অমর কন্টক স্মৃতি ৪
বিপ্লব মজুমদার
ভৃগু কমণ্ডলু থেকে ফিরে নর্মদা র ঘাটে গিয়ে বসলাম l সূর্য পাটে l উত্তরদিকে ঘন কালো মেঘের জমাট l পড়ন্ত বিকেলের আলোয় সমস্ত মেকাল মোহময়ী হয়ে উঠেছে l যেখানে বসি সেখানেই চুপ করে বসে থাকতে ইচ্ছা করে l কারোর সাথে কথা বলা তো দূর নিজের সাথেও কথা বলতে মন চায় না l এক শূন্যতাাবোধ মনোময় জগৎ কে আচ্ছন্ন করে ফেলে l নিঃসঙ্গতাই এখানে একমাত্র সঙ্গী l
জলে নেমে পড়লাম l এক ডুব দিতেই সমস্ত দেহ মন জুড়িয়ে গেলো l স্নান করে আর আঁশ মেটে না l কি পবিত্র এই জল!!
সন্ধ্যে 7 টার সময় মন্দিরে প্রণাম করে পূর্বদিকে মাই -কি- বাগিয়ার দিকে হাঁটতে শুরু করলাম l যাবার পথে ভৃগু কমণ্ডলুর নাগাসাধুর সাথে দেখা l বললো চলো আমার আস্তানায় l এক কথায় রাজী l এক কাপ করে চা খেয়ে একটা করে বিড়ি ধরিয়ে দুজনে হাটতে শুরু করলাম l খানিকটা যাবার পরই ঝম ঝম করে বৃষ্টি শুরু হয়ে গেলো l ছাতা খুলতেই উনি বললেন তুমি নিজেকে সামলাও l আমার দরকার নেই l সত্যি তো! যে সত্যের জন্য ন্যাঙট ত্যাগ করছে তাঁর কাছে রোদ-বৃষ্টি-ঝড় -জল এর কি মূল্য ? মনে হলো সব কিছু ছুঁড়ে ফেলে দিই l জীবনটাই ফালতু নোংড়া ঘেঁটে কাটিয়ে দিলাম l
উনার আশ্রমে ঘন্টা খানেক ছিলাম l জঙ্গলে বৃষ্টির মধ্যে নির্জন আশ্রমে সাধুসঙ্গের অনুভূতি বলার মতো বা লেখার মতো লেখনী আমার নেই l
রাত ন টা নাগাদ বেরিয়ে ধর্মশালার পথ ধরলাম l এরকম নির্জনতায় আমি কখনও হাটি নি l দুপাশে গভীর জঙ্গল l নিকষ কালো অন্ধকার l রাতচরা পাখীর ডাক l হঠাৎই চার পাঁচটা কুকুর ছেঁকে ধরলো l মা নর্মদার নাম করতেই তারা চলে গেলো l কি আশ্চর্য!!!
যাই হোক একটা ঘোরের মধ্যে ধর্মশালায় ফিরে এলাম l এখন আকাশ পরিষ্কার l ধর্মশালার উঠোনে বসে ভাবছি আজ বাদে কাল ফিরবো l কিন্তু কোথায়?
হর নর্মদে!!!