January 31, 2025     Select Language
৭কাহন Editor Choice Bengali KT Popular বিনোদন রোজনামচা শারীরিক

ইরফান খানের হৃদয় বিদারক খোলা চিঠি !

[kodex_post_like_buttons]

ইরফানের খোলা চিঠি 

ইরফান লিখেছেন,

‘ বেশ কিছু সময় কেটেছে আমার নিউরো এন্ড্রোক্রাইন ক্যান্সারের চিকিৎসা চলছে। এই শব্দটা আমার  শব্দভাণ্ডারে নতুন। এই রোগটা ভীষণ একটা বিরল রোগ। এটা নিয়ে গবেষণাও কমই হয়েছে, তাই এবিষয়টি নিয়ে তুলনামূলকভাবে তথ্যও কম রয়েছে। এটার চিকিৎসাও তাই অনুমানের ভিত্তিতে চলছে। আর আমিই এই বিরল রোগের চিকিৎসার জন্য জন্য চিকিৎসকদের নানান পরীক্ষামূলক পদ্ধতির মাধ্যম।’

মনে হচ্ছে আমি একটা অন্য খেলায় ছিলাম, একটা দ্রুত গতির ট্রেনে যাত্রা করছিলাম। যেখানে আমার অনেক স্বপ্ন ছিল, পরিকল্পনা ছিল, অনেক লক্ষ্য ছিল আমি সেগুলোর সঙ্গে ব্যস্ত ছিলাম, হঠাৎ যেন কেউ আমার কাঁধে হাত রাখল আমি তাঁর দিকে তাকালাম, আর সে আমার বলল তোমার গন্তব্য এসে গেছে, এবার নেমে যাও। আমার যেন সবকিছু গুলিয়ে গেল, আমি বললাম, না, না আমি এখনও পৌঁছাইনি। সে যেন পাল্টা বলল, না, না এটাই তোমার গন্তব্য। এই আকষ্মিক ঘটনাই আমায় উপলদ্ধি করালো যে যেন সমুদ্রের মাঝে প্রবল অনিশ্চয়তার মধ্যে তুমি একটা কর্কে ভেসে রয়েছো। অথচ তুমি বেপরোয়াভাবে এটার সঙ্গে লড়াই করার চেষ্টা করছো।

আমার উপর দিয়ে কী গেছে …

যখন আমি হাসপাতালে গিয়েছি তখন যেন আমার চারপাশে অনেক কোলাহল, একটা ভয়, একটা আঘাত, আতঙ্ক ঘোরাফেরা করছে। সেই সময় শুধু একটাই জিনিসই আমি নিজের কাছে চাইছিলাম, আমি এই বর্তমান সঙ্কটের মুখোমুখি হতে চাইছিলাম না। আমি আমার পায়ের উপর ভর করে শক্তভাবে দাঁড়াতে চাইছিলাম। ভয়, আতঙ্ক যেন আমার উপর ভর করতে না পারে, আমাকে যেন দুর্বল না করে তুলতে পারে। এটাই ছিল আমার একমাত্র উদ্দেশ্য। আর এটা ঠিক সেই সময় যখন এই রোগটার ব্যাথা, কষ্টের কথা আমি জানতে পেরেছিলাম। আর তখন কোনও কিছুই কাজ করে না, কোনও সান্তনা, প্রেরণাই কাজ করে না। তখন সমস্ত পৃথিবী এক হয়ে শুধু কষ্টটাই অনুভব করার থাকে। ঈশ্বরের থেকেও তখন তুমি কষ্টটাই বেশি উপলব্ধি করবে।

চিকিৎসার জন্য লন্ডন যাত্রা …

আমি যখন হাসপাতালে পৌঁছলাম, এরকম নিখুঁত, থমথমে হাসপাতাল খুব কমই দেখেছি যেটা আমার লর্ডস স্টেডিয়ামের একেবারে বিপরীতে। এটা যেন ‘মক্কা’, আমার ছোটবেলার স্বপ্ন। সমস্ত কষ্ট আমার হৃদয়ের মধ্যে রেখে আমি হাস্যরত ভিভিয়ান রিচার্ডসের পোস্টারের দিকে তাকালাম। কিছুই হলো না। যেন মনে হলো আমি কোনও পৃথিবীর মধ্যেই নেই। হাসপাতালের কোমা ওয়ার্ড টাও আমার ঘরের ঠিক সামনেই ছিল। যখন হাসপাতালে ঘরের ব্যলকনিতে দাঁড়িয়ে থাকতাম তখন এক অদ্ভুত উত্তেজনা আমার মধ্যে ছড়িয়ে পড়ল। যেন জীবনের খেলা, জীবন মৃত্যুর খেলার মাঝে আমি রাস্তায় দাঁড়িয়ে আছি। আর আমার একদিকে হাসপাতাল, অন্যদিকে খেলার স্টেডিয়াম। আর যখন কেউ এসবের কোনও কিছুরই আর অংশ থাকে না, তখনই সবকিছ শান্ত হয়ে যায়। না হাসপাতাল, না খেলার মাঠ, আর এটাই আমায় আঘাত করল।

জীবনের সঙ্গে লড়াই …

এই অনুভূতিগুলোই আত্মসমপর্ণ করতে শেখালো, বিশ্বাস করতে শেখালো। আজ থেকে ৮ মাস, কিংবা ৪ মাস, কিংবা ২ বছর। যেন মনে হলো পিছনের আসনে বসে আমি আমার ভাগ্য দেখতে পাচ্ছি।  এই প্রথমবার আমি অনুভব করলাম স্বাধীনতা আসলে কী?  এটা যেন একটা সিঁড়ির মতো। যেন তুমি তোমার জীবনকে প্রথমবার চেখে দেখার চেষ্টা করছো। এটার একটা জাদুও আছে। এই সময় আমার আত্মবিশ্বাস, বুদ্ধিমত্তা দিয়ে যেন নিসর্গের উপর পরম আস্থা তৈরি হয়। আর এটাই যেন আমার শরীরের প্রতিটা সেলের মধ্যে বিঁধে যায়। সময়ই বলবে এটা থাকবে কি থাকবে না। এটাই সেই অনুভূতি যেটা আমি অনুভূব করেছিলাম।

আমার এই গোটা যাত্রা পথে মানুষ আমার আরোগ্য কামনা করেছে। এরাঁ সেই সমস্ত মানুষ যাঁদের আমি চিনি আবার অনেককেই আবার চিনি না। আমার বিভিন্ন জায়গায়, বিভিন্ন ক্ষেত্র থেকে প্রার্থনা করেছেন অথচ প্রার্থনা কিন্তু একটাই। এটা বড় শক্তি যেটা আমার শরীরের মধ্যে প্রবেশ করে শিরার মাধ্যমে আমার মাথার মুকুট হয়ে দাঁড়িয়েছে।…..

এসব থেকেই আমার অনুভূতি হয়েছে যে সমুদ্রের মধ্যে ভেসে থাকা কর্কটি আর আয়ত্তের মধ্য রাখার দরকার নেই। তুমি প্রকৃতির নিয়মের মধ্যে জীবনকে উপভোগ করতে পারো।

 

ইরফান

……………………

 

Related Posts

Leave a Reply