প্রাণ বাঁচাতে করতেই হবে!
[kodex_post_like_buttons]
কলকাতা টাইমস :
একটা সময় ছিল যখন আমাদের দেশের বহু সংখ্যক বাচ্চা পলিও রোগে আক্রান্ত হত। আর সেই সংখ্যাটা নেহাতই কম ছিল। তাই ভারত সরকার এক প্রকার কোমর বেঁধে নেমেছিল এই ভয়ঙ্কর রোগকে হারাতে। সেই লক্ষে ইতিমধ্যেই পৌঁছে গেছে আমাদের দেশ। মিলেছে বিশ্ব স্বাস্থ্যসংস্থার স্বীকৃতিও। কিন্তু বিপদের মেঘ যে পুরোপুরি কেটে গেছে এমনটা নয়। রাবণের যেমন একটা মাথা কাটা গেলে সে জায়গায় আরেটা মাথা গজিয়ে উঠতো, তেমনিই পোলিওর জায়গা নিয়েছে হাম এবং রুবেলা ভাইরাস।
বর্তমান অবস্থা: গত কয়েক দশকে এই দুটি ভাইরাসের কারণে বহু বাচ্চা মারা গেছে এবং সংখ্যাটা ক্রমশ বাড়ছে। একাধিক আন্তর্জাতিক সংস্থার রিপোর্ট অনুসারে ২০১৫ সালে সারা বিশ্বে প্রায় ১,৩৪,০০০ সংখ্যক বাচ্চা মারা গেছে, যেখানে ভারতে মৃত্যুর হার প্রায় ৫০,০০০। এখানেই শেষ নয়, একাধিক কেস স্টাডি করে দেখা গেছে ভাগ্যের জোরে যদি কোনও বাচ্চা বেঁচেও যায়, তাহলে রোগ পরবর্তি সময় এখাধিক সমস্যা মাথা চাড়া দিয়ে ওঠে। যেমন- ডায়ারিয়া, নিউমোনিয়া, পুষ্টির অভাব প্রভৃতি।
অন্যদিকে ক্ষতি করতে পিছিয়ে নেই রুবেলা ভাইরাসও। সমীক্ষা বলছে এই রোগ বাচ্চাদের মধ্যে ছড়িয়ে পরার পিছনে অনেকাংশেই দায়ি থাকে মায়েরা। আসলে একবার এই ভাইরাস মায়ের শরীরে এসে পৌঁছালে ৯০ শতাংশ ক্ষেত্রেই তা বাচ্চার শরীরেও চলে যায়। আর বাচ্চাদের যেহেতু রোগ প্রতিরোধ ক্ষমতা প্রায় থাকে না বললেই চলে, ফলে ছোট্ট প্রাণটার মৃত্যুর কোলে ঢলে পরার আশঙ্কা বৃদ্ধি পায়। আর যদি মৃত্যু থাবা বসাতে নাও পারে, তাহলে শ্রবণ শক্তি কমে যাওয়া, চোখ এবং হার্ট দুর্বল হয়ে পরা, এমনকি ব্রেন ড্যামেজের আশঙ্কাও বৃদ্ধি পায়। প্রসঙ্গত, সারা বিশ্বে প্রতি বছর প্রায় ১,১০,০০০ বাচ্চা এই রোগ নিয়ে জন্মায়, যেখানে ভারতে এই সংখ্যাটা প্রায় ৪০,০০০।
তাহলে উপায়? চিন্তা নেই! ভারত সরকার পোলিও রোগকে দূর করতে যেমন প্রয়োজনীয় পদক্ষেপ নিয়েছিল। এক্ষেত্রেও একাধিক সিদ্ধান্ত ইতিমধ্যেই নিয়ে ফেলেছে মোদি সরকার। সেই মতো কেন্দ্রীয় স্বাস্থ্য দফতর লক্ষ স্থির করেছে আগামী ৪ বছরের মধ্যে হাম এবং রুবেলা ভাইরাসকে আমাদের দেশ থেকে তাড়িয়েই ছাড়বে। তাই তো আমাদের দেশে প্রতিটি কোণায় শুরু হয়েছে বিশেষ ভ্যাক্সিনেশন প্রোগ্রাম। এই প্রোগ্রামের মূল লক্ষই হল এদেশে জন্ম নেওয়া প্রতিটি বাচ্ছার শরীরে হাম এবং রুবেলা ভাইরাস প্রতিরোধি ভ্যাকসিন পৌঁছে দেওয়া। ডিমের খোসা ফেলে না দিয়ে রুপচর্চায় কাজে লাগান, ত্বক থাকবে টানটান, ফিরবে জেল্লা! এমন পদক্ষেপের মাধ্যমে কি সত্যিই পরিস্থিতির পরিবর্তন সম্ভব? একেবারেই!
বিশ্ব স্বাস্থ্য সংস্থার রিপোর্ট অনুসারে ৯-১৫ বছর বয়সিদের যদি নির্দিষ্ট মাপে এই ভ্যাকসিন খাওয়ানো যায়, তাহলে তাদের রোগ প্রতিরোধ ক্ষমতা প্রায় ৯৫ শতাংশ বেড়ে যাবে। তখন শুধু হাম বা রুবেলা নয়, যে কোনও ধরনের ভাইরাসের সংক্রমণে আক্রান্ত হওয়ার আশঙ্কা কমবে। তাই তো ভারত সরকার আগামী ১৮ মাসের মধ্যে প্রায় ৪১০ মিলিয়ান বাচ্চাকে এই ভ্যাকসিন খাওয়ানোর টার্গেট নিয়েছে। যদি বাস্তবিকই এমনটা করা সম্ভব হয়, তাহলে যে পরিস্থিতি বদলাবে, তা বলাই বাহুল্য! তবে সমস্যা একটা জায়গাতেই, পুনার সেরাম ইনস্টিটিউট অব ইন্ডিয়া এই ভ্যাকসিন তৈরি করছে। এই পরিমাণ ডোজ তৈরি করতে সময় লাগবে। তাই এক সঙ্গে দেশের সর্বত্র এই প্রোগ্রাম শুরু করা সম্ভব হচ্ছে না। প্রথম ধাপে কর্নাটক, তামিলনাড়ু, পন্ডিচেরি, গোয়া এবং লাক্ষাদ্বীপে এই উদ্যোগের সূচনা হবে। তারপর ধাপে ধাপে ৪ টি পর্যায়ে সারা দেশে শুরু হবে এই ভ্যাক্সিনেশন প্রোগ্রাম। প্রসঙ্গত, ন্যাশনাল ইমিউনাইজেশন প্রগ্রামের অন্তর্ভুক্ত এই প্রয়াসে ৯-১২ এবং ১৬-২৪ বছর বয়সিদের বিনামূল্যে হাম এবং রুবেলা ভ্যাকসিন প্রদান করা হবে।
আপনার করণীয়: বাড়ির ছোট সদস্যরা কী পরিস্থিতে দাঁড়িয়ে, তা নিশ্চয় আর বুঝতে বাকি নেই। তাই খবর নেওয়া শুরু করুন কীভাবে আপনার বাড়ির বাচ্চাটিকে এই ভ্যাকসিন দেওয়া যেতে পারে। কবে আপনার আঞ্চলে শুরু হবে এই ভ্যাক্সিনেশন প্রোগ্রাম, এই বিষয়গুলি জেনে রাখাটা জরুরি। কারণ প্রতিটি মুহূর্ত, প্রতিটি সেকেন্ড খুব মূল্যবান। তাই প্রয়োজনীয় পদক্ষেপ না নিলে কিন্তু…