হয় না। কারণ আমারা সবাই প্রায় ৮-১০ ঘন্টা কাজ করে থাকি। তার ফাঁকে কয়েক ঘন্টা ঘুমনো বাস্তবিকই অসম্ভব। শুধু তাই নয়, হঠাৎ করে ঘুমানোর ধরন বদলে গেলে শরীরের উপরও বিরুপ প্রভাব পরে। তাই খাতায় কলমে একের অধিকবার ঘুমনো যতই উপকারি প্রমাণিত হোক না কেন, বাস্তবে আমাদের পক্ষে যে এই নিয়ম মেনে চলা সম্ভব নয়। তবে যাদের পক্ষে সম্ভব, তারা অবশ্যই ইচ্ছা হলে দুবার ঘুমতে পারেন। শুধু খেয়াল রাখেন প্রতিবারই ঘুমটা যে ভাল করে হয়। তাহলেই কেল্লাফতে!